যশোরের কেশবপুরে চাঞ্চল্যকর কৃষক সামাদ হত্যা মামলার ৫ আসামীর সাজা বহাল রেখে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত ১৪ নভেম্বর খুলনা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক মো. নজরুল ইসলাম হাওলাদার এ আদেশ দেন। এরমধ্যে মামলার ৪ নং আসামি রাজ্জাক আদালতে আত্মসমার্পণ না করায় তার জামিনদারের মুচলেকা কেন বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে জামিনদারের প্রতি কারণ দর্শাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ১৯৯৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারী গভীর রাতে উপজেলার মহাদেবপুর গ্রামের নজর আলী শেখের ছেলে আবদুস সামাদকে (৩৫) পূর্বশত্রুতায় ১৫ থেকে ১৬ জনের একদল সন্ত্রাসী বাড়ির ঘরের দরজা ভেঙে জোর পূর্বক অপহরণ করে পার্শ্ববর্তী মোমিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে অমানসিকভাবে নির্যাতন করে হাত, পা ভেঙে দিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় মৃত ভেবে ফেলে রেখে চলে যায়। রাত ১২ টার দিকে তার পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে কেশবপুর হাসপাতালে আনা হলে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ওই রাতেই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানাšতর করা হয়। পরের দিন সকাল ৭টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় তার পিতা নজর আলী শেখ বাদি হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৭ থেকে ৮ জনের বিরুদ্ধে কেশবপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। যার নং- ০২। তাং- ০৩/০২/৯৫। ২০০১ সালে এ মামলার বাদি নজর আলী শেখ মারা গেলে তার ছেলে কামাল হোসেন মামলাটি চালিয়ে যেতে থাকেন। ২০০২ সালে এ মামলার বিচারকার্য শুরু হয়। আদালত ২৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। কিন্তু দীর্ঘ ১৯ বছরেও সামাদ হত্যার বিচারকার্য শেষ না হওয়ায় অবশেষে ২০১৫ সালের জানুয়ারী মাসে মামলাটি খুলনা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করা হয়। যার নং-৮/২০১৫। দীর্ঘ ২৪ বছর পর ২০১৯ সালের ৮ আগস্ট খুলনা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক শুনানী শেষে এ মামলার অভিযুক্ত আসামীদেরকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
আটকৃতরা হলো, মহাদেবপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, দীন মোহাম্মদ, শাহাদাত হোসেন, আবদুর রাজ্জাক, আলতাফ হোসেন, তোরাপ আলী, জাকির হোসেন, সোহরাব হোসেন, রফিক ও রাজ্জাক। ১৯ আগস্ট খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক এমএম আবদুর রব হাওলাদার আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ বছরের সশ্রম কারাদন্ডাদেশ প্রদান করেন।
মামলার বাদি মৃত নজর আলী শেখের ছেলে কামাল হোসেন জানান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে আপীল বিভাগে ক্রিমিনাল পিটিশন ফর লিভটু আপীল করেন। যার নং- ৯৫৭/১৯ ও ৯৫৮/১৯। গত ১৪ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ বিচারক পূর্বের রায় বহাল রেখে আসামীদের খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আত্মসমার্পণ করার নির্দেশ দেন। এরমধ্যে ৪ জন আসামি আত্মসমার্পণ করলে বিজ্ঞ বিচারক তাদেরকে সাজা পরোয়ানা মূলে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেয়। কিন্তু ৪ নং আসামি রাজ্জাক আত্মসমার্পণ না করায় তার জামিনদারের মুচলেকা গত ২৭ নভেম্বর বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালত।