ইসলাম ধর্ম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইহুদী, নাসারা ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জঘন্য ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, বিষোদাগার ও বিরুধীতা নতুন কিছু নহে। ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব থেকেই বিধর্মীদের অসহনীয় ও অমার্জনীয় লীলা খেলা চলে আসছে। যে যাতনার সীমা পরিসীমার অন্ত নেই। ফিলিস্তিনি মুসলীমদের ন্যায্য দাবীর ওপর ইসরাইলের অমানুষিক ও কাপুরুষিত নিগ্রহ, কাশ্মীরি মুসলমানদের ওপর ভারতের নৃশংসতা ও অত্যাচার, রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমারের বর্বরোচিত হামলা, নৃশংসতা ও তাদের দেশ ছাড়া মর্মান্তিকতারই নামান্তর। যে কারণে বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। জানা যায়, রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা, বর্বরতা, নির্যাতন, নারী ধর্ষণ ও গণহত্যা চালানোর অভিযোগে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) সম্প্রতি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে গাম্বিয়া। এছাড়া ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া ও ইয়েমেনসহ আরও অনেক মুসলীম দেশে জাতিগত দ্বন্দ্বে পরাশক্তি আমেরিকা ও রাশিয়ার বৈরীতা, হস্তক্ষেপ ও আগুনে পেট্রোল ঢালার মতো ঘটনা চোখে পড়ার মতো। যা কোনো মতেই সহ্য করার মতো নয়।
তারপরও মুসলীমরা সত্যের বাণী লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আল্লাহর বাণী নিয়ে টিকে আছে। এত কিছুর পরও সারা দুনিয়ায় ইসলামের প্রচার ও প্রসার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুনিয়ার অগনিত দেশের ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা প্রতিনিয়ত সত্য ধর্ম ইসলামের পতাকাতলে সামিল হয়ে মুসলমান হচ্ছে। এক সময় যারা ষোড়শ শতাব্দীর ভারতের অযোধ্যায় বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে রাম মন্দির বানাতে চেয়েছিল তাদের মধ্যে অনেকেই আজ তা ভুল বুঝে শান্তির ধর্ম ইসলামের পতাকা তলে এসে মুসলমান হয়ে যায়। তারা এখন সারা দুনিয়ায় ইসলামের দাওয়াত নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ক্লান্তিহীন সময় অতিবাহিত করছে। সত্য ও ন্যায়ের সাধক, শান্তির ধর্ম ইসলামের সিপাহসালার রাসুল (সাঃ) এর জীবদ্দশাতে যেমন বদর, ওহুদ, তায়েফসহ অনেকগুলো যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে তেমনি রাসূল (সাঃ) এর ওফাতের পরও অনেক ভন্ড নবীর আবির্ভাব হয়েছে। পরবর্তী সময় ওরা নিজেরা নিজেরা ক্ষমতার দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে ফেরাউন, নমরূদ, কারূন, নরাধম আবু জাহেলসহ আরও অনেকের মতো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কোরআন, হাদীস ও ইতিহাসে রয়েছে যার অকাট্য প্রমাণ, উদাহরণ ও নিদর্শন। এমনকি কারবালার প্রান্তরের হৃদয় বিদারক, মর্মান্তিক, নৃশংসতার মাধ্যমে নবী (সাঃ) দৌহিদ্র হযরত ইমাম হাসান, হোসাইন (রাঃ) ও তাদের কুলের শিশুকে হত্যা করে ইসলামকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করা হলেও সেই কারবালা প্রান্তর থেকেই ইসলামের পূর্ণ জন্ম হয়েছে। অর্থাৎ ইসলাম জিন্দা হুতাহে কারবালাছে বাদ। ইয়াজিদ সহ ইসলামের ষড়যন্ত্রকারীরা বিলীন হয়ে গেছে। এমনকি বেঈমান ইয়াজিদ, আবু সাফিয়ানের স্ত্রী ও মাবিয়ার মাতা নৃশংসতাকারিণী হিন্দার কবরের অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ এ পর্যন্ত ইসলাম ধর্ম ও মুসলীমদের বিরুদ্ধে যত ষড়যন্ত্র চক্রান্ত হয়েছে কেহই সফল হতে না পারলেও এহেন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র আজও শেষ হয়নি।
জানা যায়, ১৫২৮ সালে মোঘল স¤্রাট জহিরুদ্দিন মোঃ বাবরের নির্দেশে ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। যাকে ঘিরে রয়েছে অকাট্য প্রমান ও নিদর্শন। যারপরও ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের বেরসিক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত আজও শেষ হয়নি। হিন্দুত্ববাদীদের এ ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও বেরসকিতা কোনো মতেই মেনে নেয়ার নয়। ১৮৫৩ সালে এ ব্যাপারে হিন্দু মুসলীমের মধ্যে বিরোধ বাধে। ১৮৫৯ সালে ব্রিটিশ সরকার গোটা এলাকা হিন্দু ও মুসলীমদের উপাসনার জন্য আলাদাভাবে বেড়া দিয়ে ঘিরে দেয়। ১৮৮৫ সালে বিতর্কিত স্থানে মন্দির নির্মাণের দাবী জানিয়ে ফৈজিয়াবাদ জেলা আদালতে মামলা করে মোহান্ত বঘুবর দাস। ১৯৪৯ সালে স্থাপত্যের ভেতরে রামের মূর্তি উদ্ধার হয়। মুসলিমদের অভিযোগ ছিল, হিন্দুরাই সেখানে রামের মূর্তি রেখে এসেছে। ১৯৮৪ সালে রাম মন্দির নির্মাণের জন্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠন কমিটি গঠন করে। এর তিন বছর পর জেলা আদালত মসজিদের দরজা খুলে দেয়ার রায় দেয়। আর বিতর্কিত কাঠামোর ভেতরে হিন্দুদের পূজার অনুমতি দেয়। ১৯৮৯ এ গঠিত হয় বাবরি মসজিদ এ্যাকশন কমিটি। ১৯৯০ সালে তৎকালীন বিজেপি সভাপতি লালকৃষ্ণ আদভানি রাম মন্দির নির্মাণের সমর্থন পাওয়ার জন্য গোটা দেশে রথ যাত্রা বের করে থাকে। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে দেয় হিন্দুত্ববাদীরা। গোটা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ। নিহত হয় ২ হাজারেরও বেশী মানুষ। সেই সময় বাংলাদেশে মুসলীম ও হিন্দুদের মধ্যে যাতে শান্তি শৃংখলা বজায় থাকে সে জন্য এদেশের জনগণ ও তদানীন্তন সরকারের ভূমিকাকেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে কার অধিকার, সেই শুনানী হয় ২০০২ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টে। ২০১০ এ হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, ওই জমি ৩ ভাগে ভাগ করে নির্মোহী আখড়া, রামলাল্লা ও সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াক্ফ বোর্ডকে দিতে হবে। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রীম কোর্টে যায় হিন্দু ও মুসলীম দুপক্ষই। এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ চলতি বছর ৬ আগস্ট থেকে ৪০ দিন শুনানী চালায়। ২০০৩ সালে আদালতের নির্দেশে নৃতত্ত্ববিদরা জরিপ শুরু করে। আগস্টে প্রকাশিত জরিপে জানা যায়, মসজিদের নীচে বিশাল কাঠামো খুঁজে পাওয়া গেলেও তা মন্দির ছিল এমন প্রমাণ মেলেনি।
ভারতীয় সুপ্রমি কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ ০৯/১১/১৯ ইং শনিবার অযোধ্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। যা বাবরি মসজিদের মামলা হিসেবে পরিচিত। যদিও প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গাগৈয়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ তুলে ছিল আদালতের এক নারী কর্মী। জানা যায়, প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ১৭ নভেম্বর অবসরে যাবেন। কয়েক দশকের প্রতীক্ষায় অবসান ঘটিয়ে বাবরি মসজিদ রাম জন্মভূমি নিয়ে করা ঐতিহাসিক ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীম কোর্টের রায়ে বিতর্কিত জমির ওপর নির্মোহী আখড়ার দাবী ও সুন্নি ওয়াক্ফ বোর্ডের আর্জি দুটিই খারিজ করে দেন। আদালত এই জটিলতার সমাধান করেছে এভাবে পৌনে ৩ একরের ওই স্থানে মন্দির হবে। আর মসজিদের জন্য কাছাকাছি অন্য স্থানে ৫ একর জমি দিতে হবে সরকারকে। রায়ে আরও বলা হয়, আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী বাবরি মসজিদের যে নির্মাণ রয়েছে তার নীচে একটি কাঠামোর উপস্থিতি মিলেছে। যেটির নির্মাণে মুসলীম রীতির সঙ্গে মিল নেই। যে কাঠামো বা স্থাপত্য বারোশ ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি সময়ের। ফাঁকা জায়গায় বাবরি মসজিদ নির্মাণ হয়নি। আবার মন্দির বা কোনো স্থাপত্য ভেঙ্গে বাবরি মসজিদ নির্মাণ হয়েছিল তার কোনো প্রমাণ নেই। তবে ওই বিতর্কিত স্থলই রামলীলার জন্মস্থান তা নিয়ে সন্দেহের কোনো কারণ নেই। লাখ লাখ মানুষের বিশ্বাস এটাই। এ নিয়ে কেউ বিরোধীতা করেনি। এমনকি মসজিদের বাইরের অংশে হিন্দুরা পূজা করতো তার প্রমাণও রয়েছে। ব্রিটিশ রাজত্ব কালে সেখানে রেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
১৮৫৭ এর আগে ওখানে নামাজ পড়া হতো কিনা তা কোনো প্রমাণ মেলেনি। তাছাড়া ১৯৩৪ এর দাঙ্গার পর থেকে ওখানে মুসলীম সম্প্রদায় নিয়মিতভাবে নামাজ পড়তো বলে প্রমাণ হয়নি। ফলতঃ ওই বিতর্কিত জমিতে তাদের সর্বক্ষণের অধিকার বজায় ছিল সেটা প্রমাণ হয় না। ১৯৪৯ সালে বাবরি মসজিদের মূল গম্বুজের নীচে রামলীলার মূর্তি রাখার ঘটনায় মামলা করেছিল সুন্নি ওয়াক্ফ বোর্ড। এরপরই বিতর্কিত জমিতে (২.৭৭) একর মন্দির নির্মাণে ট্রাস্ট গঠনের রায় দেয় সাংবিধানিক বেঞ্চ। নির্মোহী আখড়াকে জমির অধিকার না দিলেও আদালত জানিয়েছে ট্রাস্টে থাকতে পারবে আখড়ার প্রতিনিধিরা। পাশাপাশি মসজিদ নির্মাণের জন্য সুন্নি ওয়াক্ফ বোর্ডকে বিকল্প জমি দিতে কেন্দ্র বা উত্তর প্রদেশ রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয় সাংবিধানিক বেঞ্চ। বিচারপতিরা রায়ের শেষাংশে লিখেছেন, বাবরী মসজিদ নির্মাণের আগে থেকেই ওই স্থলটিকে রাম জন্মভূমি বলে মেনে আসছে হিন্দুরা। বিভিন্ন তথ্য ও সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। হায়দরাবাদের অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন প্রধান আসাউদ্দিন ওয়াইসি বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সত্যের জয় হয়নি। রায় শিরোধার্য্য কিন্তু অকাট্য নয়। কোর্ট মুসলীমদের যে খয়রাতের ৫ একর জমি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে তা মুসলীম সম্প্রদায় চায় না। মসজিদ নির্মাণে মানুষের কাছে চাইলেই ৫ একর জমি পেতে কোনো সমস্যাই হবে না। সরকারের খয়রাতি জমির কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা আমাদের আইনি অধিকারের জন্য লড়ছি। মুসলিমদের এই ৫ একরের প্রস্তাব খারিজ করা উচিত।
সম্প্রতি দ্যা ওয়ারের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, অযোধ্যার বাবরি মসজিদের নীচে ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় হাজার বার খুঁড়েও কোনো মন্দিরের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ২০১৮ সালে প্রথম এ রিপোর্টটি দ্যা ওয়ারের প্রকাশিত হয়। তাতে আরও জানা যায়, উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে ওই এলাকায় বেশ কয়েকবার খোঁড়খুঁড়ি চালানো হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রতœতাত্ত্বিক মন্দির পায়নি। এমনকি সর্বশেষ ভারতের প্রতœতত্ত্ব বিভাগ দ্যা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (এআইএ) প্রতœতাত্ত্বিক খননেও কোনো মন্দির মেলেনি। এএসআই’র চূড়ান্ত রিপোর্টেও কোনো মন্দির থাকার কথা উল্লেখ করা হয়নি। সংস্থাটির দুই প্রতœতাত্ত্বিকের মতে মসজিদের নীচে প্রাচীন মসজিদের ধ্বংসাবশেষ ছিল। মসজিদ ধ্বংসের প্রায় ১০ বছর পর ২০০২ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট আর্কিলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়াকে অযোধ্যার বিধ্বস্ত বাবরি মসজিদের জমিতে খনন কাজ চালানোর নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ অনুযায়ী খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে প্রতœতাত্ত্বিকদের একটি দল। ২০০৩ সালের আগস্টে ৫৭৪ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট কোর্টে জমা দেয় এএসআই।
রিপোর্টে সংস্থাটি দাবী করে, বিধ্বস্ত বাবরি মসজিদের নীচে মাটি খুঁড়ে তারা একটি বিশালাকার কাঠামো খুঁজে পেয়েছে। তবে সেটা যে কোন মন্দিরের এর পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা তাদের রিপোর্টে বলেনি। এএসআই’র এই রিপোর্ট নিয়ে আপত্তি ওঠে দলের অন্যান্য প্রতœতাত্ত্বিকদের মধ্য থেকেই। রিপোর্টকে অস্পষ্ট ও স্ববিরোধী বলে নাকচ করে দেয় বাবরি মসজিদ মামলার বাদী সুন্নি ওয়াক্ফ বোর্ড। রিপোর্ট নিয়ে আপত্তি জানানো দুই প্রতœতাত্ত্বিক হলো সুপ্রিয়া ভার্মা ও জয়া মেনন। উভয়েই সুন্নি ওয়াক্ফ বোর্ডের পক্ষে এএসআই’র খনন কার্যে অংশ নিয়েছিল। এএসআই’র রিপোর্ট এবং এরপর এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে ২০১০ সালে ইকোনমিক এন্ড পলিটিক্যাল উইকলি শীর্ষক জার্নালে একটি প্রবন্ধ লেখে এই দুই প্রতœতাত্ত্বিক। প্রবন্ধে তারা বলে, খননকালে এএসআই এমন পদ্ধতি ব্যবহার করেছে যাতে মনে হয়েছে এএসআই’র অন্য সদস্যরা মনে মনে আগেই একটা ফলাফল তৈরী করে রেখেছিল। এসএসআই’র রিপোর্ট নিয়ে কেন আপত্তি জানিয়েছিল সে বিষয়ে সম্প্রতি হাফিংটন পোস্টকে সবিস্তারে জানিয়েছেন জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভার্মা। তিনি বলেছেন, আজ পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে, বাবরি মসজিদের নীচে কোনো মন্দির ছিল। তার মতে বাবরি মসজিদের নীচে আসলে পুরনো মসজিদেরই ধ্বংসাবশেষ ছিল। অন্য কোনো খোঁড়া যুক্তি টিকার কথা নয়।
বাবরি মসজিদের স্থানে রামমন্দির বানানোর রায়কে ঘিরে অতি উৎসাহি হিন্দুত্ববাদীদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করলেও বাংলাদেশ ভারতের মুসলীম পাকিস্তানসহ দুনিয়ার মুসলীম দেশ সমূহে এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় নিন্দার ঝড় বয়ে গেছে। এ রায়কে কেন্দ্র করে ভারতের হিন্দু মুসলীম সম্প্রীতির ঐক্যে যাতে কোনো ফাটল না ধরে এবং ১৯৯২ সালের মতো দাঙ্গার উদ্ভব না ঘটে ইহাই হয়তো দেখার বিষয়। যদি কোনো কারণে হিন্দু মুসলীম সম্প্রীতির মধ্যে বিভাজন ঘটে এবং ৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরের আবির্ভাব হয় তবে তা কারও কাম্য নয়। ভুল বোঝাবুঝি পরিহার পূর্বক শান্তিপূর্ণ সমাধানই নিরসনের যথাযোগ্য উপায় বলে বিজ্ঞজনরা মনে করে থাকে। এই ইস্যুকে সামনে বাড়তে না দিয়ে দালিলিক প্রমাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে ঐতিহাসিক ও সুপ্রতিষ্ঠিত ৫০০ বছরের পুরনো বাবরি মসজিদের স্থলে রামমন্দির করার রায়ের আদেশকে বিবেচনা ও সংশোধন যুক্তিযুক্ত। এছাড়া এ রায়কে কেন্দ্র করে সম্প্রীতি ও শান্তির লক্ষ্যে ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতার পথই শান্তি, সম্প্রতি ও সমাধানের আলোর দিশারী।
পরিশেষে বলব, অযোধ্যার বাবরি মসজিদ মোগল স¤্রাট বাবরের ঐতিহাসিক ও উজ্জ্বল নিদর্শন। প্রত্যেকেরই নিজ ধর্মালয়ে প্রার্থনা করার ধর্মীয় অধিকার রয়েছে। এ বিষয়ে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও প্যাগোডায় যেকোন হস্তক্ষেপ ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মূল্যবোধে আঘাত, বাধা প্রদান অনিধকার চর্চা হিসেবেই পরিগণিত। মসজিদ যেমন মুসলীমদের প্রার্থনার স্থান তেমনি হিন্দুদের মন্দির, খ্রীস্টানদের গীর্জা ও বৌদ্ধদের প্যাগোডা। বাবরি মসজিদের স্থানে রামমন্দির প্রতিষ্ঠা, হিন্দুত্ববাদীদের লালসা, উল্লাস, আনন্দ মুসলীম ধর্মের ওপর বিষোদাগার ও বৈরীতারই দিক দর্শন। হিন্দু মুসলীম সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব অটুট থাকুক ইহাই জনপ্রত্যাশা।
এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট