জয়পুরহাটের কালাই উপজেলাতে মুরগী পালনের মাধ্যমে মুরগীর উৎপাদনের শীর্ষে থাকলেও গত দুই-সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারী ও খুচরা বাজারে সব ধরণের মুরগীর দাম অস্বাভাবিক হারে কমেছে। আর বৃদ্ধি পেয়েছে সব ধরণের কোম্পানীর পোল্ট্রি খাদ্যসহ মুরগী পালনে বিভিন্ন উপকরণের দাম। বর্তমান মুরগীর দাম কম হওয়ায় শত শত পোল্ট্রি খামারিরা দিশেহারা হয়ে পরেছে। চাকরি না পেয়ে অনেক শিক্ষিত যুবক ও যুবতিরা মনে শত স্বপ্ন নিয়ে একটু লাভের আশায় বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে বা বিভিন্ন লোকজনের কাজ থেকে ধার দেনা করে খামার দিয়েছেন। লাভ তো দূরের কথা, বর্তমান মুরগির বাজারে মুরগীর বিক্রি করে আসল পুঁজি ঘরে তুলতে পারবে কিনা তা নিয়ে তারা হতাশ হয়ে পরেছেন উপজেলার শত শত মুরগী খামারিরা।
উপজেলার প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে ও সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কালাই পৌরসভাসহ উপজেলার মাত্রাই, উদয়পুর, পুনট, জিন্দারপুর ও আহম্মেদাবাদ ঐই ৫টি ইউনিয়নে মোট ৬৯৪টি পোল্ট্রি খামার রয়েছে। এর মধ্যে সোনালী (পাকিস্থানি) খামার আছে ৬৬০টি এবং ব্রয়লার খামার আছে ৩৪টি। ঐসব এলাকাতে মুরগী পালন করে মুরগির উৎপাদনের শীর্ষে থাকলেও গত দুই-সপ্তাহে ব্যবধানে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাইকারী ও খুচরা বাজারে সব ধরণে মুরগীর বাজারে ধস নেমেছে। বর্তমান মুরগীর পাইকারী বাজারে প্রতি কেজি সোনালী মুরগীর বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা দরে, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগীর বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে। এর ফলে মুরগি পালনের মাধ্যমে মুরগীর উৎপাদন করে বাজারে মুরগী বিক্রি করতে গিয়ে অনেক পোল্ট্রি খামারি এখন দিশেহারা হয়ে পরেছে। ইতোমধ্যে অনেক পোল্ট্রি খামারিরা তাদের মুরগী বিক্রি করে অনেক লোকসান খেয়ে বসে আছে। আবার অনেকে এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশা ধরেছেন। মুরগীর দাম কম থাকায় পোল্ট্রি খামারিরা চরম বিপদে পরেছেন তারা।
উপজেলার পুনট পাঁচপাইকা গ্রামের সোনালী মুরগীর খামারি ইমরান বলেন, ধার দেনা করে ২ হাজার সোনালী মুরগী পলন করেছিলাম। মুরগীগুলো বড় ও অনেক ভালো হয়েছিলো। গত সপ্তাহের ঐসব মুরগীগুলো বিক্রি করে আমার প্রায় ৪০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। আর এভাবে লোকসান হলে ভবিষ্যতে আমি মুরগি পালন করব কিনা তা ভাবছি।
কালাই পৌরসভার কালিমহর মহল্লার ব্রয়লার মুরগীর খামালি আলী আকবর বলেন, আমার খামারে প্রায় ১ হাজার ব্রয়লার মুরগী আছে। বর্তমান বাজারে মুরগীর যে দাম, এই মুহুত্তে মুরগীগুলোর বিক্রি করলে অনেক টাকা লোকসান হবে। তাই এখন ভেবে পাচ্ছিনা এইসব মুরগীগুলো আমি কি করবো।
কালাই পৌরসভার পূর্বপাড়ার মহল্লা মুরগি পাইকারী বিক্রেতা-তানভীর আহম্মেদ বলেন, এলাকা থেকে মুরগি কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আড়ৎতে মুরগি পাঠাই। বর্তমান ঐসব পাইকারী আড়ৎগুলোতে মুরগির চাহিদা তেমন নেই। আর মুরগির চাহিদা চেয়ে, মুরগির সরবরাহ অনেক বেড়ে যাওয়ায় দামের ধস নেমেছে।
কালাই পৌরবাজার মুরগী খুচরা বিক্রেতা সফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলার বিভিন্ন মুরগী খামারী থেকে যে দামেই কিনে আনা হয় তার থেকে দুই-এক টাকা লাভ করে আমরা বিক্রি করি। বর্তমান মুরগীর বাজারে প্রতি কেজি সোনালী মুরগীর বিক্রি করছি ১৭৫ টাকা এবং প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগীর বিক্রি করছি ৯০ টাকায়।
কালাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবদুর মালেক বলেন, আমরা খামারিদের সঙ্গে প্রায় সব সময় যোগাযোগসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি। তাদেরকে বেশী বেশী করে মুরগী পালন করতে উৎসাহ দিচ্ছি। এই উপজেলার রোগ বালায় না থাকাই মুরগী অনেক পালর করে থাকেন অনেকেই। কিন্তু বর্তমান বাজারে মুরগির দাম একটু কম। আশা করি আগামী দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে মুরগীর দাম বিদ্ধি হবে। তবে এই বৃহৎ পোল্ট্রি শিল্পকে সরকারের সু-নজর দেওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।