কুড়িগ্রামের রাজাহাটে ৩০ টাকা কেজি দরের লবন এখন ১০০টাকা বিক্রি করছে বিক্রেতারা। আকস্মিকভাবে লবনের দাম বেড়ে যাওয়ায় দোকানের সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ক্রেতারা। পেঁয়াজ সংকটের মতো সারা দেশে লবন সংকট এই গুজব ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সকল শ্রেণির মানুষ আগাম লবন কিনে রাখতে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার প্রতিটি হাটবাজারের মুদি দোকানগুলোতে ভিড় করতে থাকে। ১৯ নভেম্বর মঙ্গলবার বিকালে লবন সংকট সৃষ্টি করতে রাজারহাট বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী লবন পাচার করার সময় সাধারণ জনগণ লবনসহ ভ্যান গাড়ী আটক করে থানায় সোর্পদ করে। লবন কিনতে আসা আমেনা বেগম(৪৫) নামের এক গৃহিনী, মাসুদ(৩৩) নামের এক কৃষক, মকবুল হোসেন(৪০) নামের মজুর, সাইজুদ্দি(৩৫) নামের এক শাক বিক্রেতা, চাকুরী জীবি হাফিজুর রহমান(৪৫) ও গ্রামাঞ্চলের মুদি দোকানী শরিফুল ইসলাম( ৩৬) বলেন- বাজারে নাকি লবন সংকট। পেঁয়াজের দামের মতো লবনের দামও নাকি বাড়বে। গ্রামের দোকান গুলোতে বেশী দামেও লবন পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য গ্রাম থেকে এসেছি একটু বেশী করি লবন কেনার জন্য। বাজারের এ অবস্থা দেখে সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী প্রতি কেজি লবন ৮০টাকা থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। কি কারণে লবন সংকট দেখা দিয়েছে তার কোন সঠিক উত্তর মেলেনি। মুদি দোকানী ওয়াহেদ আলী, গিয়াস উদ্দিন সহ অনেকে জানান, ঢাকাসহ সারা দেশে লবনের দাম বেড়েছে তাই এখানেও দাম চড়া। লবন কিনতে আসা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মনভোলা (৫৬) নামের এক কৃষক বলেন, দেশটায় কি শুরু হইলো। পেঁয়াজের দাম কমতে না কমতে হঠাৎ লবনের দাম বেড়ে গেল। যেখানে ১ কেজি লবন ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় কিনতাম। সেখানে আজ(১৯নভেম্বর) মঙ্গলবার এক কেজি লবন কিনতে ১০০টাকা লাগছে। আবার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অনেকে জানান, সরকারকে বিপাকে ফেলতে এক শ্রেণির লোক উঠে পড়ে লেগেছে। তারা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস মজুদ করে সরকারসহ জনসাধারণকে বেকায়দায় ফেলে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন। রাজারহাট বাজারের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মুদি দোকানী বলেন, লবন কোন সংকট নেই। ক্রেতা বেশী দেখে ব্যবসায়ীরা সুযোগ কাজে লাগিয়ে চড়া দামে লবন বিক্রি করছেন। একাধিক ব্যবসায়ী বলেছেন- নতুন সড়ক পরিবহন আইন চালু হওয়ায় ট্রাকে অভার লোডিং মাল নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না। যেমন এক ট্রাক ২৫০বস্তা লবন চট্টগ্রাম থেকে নিয়ে আসতে খরচ হয় ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু বর্তমানে নতুন আইন চালু হওয়ায় ২৫০ বস্তার পরিবর্তে ১৭০ বস্তা লবন একই খরচে নিয়ে আসা হচ্ছে। তাই ক্রেড়িং খরচ বেড়েছে। এজন্য প্রতিটি মালে দামের একটু প্রভাব পড়েছে। ষ্টোক ব্যবসায়ী তোতা মিয়া ও কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আলী বলেন, মোকামে ফোন করেছিলাম। চট্টগ্রামে পরিবহন ধর্মঘট থাকার কারণে লবন আনা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য বাজারে বস্তা প্রতি ২০/৩০ টাকা বেড়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ যোবায়ের হোসেন বলেন- বাজারে লবনের কোন সংকট নেই। এক ধরনের অসাধু ব্যবসায়ী এটাকে পুঁজি করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। এটা নেহাতই একটি গুজব। বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। মাইকিং করে জনসাধারণকে গুজবে কান না দিতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।