বড়াইগ্রামের প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে ভূয়া চিকিৎসকেরা অপারেশন ও চিকিৎসা করছেন। এসএসসি পাস না করলেও এমবিবিএস ডাক্তার পরিচয়ে অপারেশন করায় রোগীদের বিভিন্ন সমস্যাসহ মাঝে মাঝেই প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। গত তিন মাসে উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে এসব ভূয়া চিকিৎসকের খপ্পড়ে পড়ে কমপক্ষে পাঁচজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলায় মোট ১৬টি বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতাল ও ছয়টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। বিশেষ করে বনপাড়ার বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে বড়াইগ্রামসহ পাশের কয়েকটি উপজেলার লোকজন চিকিৎসা নিতে আসেন। অথচ কিছু ক্লিনিকের ম্যানেজার, ওয়ার্ডবয়, এমনকি কর্মচারীও সার্জন হিসেবে অপারেশন করছেন। তাদের মধ্যে বড়াইগ্রাম হাসপাতালের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা (সেকমো) আসাদুজ্জামান নান্নু, বেসরকারি হাসপাতালের সাবেক ম্যানেজার বাদশা, প্রদীপ কুমার ও আবদুর রহিমসহ আরো কয়েকজন রয়েছেন। তারা অষ্টম শ্রেণী থেকে শুরু করে বড়জোর ইন্টারমিডিয়েট পাস হলেও বড়াইগ্রামসহ পাশের গুরুদাসপুর, সিংড়া, চাটমোহর ও ঈশ্বরদীর কিছুকিছু ক্লিনিকে এমবিবিএস ডাক্তার হিসাবে অপারেশন করেন বলে বিশ^স্থ সুত্রে জানা গেছে। অভিজ্ঞ এবং পরিচিত ডাক্তারদের চেয়ে তারা সম্মানী কম নেন বলে ক্লিনিক মালিকেরাও বেশি লাভের আশায় তাদের দিয়ে অপারেশনের কাজ চালান। এ ছাড়া উপজেলার বেশির ভাগ ক্লিনিকে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ছাড়াই অপারেশন করা হয়। এসব ক্ষেত্রে ক্লিনিকের ম্যানেজার অথবা কোনো নার্স দিয়েই এনেসথেসিয়া সম্পন্ন করা হয়। সম্প্রতি বড়াইগ্রাম হাসপাতালের উপ-সহকারী মেডিকেল কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান নান্নু ও বনপাড়া জয়নব হাসপাতালের এমডি ডা. সাদ্দাম হোসেন নিবিড় পাশের চাটমোহরের একটি ক্লিনিকে অপারেশনের সময় রোগীকে ওটিতে রেখেই পালানোর সময় রোগীর স্বজনেরা তাদের আটক করে। পরে ঐ রোগী মারা গেলে পুলিশ তাদেরকে জেলহাজতে পাঠায়। এ ছাড়া গত মাসেও ভূয়া চিকিৎসকের অপারেশনে দুজন রোগী মারা গেলে বনপাড়ার হেলথ কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল সিলগালা করে দেয়া হয় এবং রাজাপুরের সৌরভ ক্লিনিকের মালিক তালা মেরে পালিয়ে যান। অপরদিকে, যথাযথ লাইসেন্স না থাকা ও বিভিন্ন অভিযোগে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ লক্ষীকোল এলাকার সেবা ক্লিনিক এ- ডায়গনস্টিক সেন্টার এবং ফাতেমা ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ দিলেও তারা যথারীতি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ক্লিনিক মালিক জানান, প্রশাসন শক্ত হলে ভূয়া চিকিৎসক দিয়ে অপারেশন করানো বন্ধ হবে। তবে কম টাকা নিয়ে চিকিৎসা দেয়ায় ডাক্তার এনে এনেসথেসিয়া করিয়ে আমাদের পোষায় না। তাই কর্মচারী দিয়েই এনেসথেসিয়ার কাজ চালিয়ে নিতে হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: পরিতোষ রায় বলেন, ভূয়া সার্জন ঠেকাতে রোগীর লোকজনের সহযোগিতা দরকার। আমরা মাঝে মাঝে এসব ক্লিনিক পরিদর্শন করে থাকি। যেসব ক্লিনিকে সমস্যা রয়েছে সেগুলো আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো। নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুল ইসলাম জানান, ইতোঃমধ্যেই দুটি ক্লিনিক বন্ধ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে চিঠি দেয়া হয়েছে। অবশিষ্টগুলোতে খোঁজ খবর নিয়ে কোন সমস্যা থাকলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।