ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির লোমহর্ষক নৃশংস হত্যাকা-ের ঘটনা ফেনীসহ সারা দেশে আলোচনার ঝড় তোলে। সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হলেও নিজের সম্ভ্রম রক্ষায় এক ‘বিদ্রোহিনী’র মতো তার সাহসিকতা সবার নজরে পড়ে। মৃত্যুশয্যায় নুসরাত বলেছিলেন, ‘আমি শেষ পর্যন্ত লড়ব’। এ হত্যা ঘটনা ও তার দৃঢ় মনোভঙ্গি দেশসহ বিশ্ব গণমাধ্যমেও স্থান করে নেয়।
নুসরাতের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি রাখা অধ্যক্ষ সিরাজ নিজ কার্যালয়ে গত ২৭ মার্চ তাকে শ্লীলতাহানি করে। প্রতিবাদে শ্লীলতাহানির মামলা করলে তাকে ও তার পরিবারকে নানা রকম হুমকি দেয়া হয় মামলা তুলে নিতে। মামলা না তোলায় কারাগারে থাকা অধ্যক্ষের নির্দেশে তার অনুগত ক্যাডার বাহিনী নুসরাতকে হত্যার পরিকল্পনা আঁটে। ৬ এপ্রিল নুসরাতকে পরীক্ষা হল থেকে ডেকে মাদ্রাসার ছাদে নিয়ে বোরকা পরা মুখোশধারী তার হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়। পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ১০ এপ্রিল মারা যান নুসরাত। সেদিনই মামলাটি পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর হয় এবং সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়। ওসির পক্ষে হেডকোয়ার্টারর্সে প্রতিবেদন দেয়া ও দায়িত্বে অবহেলার জেরে এসপি জাহাঙ্গীর আলম সরকারকেও প্রত্যাহার করা হয়। একপর্যায়ে পালিয়ে যাওয়া ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে আইসিটি মামলায় গ্রেফতার করা হয় শ্লীলতাহানির অভিযোগ দিতে গেলে বেআইনিভাবে নুসরাতের ভিডিওধারণ ও প্রচারের জন্য। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে এলে যথাযথ ব্যবস্থা নেন। এরই ধারাবাহিকতায় দ্রুত সময়ে ঘটনার ৬ মাস ১৮ দিন পর গত ২৪ অক্টোবর আলোচিত এ হত্যাকা-ের রায় ঘোষণা করেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। ঘটনার আদ্যপান্ত নিচে বিধৃত হলোÑ
শ্লীলতাহানির শিকার নুসরাত : আগে থেকেই নুসরাতের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি রাখা অধ্যক্ষ সিরাজ চলতি বছরের ২৭ মার্চ নুসরাতকে পিয়ন নুরুল আমিনের মাধ্যমে নিজ অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করে। রাগ-ক্ষোভে নুসরাত সেখানে অজ্ঞান হয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়। তার অভিযোগের ভিত্তিতে ওইদিন পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরদিন নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে তাকে একমাত্র আসামি করে সোনাগাজী মডেল থানায় শ্লীলতাহানির মামলা করেন। পরে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ওসি মোয়াজ্জেমের বেআইনি ভিডিওধারণ : গত ২৭ মার্চ নুসরাত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করলে পুলিশ তাদের দু’জনকে থানায় নিয়ে আসে। পরে নুসরাতকে নিজ কক্ষে এনে বেআইনিভাবে জেরা ও তার ভিডিওধারণ করেন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, থানায় ওসির সামনে অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরতে গিয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন নুসরাত। নুসরাত তার মুখ দুই হাতে ঢেকে রেখেছিলেন। সে সময় ওসি মোয়াজ্জেম ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও’ বলার পাশাপাশি এও বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি যে, এখনও তোমাকে কাঁদতে হবে।’ এভাবে অধ্যক্ষের পক্ষে থেকে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন ওসি।
অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ : অধ্যক্ষ সিরাজকে আটকের পর গত ২৮ মার্চ সোনাগাজীর জিরো পয়েন্টে তার অনুচর তথা সহযোগী ক্যাডার বাহিনী পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলমের নেতৃত্বে ‘অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা মুক্তি পরিষদ’-এর ব্যানারে বিক্ষোভ করে। একই সময়ে সিরাজের বিচার দাবিতে আরেক কাউন্সিলর শেখ আবদুল হালিম মামুনের নেতৃত্বে আরেকটি বিক্ষোভ হয়। সেখানে দুই কাউন্সিলরের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে নুসরাত হত্যাকা-ের ঘটনায় অধ্যক্ষের পক্ষে বিক্ষোভে অংশ নেয়া কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীমসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
অগ্নিদগ্ধ নুসরাত : গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষার আরবি প্রথমপত্র পরীক্ষা দিতে হলে বসলে নুসরাতের বান্ধবী নাসরিন সুলতানা ফুর্তিকে ছাদের ওপর মারধর করছেÑ এমন মিথ্যা কথা বলে সিরাজের শ্যালিকার মেয়ে উম্মে সুলতানা পপি ওরফে শম্পা বা চম্পা বা তুহিন নুসরাতকে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে বোরকা, মুখোশ ও হাত মোজা পরা ৪ দুর্বৃত্ত তাকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। নুসরাত রাজি না হলে একপর্যায়ে তারা তার গায়ের ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। আগুনে পুড়ে বাঁধন খুলে গেলে নুসরাত চিৎকার করে দৌড়ে নিচে নেমে আসে। পরে পুলিশ ও কেন্দ্রে থাকা লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ফেনী জেনারেল হাসপাতাল এবং পরে সেদিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, নুসরাতের শরীরের ৭০-৮০ শতাংশ পুড়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রীর নজরে নুসরাত : নুসরাতের ওপর নৃশংস ও বর্বরোচিত ঘটনার খবর ফলাও করে গণমাধ্যমে প্রচার-প্রকাশ হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে বিষয়টি। এতে তিনি মর্মাহত হয়ে ৭ এপ্রিল নুসরাতের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বিশেষজ্ঞ ৭ চিকিৎসকের সমন্বয়ে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়। এ সময় তিনি সব আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। পরদিন নুসরাতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নিতে নির্দেশ দেন তিনি। তার নির্দেশ মোতাবেক ডাক্তাররা সেখানকার চিকিৎসকদের সঙ্গে কথাও বলেন। নুসরাতের মৃত্যুর পর ১৫ এপ্রিল তার মা-বাবাকে প্রধানমন্ত্রী নিজ দফতরে ডেকে সান্তনা দিয়ে ন্যায়বিচারের আশ্বাস দেন।
হত্যাচেষ্টার মামলা : গত ৮ এপ্রিল নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে নুসরাতকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা (৫৫), সোনাগাজী পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ‘অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা মুক্তি পরিষদ’-এর নেতৃত্বে থাকা মাকসুদ আলম (৪৫), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), জাবেদ হোসেন (১৯), হাফেজ আবদুল কাদের (২৫), যোবায়ের আহম্মেদ (২০), আবছার উদ্দিনের (৩৫) নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া হাত মোজা, চশমা ও বোরকা পরা ৪ জনসহ অজ্ঞাত অনেককে আসামি করা হয়।
নুসরাতের চিরবিদায় : গত ১১ এপ্রিল সন্ধ্যায় সোনাগাজী সাবের পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নুসরাতের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় ইমামতি করেন নুসরাতের বাবা মাওলানা একেএম মুসা মানিক। ওইদিন সকাল থেকে নুসরাতের বাড়ি ও স্কুল মাঠে হাজারো মানুষ আসতে থাকে। বিকাল সাড়ে ৫টায় নুসরাতের লাশবাহী ফ্রিজার ভ্যান বাড়িতে পৌঁছায়। সেখান থেকে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে তার মরদেহ জানাজার জন্য স্কুল মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বাড়ির পাশের আঙিনায় দাফন করা নুসরাতকে।
হত্যাকা-ের অ্যাকশ্যান : অগ্নিদগ্ধ নুসরাত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীনে মারা যায়। একই দিন দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রত্যাহার করে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে প্রেরণের নির্দেশ দেয়। সেদিনই মামলাটি পিবিআইয়ে হস্তান্তর করা হয়। পিবিআই দায়িত্ব নেয়ার পর দ্রুত একে একে হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়া নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীমসহ অন্যরা ধরা পড়ে। তাদের জবানবন্দি অনুযায়ী অন্যরাও আইনের আওতায় আসে।
পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর প্রত্যাহার : ওসি মোয়াজ্জেমের পক্ষে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে মিথ্যা প্রতিবেদন প্রেরণ ও কর্তব্যে অবহেলার দায়ে গত ১২ মে ফেনীর তৎকালীন পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। এর আগে পুলিশের দুটি তদন্ত টিম তার অবহেলার প্রমাণ পেয়ে পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর সরকারকে প্রত্যাহারের সুপারিশ করে। এ ঘটনায় পুলিশ সুপারের অবহেলার বিবরণ দিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ করার জেরে ফেনী ছাড়ার আগে পুরনো মামলায় ফেনীর চার সাংবাদিকের নাম দিয়ে ফাঁসিয়ে দেন ওই পুলিশ সুপার।
মামলার ফাঁদে ওসি মোয়াজ্জেম : নুসরাতের যৌন নিপীড়নের ঘটনায় বেআইনিভাবে জেরা ও ভিডিওধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে গত ১৫ এপ্রিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ছায়েদুল হক সমুন। ২৭ মে পিবিআইয়ের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলায় ১২৩ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন। দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর ১৬ জুন ঢাকার হাইকোর্ট এলাকা থেকে ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর ২০ দিন আগে আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
তদন্ত টিম : নুসরাত হত্যার ঘটনায় পুলিশের ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে হেডকোয়ার্টার্স। গত ১৯ এপ্রিল ঘটনাস্থল ও নুসরাতের বাড়িতে আসেন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড প্ল্যানিং) এসএম রুহুল আমিন, একই দফতরের অ্যাডিশনাল এসপি সম্রাট মো. আবু সুফিয়ান, নিরস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক সালাহ উদ্দিন আরশেদসহ আরও দুই শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা। তদন্ত চলাকালে তারা নুসরাতের মা-বাবা ও ভাই, মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদ, শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন
অভিযোগপত্র দাখিল : হত্যা মামলায় ১৬ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক শাহ আলম। গত ২৯ মে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইনের আদালেত ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র জমা দেন তিনি। অভিযোগপত্রে সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ, নূর উদ্দিন, শামীম, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ, সাইফুর, জাবেদ, হাফেজ আবদুল কাদের, আবছার, মণি, উম্মে সুলতানা, শরীফ, রানা, মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি ও উপজেলা আ’লীগ সভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিলের নাম উল্লেখ করে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
মামলাটি ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ : গত ৩০ মে নুসরাত হত্যা মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করা হয়। ওইদিন দুপুরে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইন মামলার পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য সব নথিপত্র নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
৫ আসামির মুক্তি : গত ২৯ মে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের পর ১০ জুন তা আমলে নেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। একই সঙ্গে হত্যাকা-ে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় নূর হোসেন, আলা উদ্দিন, কেফায়েত উল্যাহ জনি, সাইদুল ও আরিফুল ইসলামকে খালাস দেন আদালত। এছাড়া ওই দিন আদালত ১৬ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা : মামলার বাদী নোমানকে দিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। গত ২৭ জুন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে টানা ৬ ঘণ্টা সাক্ষ্য প্রদান করেন তিনি। পর্যায়ক্রমে নুসরাতের মা শিরিন আক্তার, বাবা মুসা মানিক ও ছোট ভাই রাশেদুলসহ মামলার ৮৭ সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। মামলার ৯২ সাক্ষীর মধ্যে বাকি ৫ জনের নথিপত্র সাক্ষী হিসেবে গ্রহণ করেন আদালত।
যৌন হয়রানির মামলার অভিযোগপত্র : গত ৩ জুলাই আদালতে নুসরাতকে যৌন হয়রানির আরেক মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের পরিদর্শক শাহ আলম ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইনের আদালতে ২৭১ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ মামলার অভিযোগপত্রে ডাক্তার, পুলিশসহ ২৯ জন সাক্ষী রয়েছেন। পরদিন ৪ এপ্রিল তিনি এ মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে প্রেরণ করেন।
যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন : নুসরাত হত্যা মামালার রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন এবং তা খ-ন করেন আসামিপক্ষের কৌসুলিরা। ১২ কর্মদিবস ধরে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের কৌসুলিদের মধ্যে আদালতে যুক্তি-তর্ক চলে। পরে ৩০ সেপ্টেম্বর তা খ-ন শেষে রায়ের দিন তারিখ ধার্য করেন আদালত।
রায় : গত ২৪ অক্টোবর সকাল ১১টার পর আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামিকেই ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারক মামুনুর রশিদ। (তথ্যসূত্র : সংবাদ- ২৫ অক্টোবর ২০১৯)
আমরা বলতে চাই, এ বাংলার মাটিতে আর কাউকে যেনো নুসরাতের মতো পরিস্থিতির শিকার হতে না হয়। সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
এম. কে. দোলন বিশ্বাস, দৈনিক সংবাদের সাবেক সহ-সম্পাদক