সময় এখন ইঁদুর কপালিদের। আমন ধান কাটা প্রায় শেষ। ফসলশূন্য মাঠে একদল শিশু কিশোর মাটি খুঁড়ছে। কোন গুপ্তধন পাওয়ার আশায় নয়,মাটি খুঁড়ে ওরা ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান সংগ্রহ করছে। ইঁদুরের গর্তে পাওয়া ধানে অভাব জয় করেছে এসব ইঁদুর কপালিরা। ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান সংগ্রহের এমন দৃশ্য এখন হরহামেশাই চোখে পড়ে চলনবিলের প্রতিটি উপজেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠে। প্রতিবছর আমন ধানের মৌসুমে বেড়ে যায় ইঁদুরের উপদ্রব। ইঁদুর ধানের শীষ কেটে নিয়ে ভবিষ্যতের খাদ্য হিসাবে গর্তে মজুদ রাখে। দেশি জাতের বোনা আমন ধানের গাছ মাটিতে পড়ে যায় বলে ইঁদুর এ ধান বেশি সংগ্রহ করে। পড়ে যাওয়া ধান ক্ষেতের আইলে ইঁদুর গর্ত তৈরি করে প্রচুর ধান জমিয়ে রাখে। আর ইঁদুরের গর্তের এই ধান সংগ্রহ করতে চলনবিলের মাঠে মাঠে নিম্ন আয়ের কৃষক পরিবারের নারী-পুরুষ,শিশু-কিশোর এখন ব্যস্ত সময় পার করছে।
প্রতি বছর শিশু-কিশোর,নারী-পুরুষ চলনবিলের চাটমোহর,ভাঙ্গুড়া,বড়াইগ্রাম,গুরুদাসপুর,তাড়াশ, রায়গঞ্জ,সিংড়া উপজেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠে ধান কুড়ানো ও ইঁদুরের গর্তে জমানো ধান সংগ্রহের কাজে নামে। এসব শিশুদের অনেকেই বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ওরা ধান সংগ্রহ করে পরিবারের ভূমিকা রাখছে। ওদের সংগৃহিত ধানে ২/৩ মাসের খাবারের সংস্থান হয়।
কৃষক আবজাল, আ.মান্নান ও আবদুল প্রাং জানান,‘ধান কাটা শেষ হলি আমরা ধান খুঁটি করি। ইঁন্দুরের গর্ত থেকে ধান বার করি। কোন গর্তে ধান আছে আমরা দেখলি ঠিক পাই। ভাগ্য ভালো হলি এটটা গর্তে দুই থেকে দশ কেজি পর্যন্ত ধান পাওয়া যায়।’
ছাইকোলা কৃষক কবীর হোসেন জানান,আমন ধান কাঁটার পর দরিদ্র কৃষক পরিবারের নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর এক যোগে ধান সংগ্রহে নেমে পড়ে। ধান পরিবহণের সময় প্রচুর ধান পড়ে যায়। এ ছাড়া ইঁদুর প্রচুর ধানের শীষ গর্তে জমিয়ে রাখে। এভাবে অনেক পরিবার দুই থেকে দশ মণ পর্যন্ত ধান সংগ্রহ করে থাকে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানায়,‘এ এলাকায় ধান কাঁটার পর দরিদ্র লোকজনের ধান কুড়ানো এবং ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান সংগ্রহের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তবে প্রতিবছর ইঁদুর নিধন অভিযান ও কীটনাশকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ক্ষেতে ইঁদুরের উৎপাদন অনেকাংশে কমে গেছে। এতে ইঁদুরের গর্তে আগের মতো বেশি ধান পাওয়া যায় না। তবে ইঁদুরের ধান সংগ্রহ কৃষকের জন্য ক্ষতি হলেও দরিদ্র লোকজনের জন্য অনেকটা ‘শাপে বর’।