প্রতি বছরের ন্যায় এবারও জয়পুরহাটের কালাইয়ে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে মাছের মেলা হয়েছে। উপজেলার পাঁচশিরা বাজারে ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন জাতের মাছের মেলা বসে। এই অগ্রহায়ণ মাসে মাঠ থেকে নতুন ফসল কৃষকদের ঘরে উঠলেই নবান্ন উৎসবের আয়োজন করেন উপজেলার সকল কৃষকেরা। এই অনুষ্ঠান পালন করতে আসেন আগে ভাগে থেকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাতে অবস্থিত তাদের ছেলে-মেয়ে, বুন্ধু-বান্ধব, মেয়ে-জামায়, বিয়াই-বিয়ান ও আত্মীয়-স্বজনরা। এরজন্য সোমবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলার সবচেয়ে বড় মাছের মেলা বসে উপজেলার পাঁচশিরা বাজারে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা।
জানা গেছে, নবান্ন উৎসব পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব। বাংলার কৃষিজীবি সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যয়ের যে সকর আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালন হয়, তার মধ্যে “নবান্ন” অন্যতম। “নবান্ন্” শব্দের অর্থ-নতুন “অন্ন”। নবান্ন উৎসব হল নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষ্যে আয়োজিত উৎসব। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। আর প্রতি বছরের অগ্রহায়ণ মাসের আমন ধান কাটার পর নবান্ন উৎসব আয়োজন করেন উপজেলার সকল কৃষকেরা। আর জেলা ও উপজেলাতে অবস্থিত তাদের আপনজন ও আত্মীয়-স্বজনকে আমন্ত্রণ করেন এই নবান্ন উৎসবে। তাদের আমন্ত্রনে ওই অনুষ্ঠান পালন করতে যোগ দিতে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার থেকে ছেলে-মেয়ে, বুন্ধু-বান্ধব, মেয়ে-জামায়, বিয়াই-বিয়ান ও আত্মীয়-স্বজনরা আসেন। সেই দিন যেন হয় গ্রামীন জনপদে উৎসবের আমেজ। কৃষকদের ঘরে ঘরে শুরু হয় নতুন চালের নবান্ন এবং চলে পিঠা-পুলি,পায়েস, ক্ষীর, খই ও মুড়ি। সেই দিন কৃষকদের ঘরে হয় যেন এক মিলন মেলা। এই উপলক্ষ্যে সোমবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলার সর্ব বৃহৎ মাছের মেলা বসে উপজেলার পাঁচশিরা বাজারে। এই এলাকার মাছ ব্যবসায়ীরা আগের দিন থেকেই তাদের আড়ত ঘরে স্থানীয় ও জেলা-উপজেলার বিভিন্ন পুকুর, নদী ও হাওর থেকে নানান জাতের বড় বড় মাছ সংগ্রহ করেন বিক্রয় করছেন। নবান্ন উৎসব উপলক্ষ্যে এলাকার বিভিন্ন শ্রেনীর পেশাজীবি মানুষেরা উচ্চ মুল্যে ঐসব মাছগুলো ক্রয় করেন। এই বছরে ঐ মাছের মেলাতে রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, মৃগেল, সিলভারকাপ, পাঙ্গাস, ব্রিগেটসহ বিভিন্ন জাতের ৩ কেজি থেকে ১৬ কেজি ওজনের মাছের সমাগম হয়েছে। আর মাছের মান ভেদে এক একটি মাছের মূল্য প্রায় ২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
মেলায় মাছ বিক্রি করতে আসা হাসান ও জাহিদুল বলেন, এক দিনের এই মাছের মেলাতে বিভিন্ন পুকুর ও নদী থেকে নানান জাতের বড় বড় মাছ সংগ্রহ করেন বিক্রি করি। এই মেলাতে মাছ কিনতে আসেন বিভিন্ন এলাকা থেকে জামায় ও বিয়াইসহ এই এলাকার বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষেরা। গত বছরের চেয়ে এবার অনেক ভাল মাছ বিক্রি হয়েছে।
মেলায় মাছ কিনতে আসা মুনীশ ও মহশিন বলেন, অন্য বছরের চাইতে এবার মাছের দাম একটু বেশী। তবে যাই হউক না কেন এই মেলায় বড় বড় মাছ দেখে মনটা বেশ খুশি। তবে দেখে শুনে কয়েকটা মাছ কিনব।
কালাই উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো.হাকিবুর রহমান বলেন, এই মেলাকে লক্ষ্যে করে মাছ ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে নানান জাতের মাছ নবান্ন উৎসব উপলক্ষে তারা মেলায় নিয়ে আসেন। কেউ যেনো বিষাক্ত জাতের মাছ বিক্রি করতে না পারে সেদিকে আমাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে।