ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পদ্মা নদীতে পৃথক তিনটি জলমহলে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে নীধন করা হচ্ছে মৎস্য সম্পদ। গত ক’য়েক দিন ধরে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় পদ্মা নদীর বিভিন্ন জলমহলে বাঁশ ও জাল পুতে বাঁধ তৈরী করে ফাঁদ জালের মাধ্যমে নীধন করা হচ্ছে সমস্ত প্রকার মৎস্য প্রজাতি। পদ্মা নদীতে স্থাপিত বাঁধ এলাকায় নির্দিষ্ট জেলে ছাড়া অন্য কোনো জেলেকে মাছ শিকার করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এতে উপজেলার প্রায় ৭২০ জেলে পরিবার কর্মহীন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে।
উপজেলা পদ্মা নদীর বাঁধগুলো হলো-চরহরিরামপুর ইউনিয়নের ‘নমুর ছ্যাম’ নামক জলমহলের প্রায় আড়াই কি.মি. এলাকার জলশয় জুড়ে মোমিন আলী খান ওরফে মেলা খান ও সোহরাব খান এদের ছত্রছায়ায় স্থাপন করা হয়েছে বিধাল বাঁধ। এ ছাড়া পার্শ্ববতী গাজীরটেক ইউনিয়নের ‘কদম তলা’ জলমহলে শেখ সেকেন্দার ও সেকেন্দার মন্ডল মিলে প্রায় এক কি.মি. জলমহল জুড়ে আড়াআড়ি বাঁধ দেওয়া হয়েছে। একই ইউনিয়নের আঃ কুদ্দুস মন্ডলের নেতৃত্বে পদ্মা নদীর বদ্ধি ডাঙ্গী ও কদমতলা জলমহলের সিমান্ত জুড়ে তৈরী করা হয়েছে আরেকটি আড়াআড়ি বাঁধ। পদ্মা নদীর মাঝ পয়েন্টের বিশাল বিশাল দুই চরের মাঝের জল সীমানায় বাঁশ জাল দিয়ে আটকিয়ে মাঝে মধ্যে ফাঁদন জাল পুতে স্থাপন করা হয়েছে আড়াআড়ি বাঁধ। এসব বাঁধের ফাঁদ জালে পদ্মা নদীতে চলাচলকারী সমস্ত প্রকার মৎস্য প্রজাতি আটক হচ্ছে।
শনিবার উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়নের বিন্দু ডাঙ্গী গ্রামের জেলে রবি বিন্দু চিত্ত বিন্দু পরিমল বিন্দু স্বপন বিন্দু বিমল বিন্দু বিষ্ণু বিন্দু প্রেম খুশি বিন্দু কৃষ্ণ বিন্দু ও জল বিন্দু সহ অনেকে জানায়, “ গত পনের দিন ধরে উপজেলা পদ্মা নদীতে মাছ শিকার করতে পারছি না। ওইসব বাঁধের আশপাশের জলমহলে মাছ শিকারের জন্য বরশি বা জাল ফেললে প্রভাবশালী বাঁধ মালিকরা আমাদের মারধর করে নদী থেকে তাড়িয়ে দেয়। ফলে জেলেরা কর্মহীন অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচে¦ছ বলেও জানান”।
পদ্মা নদীর ওইসব বাঁধ এলাকায় সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, স্থানীয় প্রবাবশালীদের ছত্রছায়ায় প্রত্যেকটি বাঁধে আটক মাছ সংরক্ষন ও বাজারে বিক্রির জন্য ২/৩ জন করে জেলে কর্মরত রয়েছে। পদ্মা নদীর নমুর ছ্যাম জলমহলের বাঁধে জেলে বিকাশ হলদার, কদমতলা বাঁধে মো. নুরুল ইসলাম, সেকেন মন্ডল ও বদ্ধি ডাঙ্গী বাঁধে সচিন হলদার ও আজাহার মোল্যা মাছ শিকার ও বাজারে বিক্রির কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এসব জেলেদের মধ্যে নুরুল ইসলাম জানায়, এক লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয় করে পদ্মা নদীতে বাঁধ নির্মান করা হয়েছে। মালিকদের হুকুমে বাঁধ এলাকায় অন্য কোনো জেলেদের মাছ শিকার করতে দেওয়া হয় না”। প্রভাবশালী প্রায় সব বাঁধ মালিককে ফোন করলে অনেকের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে এক বাঁধ মালিক আঃ কুদ্দুস মন্ডল বলেন,“ পদ্মা নদীর কদমতলা ও বদ্ধি ডাঙ্গী সীমান্তের জলমহলের আশপাশের জমি আমি লীজ নিয়েছি বলে জলমহলে বাঁধ দিয়েছি”। এসব বাঁধের ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন সুলতানা জানান, আমি ট্র্রেনিংয়ে ছুটিতে আছি, তবে বাঁধ অপসারনের ব্যবস্থা নেবো”। উপজেলা সহকারী কমিশনার ফারজানা নাসরীন বলেন, “ পদ্মায় বাঁধের ব্যাপারে আমাকে আগে কেউ জানায় নাই, আমি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্তা নেবো”। আর উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, “ মৎস্য কর্মকর্তা বদলি হয়ে গেছে, দু’এক দিনের মধ্যে নতুন কর্মকর্তা কাজে যোগ দিলে বাঁধগুলো অপসারন করা যাবে”।