বগুড়ার শেরপুরে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে তথ্যের সম্ভার নিয়ে আসা তথ্য আপার উঠান বৈঠক। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং জাতীয় মহিলা সংস্থার অধীনে বাস্তবায়নাধীন তথ্য আপা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্পের (২য় পর্যায়) আওতায় এবং উপজেলা তথ্যকেন্দ্রের আয়োজনে শেরপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মহিলাদের বাল্যবিবাহ, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতামূলক এ উঠান বৈঠক অনুষ্ঠান হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর বিকাল ৩টায় উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের সাতারা গ্রামে তথ্যসেবা কর্মকর্তা মোছা: হাবিবা খানম এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত আলী সেখ। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন শেরপুর উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন পিএএ ডা. মো: রায়হান, তথ্যসেবা সহকারী সোনিয়া সামাদ, শুক্লা রানী, সমাজসেবক এরশাদ হোসেন প্রমুখ।
উঠান বৈঠকে আসা সাতারা গ্রামের গৃহণী আছিয়া, চম্পা বলেন, আমরা সবসময় সংসারের কাজে ব্যস্ত সময় পার করি। আমি আগে বাল্যবিবাহ, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকসহ বিভিন্ন বিষয়ের খারাপ দিক সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতাম না। কিন্তু তথ্য আপার উঠান বৈঠকে এসে এসব খারাপ বিষয়ের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে পেরেছি। আমি সচেতন হয়েছি এবং যারা উঠান বৈঠকে আসতে পারেনি আমি তাদেরও এ বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করছি। আমিসহ গ্রামের গৃহিণীরা তথ্য আপার উঠান বৈঠক দ্বারা অনেক উপকৃত হচ্ছি। বেশি বেশি করে এ ধরনের উঠান বৈঠকের আয়োজন করা উচিত। গ্রামের মহিলারা সচেতন হলেই সমাজ থেকে এ ধরনের ক্ষতিকর ভাইরাস নামক সমস্যাগুলো আস্তে আস্তে দূর করা সম্ভব।
তথ্যসেবা কর্মকর্তা মোছা: হাবিবা খানম বলেন, আমরা প্রতিদিনই উপজেলার কোনো না কোনো গ্রামে গিয়ে ঐ এলাকার মহিলাদের মাঝে ভিডিও প্রদর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এবং উপজেলা ১০টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভায় পর্যায়ক্রমে গিয়ে সর্বশেষ ইউনিয়ন এই সুঘাট ইউনিয়ন। অনেক এলাকার মহিলারা বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মহিলাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে, আপনারও আমারদে সহযোগিতা করবেন।
ভেটেরিনারি সার্জন পিএএ ডা. মো: রায়হান বলেন, গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকার মহিলাদের মাঝে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে তথ্যকেন্দ্রে এসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ, বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের মতামত গ্রহণ, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, উপজেলার সরকারি সেবাসমূহের সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণ, ভিডিও কনফারেন্স, ই-লার্নিং, ই-কমার্স, বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন, ব্যবসা, জেন্ডার ও কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছে উপজেলা তথ্যসেবা কেন্দ্র। এছাড়াও অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ প্রদানের জন্য সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতিমূলক কাজে, প্রশাসনকে সহযোগিতা করাসহ বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত আলী সেখ বলেন, নারীদের ক্ষমতায়ন ছাড়া দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই বর্তমান সরকার বিশেষ করে নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। তথ্য আপা প্রকল্প নারীদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সেবা প্রদানের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়নকে আরো ত্বরান্বিত করবে। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলারা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ডিজিটাল সেবা, সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতিমূলক কর্মকাণ্ডসহ অনেক বিষয়ে তারা সচেতন নয়। তাই ডিজিটাল সেবা নিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সাধিত হবে। আর এ সেবাগুলো মহিলাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি উপজেলায় সরকার এ তথ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করেছে।