উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন সড়ক মহা সড়কে এখন বেসরকারি ক্যুরিয়ার সার্ভিস গুলো এখন নিষিদ্ধ পণ্য পরিবহনে নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে নিরাপদে পৌঁছে অবৈধ পন্য। এসব পন্যর নামে পাচার হচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের ছোট অস্ত্র, নকল ওষুধ, নিষিদ্ধ পলিথিন, নিষিদ্ধ ঘোষিত মাদক এবং নকল বিড়ি সিগারেটের সহ অবৈধ পন্যর বড় বড় চালান।অভিযোগ রয়েছে সঙ্গবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে শুধু দেশের অভ্যন্তরীন বিভিন্ন রুটেই নয় আন্তর্জার্তিক পর্যায়েও চলছে পাচারের কাজ চলছে হরহামেশা।
এক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্যুরিয়ার মালিকদের রাজনৈতিক, সামাজিক প্রভাব এবং আইনশৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও অনিহা সর্বোপরি সহ ক্যুরিয়ার সার্ভিস মালিকদের মিডিয়া হাউজ সংস্লিস্টতার কারণে প্রপার এ্যাকশান হচ্ছেনা বলে মনে করা হয়ে থাকে। অনুসন্ধানে আরো জানা যায় ,দেশের বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের মালিক পক্ষ এতটাই ক্ষমতাশালী যে সহরাচর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গুলো ওই সব কুরিয়ার সার্ভিসের বিরুদ্ধে কোন ভুমিকা নিয়ে ঝুকি নিতে চাননা।
সংস্লিষ্ট সুত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃটিশ আমলে প্রনিত পোষ্টাল আইন -১৮৯৮ দিয়েই ৩ যুগ ধরে চলছে বেসরকারি ক্যুরিয়ার সার্ভিস ব্যবস্থা। বাস্তবতার আলোকে সরকার ২০১১ সালে পুরনো আইনটির কিছু পরিবর্তন ও সংযোজন করে ক্যুরিয়ার সার্ভিস বিধিমালা আপডেট করে।
নতুন আইন ও বিধির কারণে ক্যুরিয়ার সার্ভিসের বেআইনী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রনে আনার সম্ভাবনা তৈরী হলে ক্যুরিয়ার ব্যবসায়ীরা হাইকোর্টে রিট করে নতুন আইনটির কার্যকারিতা স্থগিত করে দিয়েছে। এরপর থেকেই অনেকটা বেপরওয়াভাবে বেড়ে গেছে নিষিদ্ধ পণ্যের পরিবহণ। এক্ষেত্রে প্রায় ৩ যুগ ধরে চলা বেসরকারি ক্যুরিয়ার সার্ভিসে আইন শৃংখলাবাহিনীর পদক্ষেপ গ্রহন তেমন একটা উল্লেখযোগ্য নয় বলেই দেখা যায়।
একটি সুত্র জানায়, ক্যুরিয়ার সার্ভিসে পণ্য পরিবহনের কাজে ইদানীং বিশাল বিশাল কন্টেইনার ব্যবহার করা হয়। উত্তরজনপদের সড়ক মহাসড়কে বীর দর্পে বেপরোয়া ভাবে দাফিয়ে চলার কন্টেইনার গুলো অন্যান্য যানবাহনের মত রাস্তায় ক্যুরিয়ার সার্ভিসে ব্যবহৃত বাহন গুলো রাস্তায় দাঁড় করিয়ে পরিক্ষা করতে পারেনা আইনশৃংখলা বাহিনী।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রংপুরের হারাগাছা এলাকা থেকে নকল বিড়ির প্রস্তুতকারিরা নিয়মিতভাবে বিভিন্ন পয়েন্টে তাদের পণ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহার করছে বেসরকারি ক্যুরিয়ার পরিবহনকে। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলের কেন্দ্রীয় জেলা শহর বগুড়া থেকেও প্রতিদিন বিপুল পরিমানে ভারতীয় ওষধ ,চোরাচালান সামগ্রী ,এ্যালকোহল, বাংলা মদ, নকল বিড়ি, নকল হোমিও এবং এ্যালপেথিক ওষুধ, পলিথিন, সহ বেআইনী পন্যের চালান বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাতে পাঠানো হয়। তেমনি বগুড়াতেও তা’ আসে। অনূরুপ ভাবে রাজধানী থেকে একই মাধ্যমে নিরাপদে পৌছে যাচ্ছে পন্য সামগ্রী। দেশের বিভিন্ন স্থানে পলিথিন সামগ্রী নিষিদ্ধ হওয়ার প্রেক্ষাপটে পলিথিন ব্যবসায়ীরা এটা পরিবহনের নিরাপদ বাহন হিসেবে ব্যপকভাবে ব্যবহার করছে ক্যুরিয়ার সার্ভিসকে।
অন্যদিকে এ্যালকোহল সামগ্রী, নিষিদ্ধ ইয়াবা চালান, ফেন্সিডিলের মত মাদক এবং অস্ত্রও পরিবহণ হ্েচছ নিয়মিত ভাবে। মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন ভাবে এসব চালানের ছিটে পোটা আইনশৃঙ্খলা বহিনীর হাতে তা’ ধরা পড়লেও সেগুলো রহস্যজনক কারণে মিডিয়া ফোকাসে আসেনা।
বেসরকারি ক্যুরিয়ার সার্ভিস সংস্লিষ্ট একাধিক সুত্র অবশ্য বেআইনী ও নিষিদ্ধ পণ্য পরিবহনের এবং তা’ সীমিত সংখ্যায় বা’ আকারে ধরা পড়ার কথা স্বীকার করে বলেছেন, এটা অনিচ্ছাকৃত। তারা নিজেদের আত্বপক্ষ সমর্থনে বলছে, যাই ঘটুক সে গুলো তাদের অজান্তেই করা হয়ে থাকে। সুত্রটির দাবী, দেশের অধিকাংশ নামকরা ক্যুরিয়ার সার্ভিসের বেশিরভাগ ষ্টেশন কিংবা সাব ষ্টেশনে কোন নেই কোন নিষিদ্ধ পণ্য সনাক্তকরনের স্ক্যানার মেশিন। কেননা সেগুলো এতই দামি যে, ক্যুরিয়্যার সার্ভিসের ষ্টেশন গুলোতে সেগুলো ব্যবহার করতে গেলে পরিচালনা ব্যয় অনেকগুন বেড়ে যাবে।
সুত্রটি আরও দাবি করে ক্যুরিয়ার সার্ভিসের অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ব্যাপকভাবে তাদের সদস্য প্রতিষ্ঠান গুলোকে নিষিদ্ধ পন্য পরিবহনের কাজে যেন ব্যবহার করা না হয় সেজন্য সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে।
তবে এইসব সতর্কবার্তা গুলো আসলে লোক দেখানো হতে পারে বলেও অনেকে মনে করেন। কারণ নিষিদ্ধ ও বেঅইনী পণ্য পরিবহনের জন্য বুকিং চার্জ অনেক বেশি নেওয়া হয়। তবে সেজন্য অফিসিয়াল রেকর্ড রাখা হয়না।