বাংলাদেশকে কখনো কোনদিনও মা ব্যতিত ভাবিনি। এই মায়ের কোলে লোভ মোহহীন নিরন্তর এগিয়ে চলছি ছাত্র, যুব, জনতার কথা ভেবে। এই মাকে, এই মাটিকে যারা জীবন দিয়ে স্বাধীন করেছেন, সেই শহীদ বীর যোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা বিজয়ের এই মাসে। শ্রদ্ধা-ভালবাসা সেই সকল যোদ্ধার প্রতি যারা জীবনের কথা না ভেবে লড়েছেন এবং বিজয় অর্জন করেছেন। পাশাপাশি সেই যোদ্ধাদেরকেও কৃতজ্ঞতা; যারা যুদ্ধরত বীরদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। আর তাদেরই হাত ধরে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে এক নবদিগন্ত উন্মোচনকারী ঘটনা। আমাদের এই উপমহাদেশ দীর্ঘদিন ছিল পরাধীন। ফলে এই অঞ্চলে সামাজিক জাগরণ এবং শিক্ষা-দীক্ষার তেমন প্রসার ঘটেনি। পূর্ববাংলার অবস্থা ছিল আরও করুণ। কারণ বৃটিশ ভারতের প্রথম রাজধানী কলকাতার পশ্চাৎভূমি হিসাবে এই অঞ্চল ছিল আরও পশ্চাৎপদ। তবে এ অবস্থার মধ্যেও ঔপনিবেশিক শাসন-শোষন ও লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নানা অঞ্চলে যে-সব কৃষকবিদ্রোহ হয়েছে তাতে জাগৃতির উপাদান সঞ্চিত হচ্ছিল। কিন্তু ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ববাংলার বাঙালির জাতিসত্তা গঠন এবং দেশাত্মবোধক আন্দোলনে আকস্মিক ছেদ পড়লেও ১৯৪০-এর দশক থেকেই তা আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। এরপর ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকারের সংগ্রাম এবং সামরিক শাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তা ধীরে ধীরে গভীরতা অর্জন করে। এই ধারাটি ১৯৬০-এর দশকে সর্বকালে সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফাভিত্তিক স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন এবং অর্থনৈতিক মুক্তির কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সংগ্রামের সর্বোচ্চ স্তরে উত্তীর্ণ হয়। এরই ধারাবাহিক পরিণতি ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং পরবর্তীকালে পূর্ববাংলার নবজাগ্রত বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হয়। এই ঘটনাকে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে নবদিগন্ত উন্মোচনকারী বলে আখ্যায়িত করেছি। মাত্র কয়েকটি লাইনে আমরা দীর্ঘ সময়কালের ইতিহাসের একটি অতি সংক্ষিপ্ত রূপরেখা তুলে ধরেছি। এর প্রতি স্তরে অসংখ্য সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক ঘটনাপ্রবাহ এবং তার অভিঘাতে সৃষ্ট নানা পরিস্থিতির মোকাবেলা করে বাঙালি শেষ পর্যন্ত তাদের অশেষ সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রটি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। বাঙালির দুই-আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসের মধ্যে অটুট ঐক্যবদ্ধ হয়ে এমন ঘটনা সৃষ্টির আর নজির নেই। এক্ষেত্রে এই অঞ্চলের নির্যাতিত-নিপীড়িত দুঃখী মানুষের জীবনপণ সংগ্রাম এবং বঙ্গবন্ধুর ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বেরও আর কোনো তুলনা আমাদের ইতিহাসে নেই।
একজন বীর যোদ্ধা বলেছিলেন ১৯৭১ সালের মার্চ মাস। সাতই মার্চের আগের দিন থেকেই উত্তেজনা নিয়ে বসে আছি বঙ্গবন্ধু রেসকোর্সে কী বলবেন তা শোনার জন্য। ৭ই মার্চে আমি এবং আমার স্বামী রেডিওতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনেছিলাম। তিনি যে ভাষণ দিয়েছিলেন সে ভাষণ শুনে আমরা উপলব্ধি করলাম আমাদের দেশের জন্য কিছু করতে হবে। অনুভব করেছিলাম ‘স্বাধীনতা’ চাই, চাই-ই। ২৫ মার্চ যুদ্ধ শুরু হলে আমি আমার এলাকা হাজীগঞ্জে চলে আসি। এখান থেকেই আমি ও আমার স্বামী মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিই। আমাদের কমান্ডার ছিলেন জহিরুল হক পাঠান। তাঁর নেতৃত্বেই মধুমতি কোম্পানি গড়ে উঠে। এ দলে সাড়ে তিনশ’ মুক্তিযোদ্ধা ছিল। তাদের মধ্যে ভূঁইয়া মোঃ কলিম উল্লাহ (বিএম কলিম উল্লাহ), সুবেদার আঃ রব, আবদুল গফুর, সুবেদার আঃ সাত্তার (হারিস) প্রকৌ. দেলোয়ার হোসেন, প্রফেসর রতন ছিলেন উল্লেখযোগ্য। আমি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পড়তাম। আমি পঞ্চম বর্ষের ছাত্রী ছিলাম। আমি যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলাম। এছাড়াও যেহেতু আমি ডাক্তারি পড়ছিলাম, স্বাভাবিকভাবেই যুদ্ধাহতদের চিকিৎসা সেবার ভার ছিল আমার ওপর। অনেক স্মৃতি আছে যুদ্ধ দিনের। তবে ১৯৭১-এর একটি দিনের কথা আমার এখনও বিশেষভাবে মনে আছে। যতদিন বাঁচি, ততদিন এ ঘটনা আমি ভুলতে পারব না। সেদিন ছিল ২৯ সেপ্টেম্বর। বিকেল বেলা, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। আমরা সবাই নৌকায় ছিলাম। আমাদের ক্যাপ্টেন ছিলেন জহিরুল হক পাঠান। সেদিন শাহরাস্তির অফিস চিতোষীতে পাকবাহিনীর ক্যাম্পে আমাদের যোদ্ধারা আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে আমরাই বিজয়ী হই। ক্যাম্প দখল করা হলে আমাকে যখন খবর দেয়া হলো, আমি ক্যাম্পের ভেতরে গেলাম। আগেই আমাদের কাছে খবর ছিল এ ক্যাম্পে পাকিস্তানীরা কয়েকজন মেয়েকে ধরে এনেছে। যখন আমি ভেতরে গেলাম, দেখলাম ক্যাম্পের একটা অংশে কতগুলো মেয়ে, তাদের গায়ে কোন বস্ত্র ছিল না, সারা শরীরে পাশবিক নির্যাতনের অসংখ্য চিহ্ন। পরবর্তীতে আমি আমার সঙ্গের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে তাদের জামা নিয়ে মেয়েদের পরতে দিলাম। ঐ সময় আমার সঙ্গে কোন ওষুধপত্র ছিল না। আমরা তখন মেয়েদের নিয়ে পানিয়ারার দিকে চলে গেলাম। সেখানে ক্যাম্পে আমি তাদের সেবা-শুশ্রƒষা করি। জানা গেল মেয়েদের বাড়ি চাঁদপুর পার্শ্ববর্তী জেলা শরীয়তপুরে। তারা সুস্থ হলে তাদের যখন বললাম, তোমরা বাড়ি যাও। আমার কথা শুনেই কয়েকটা মেয়ে হু হু করে কেঁদে উঠল। বলল, আমাদের তো আমাদের পরিবার গ্রহণ করবে না। সমাজও আমাদের নেবে না। পরে অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে আমরা তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেই। এই ঘটনাটা আমার প্রায়ই মনে পড়ে। যুদ্ধসময়ে আমরা নৌকায় থাকতাম। মাঝে মধ্যে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠতাম। তবে আত্মীয়ের বাড়িতে উঠা বিপজ্জনক ছিল। নৌকায়ই বিশেষত খাওয়া দাওয়া করতাম। বেশিরভাগই আলুর তরকারি। কখনও সখনও মাছ খেতাম। আত্মীয়রা গোপনে তরি-তরকারি এনে দিতেন। সেসময় কোনমতে খেয়ে-পরে ছিলাম। আমাদের মাঝি ছিল এরশাদ। ওই রান্না করত। বঙ্গবন্ধু কন্যা মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযোগ্য সম্মান দিচ্ছেন। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছেÑএটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। সরকারের কাছে আমার আর কোন দাবি-দাওয়া নেই। আমি বেঁচে থাকতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখতে পেরেছি, রাজাকারদের ফাঁসি দেখেছি এজন্যে আমি শেখ হাসিনা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার কেবল একটিই প্রত্যাশা, বাকি যেই যুদ্ধাপরাধীরা আছে, তাদের বিচারের কাজও যেন দ্রুত শেষ করা হয়।
আমি মনে করি- রাজনীতিকে কালোমুক্ত করতে তারুণ্যর রাজনীতির কোন বিকল্প নেই; বিকল্প নেই আেেলাকিত সমাজ নির্মাণের জন্য নিরন্তর এগিয়ে চলায়। আর সেই সুবাদে দিনের মত স্বচ্ছতায় বলবো- মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানুষের মাঝে যেভাবে মুক্তিযোদ্ধারা সঞ্চারিত করতে পারবেনÑঅন্য কেউ সেভাবে পারবেন না। কারণ, মুক্তিযোদ্ধারাই তো রণাঙ্গনে ছিলেন। যুদ্ধের ভয়াবহতা ও কদর্যতা তারাই সবচেয়ে কাছ থেকে দেখেছেন। আমরা কেউ মা হারিয়েছি, কেউ বাবা, পুত্র, কন্যা, কেউ স্ত্রী, সংসার। স্বাধীনতা অর্জনের জন্যে যে কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে সেটা মুক্তিযোদ্ধারা ভাল জানেন। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সঞ্চারে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। যেমন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, সেমিনারে, বক্তৃতায়, বিবৃতিতে, লেখালেখির মাধ্যমে তারা তাদের ত্যাগের কথা, হানাদারদের শোষণের কথা তুলে ধরতে পারেন। তাহলে নতুন প্রজন্ম একদিকে যেমন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানবে, তেমনি উপলব্ধি করবে স্বাধীনতার জন্যে সেসময়ে বাঙালীরা সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ স্বীকার করেছিল। এই বিষয়টি যখনই কোন তরুণ উপলব্ধি করবে, তখন তার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অমোচনীয়ভাবে সঞ্চারিত হবে।
আমার প্রিয় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান আজাদ বলেছেন- যেই সোনার বাংলাদেশ পাওয়ার জন্যে আমরা যুদ্ধ করেছি, সেই সোনার বাংলা গঠনের কাজ প্রায় শেষ হয়ে আসছে। আগামী দশ-পনেরো বছরের মধ্যেই আমরা সোনার বাংলায় বসবাস করব। আমরা আমাদের সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে শান্তি ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাব। বাংলাদেশ এখন সর্বক্ষেত্রে ভাল করছে। অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই এখন বাংলাদেশ ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির ছোঁয়া আমাদের আরও দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মানুষ এখন ঘরে বসে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে। খাদ্যের নিশ্চয়তা পাচ্ছে। বাংলাদেশের তরুণরা বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এসব বিষয়গুলো আমাকে আপ্লুত করে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমাদের বাংলাদেশ। আর তরুণ তরুণীরাই এ দেশের প্রাণশক্তি। তারা স্বাধীনতার ধারক ও বাহক। তারা স্বাধীনতার চেতনা যেমন সঞ্চার করবে, তেমনি অন্যদের মাঝে সঞ্চারিতও করবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হলেই সোনার বাংলা গড়া সম্ভব হবে। সেই সাথে তারুণ্যের রাজনীতিকদেকে রাখতে হবে ভূমিকা আলোর পথে, ভালোর পথে।
ভালোবাসাময় মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার তাৎপর্যে যুদ্ধ থেকে তরুণদের শেখার জন্য, জানার জন্য ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করতে হয়। এর কিছু কিছু ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রাক্কালের, আবার গোটা ৯ মাসের শুরু থেকে বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন ঘটনার বিশেষত্ব রয়েছে। যেমন- ২৫ মার্চের আগে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর রেসকোর্সের ঐতিহাসিক ভাষণ। এটি একটি মাইলফলক ঘটনা। তবে এর আগেও অনেকগুলো ঘটনা ৭ মার্চ এসে যুক্ত হয়। আবার ৭ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী মানুষের অংশগ্রহণ সক্রিয় হয়ে ওঠে, মুক্তিযুদ্ধের জন্য মানসিক প্রস্তুতি ও অস্ত্রশস্ত্রের প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর্ব চলতে থাকে, বঙ্গবন্ধু এবং ইয়াহিয়া-ভুট্টোসহ রাজনৈতিক নেতাদের বৈঠকের পর্ব এবং সর্বশেষ ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর আক্রমণ ও গণহত্যার শুরু থেকে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার পর্বটি মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী ছোট ছোট পর্বের অথচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য বহনকারী ইতিহাসের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে ২৬ মার্চ পরবর্তী সময়ে যে প্রতিরোধ জনগণের পক্ষ থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে শুরু হয় সেটি এপ্রিল মাসের ১০ তারিখ সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে একটি নতুন পর্বে উন্নীত হয়। আবার এই সরকারের শপথ নেয়ার মাধ্যমে ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সরকারের গ্রহণযোগ্যতা, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং নেতৃত্বদানের অঙ্গীকারের বিষয়টি একটি নতুন তাৎপর্য সৃষ্টি করেছিল- যা ২৬ মার্চ পরবর্তী সময়ে অসংগঠিত প্রতিরোধ ও যুদ্ধকে একটি বৈধ সরকারের নেতৃত্বে সুসংগঠিতভাবে পরিচালিত হওয়ার যাত্রা শুরু করে। সে কারণে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকে পরিপূর্ণতা দানের ক্ষেত্রে এপ্রিল মাসের ১০ ও ১৭ এপ্রিলের দুটি ঐতিহাসিক ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যের অধিকারী ছিল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনায় এই দুটি ঘটনাকে যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরতে হবে। তা হলেই ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পরিপূর্ণতা লাভের বিষয়গুলো নতুন প্রজন্মের কাছে স্পষ্ট হবে।
মনে রাখতে হবে বিন¤্র ভালোবাসায়-আলোআশায় যথেষ্ট সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ না হলে স্বাধীনতাকে রক্ষা করা যায় না। স্বাধীনতা রক্ষার জন্য স্বাধীনতাকে মর্যাদা দিতে হয় এবং থাকতে হয় সদা সতর্ক। তাই স্বাধীনতার মর্ম উপলব্ধি করে একে রক্ষা করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য মনে করা উচিত। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণের এই মৌল চেতনা সবাইকে অনুপ্রাণিত করুক এটাই মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রত্যাশা। পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর দীর্ঘ ১৯০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করে পাক-ভারত উপমহাদেশের জনগণ পেয়েছিল পাকিস্তান ও ভারত নামের দুইটি দেশ। পাকিস্তানিরা যখন বাঙালিদের নতুন করে শোষণ ও পরাধীনতার শৃঙ্খলে বেঁধে রাখার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, ঠিক তখনই শতাব্দীর মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভ্যুদয়ে বাঙালি জাতিকে মুক্তির মহামন্ত্রে উজ্জীবিত করে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে গেছেন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ছাপ্পান্নর সংবিধান প্রণয়নের আন্দোলন, আটান্নর মার্শাল ল'বিরোধী আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলন, ছেষট্টির বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফার আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পথ পেরিয়ে সত্তরের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন সবই বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের মাইলফলক। পাকিস্তানি শাসনামলে দীর্ঘ ১২ বছরেরও বেশি সময় কারাগারের অভ্যন্তরে থাকা, কয়েকবার ফাঁসির কাষ্ঠের মুখোমুখি, অসংখ্য মিথ্যা মামলায় অসংখ্যবার কারাবরণ করার পরও এ দেশের স্বাধিকার আন্দোলনে প্রেরণা দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার অপরিসীম সাহস, দৃঢ়চেতা মনোভাব ও আপসহীন নেতৃত্ব পরাধীন বাঙালি জাতিকে সংগ্রামী হওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছিল। সেই প্রেরণার হাত ধরে এগিয়ে যেতে চাই প্রতিদিন। দেখতে চাই দ্রব্যমূল্যও বাজার স্থিতিশীল, বাড়ি ও গাড়ি ভাড়ায় আইনের পরশ ও প্রয়োগ; গড়তে চাই বিদ্যুৎ-গ্যাস- তেল-এর দাম ভর্তুকি দিয়ে হলেও জনগনের উপকারে ব্যবহৃত; চাই বেকারত্ব-দুর্নীতি-ধর্ষণ-খুন-গুমমুক্ত বাংলাদেশ। উচ্চারণ করতে চাই- বিজয় বাংলাদেশ, বিজয় নতুনধারা...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি