দূর্যোগ সহনীয় বসতঘর নির্মানের বরাদ্দ পাওয়া ঘরের কাজ শুরু করেই বালু, রড, কাঠ দাবি করেন প্রকল্প চেয়ারম্যান। না দিলে কাজ বন্ধ রাখেন চেয়ারম্যান। বাধ্য হয়ে দুই এনজিও থেকে ৬৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে এসব সরবরাহ করেছি। নামে সরকারী ঘর, বাস্তবে এ ঘর পেতে প্রায় লাখ টাকা গুনতে হয়েছে তাদের। তালিকায় নাম নিতেও গুনতে হয়েছে ১৫হাজার টাকা ও শ্রমিকদের খাওয়ার দায়িত্বও নিতে হয়েছে দুস্থ সুবিধা ভোগীদের।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিনে গেলে এ প্রতিনিধির কাছে এভাবেই কথা গুলো বললেন দূর্যোগ সহনীয় বসতঘর নির্মানের সুবিধাভোগী আনোয়ার হোসেন বসুনিয়ার স্ত্রী মরিয়ম বেগম। মরিয়ম বেগম ছাড়াও দূর্যোগ সহনীয় বসতঘর নির্মানের আরো বিভিন্ন অভিযোগ উঠে আসে।
এ প্রকল্পের তালিকা প্রনায়নে আত্মীয়করন ও অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বসুনিয়া স্বপনের বিরুদ্ধে। এ তালিকায় চেয়ারম্যান তার আপন চাচা আনোয়ার হোসেন বসুনিয়া ও চাচি আফরোজা বেওয়ার নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যে আফরোজার বড় ছেলে একজন প্রকৌশলী। শুধু আত্মীয়করনই নয়, অবৈধ সুযোগও নিয়েছেন বলে সুবিধাভোগীরা দাবি করেন। সুবিধা ভোগীদের কাঠ, রড, বাঁশ ও বালু নিয়ে দূর্যোগ সহনীয় বসতঘর নির্মানের এই অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বসুনিয়া স্বপনের বিরুদ্ধে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয়রা জানান, বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ মন্ত্রনালয় দূর্যোগ প্রবন পরিবারের দুস্থদের দূর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মানের উদ্যোগ নেয়। এজন্য দুস্থ ও অসহায় ভুমিহীন (যার ১০শতাংশের নিচে জমি) পরিবার থেকে সুবিধাভোগী নির্বাচন করা হয়। সুবিধাভোগিদের তালিকা প্রনায়নে ১৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার পর্যন্ত টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। তালিকায় স্বজনপ্রীতির অভিযোগও রয়েছে স্থানীয়দের।
সুবিধাভোগিদের জন্য সামনে বারান্দাসহ দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি ঘর, কড়িডোর, রান্নাঘর, টয়লেট নির্মানে বরাদ্ধ দেয়া হয় জনপ্রতি দুই লাখ ৫৮ হাজার ৫৩১টাকা। একজন সুবিধাভোগীকে একটি প্রকল্প ধরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ এটি বাস্তবায়ন করছেন। তদারকি করছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা(পিআইও)।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নি¤œমানের ইট দিয়ে করা হচ্ছে ঘর। বারান্দা ও কড়িডোরে ইটের পিলার দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে জিআই তারে তৈরী করা বাজারের নি¤œমানের সিঁড়ি। দরজা জানালায় দেয়া হচ্ছে আম কাঠ যা বেঁকে যাচ্ছে বলে সুবিধাভোগীদের অভিযোগ।
মহেন্দ্রনগর ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বসুনিয়া স্বপনের চাচা সুবিধাভোগী ধনজঞ্জয় গ্রামের আনোয়ার হোসেন বসুনিয়া বলেন, অন্যান্যের কাছে বেশি নিলেও আমার কাছে তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়ারম্যান ১৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। ঘর নির্মান শুরু হলে কাজের বালু, ভেটু বালু, রড, ছাউনির কাঠ, বাঁশ নিজেকে সরবরাহ করতে হয়েছে। এছাড়াও শ্রমিকদের দুই বেলা ভাত খাওয়াতে হয়েছে। সরকারী ভাবে শুধু ইট, টিন, সিমেন্ট ও শ্রমিক মজুরী সরবরাহ করা হয়েছে। এসব না দিলে কাজ বন্ধ রাখেন প্রকল্প চেয়ারম্যান ইউপি চেয়ারম্যান স্বপন।
একই গ্রামের অপর সুবিধাভোগী আফরোজা বেওয়া বলেন, আমার ছেলে বেসরকারী একটি ফার্মের প্রকৌশলী হলেও ঘরে নাম দিয়েছেন ভাতিজা ইউপি চেয়ারম্যান স্বপন। কড়িডোর ও বারান্দায় ইটের পিলার দিলে ভেঙ্গে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় বাজারের সিঁড়ি কিনে দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বসুনিয়া স্বপন বলেন, টাকার বিনিময়ে বা আত্মীয় করনে নয়, মানবতার পরিচয় দিতে নামগুলো দেয়া হয়েছে। কাজের অনিয়ম মনে হলে ইউএনওকে অভিযোগ করেন। যা করার তিনি করবেন।
সদর পিআইও'র দায়িত্বে থাকা আদিতমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা(পিআইও) মফিজুল ইসলাম বরেন, ভেটু বালু বা রড ইস্টিমেটে ধরা নেই, তাই সুবিধাভোগীদের কাছে নিতে পারে। তবে কাঠ, বাঁশ, কাজের বালু ও খাওয়ার খরচ নেয়া ঠিক হয়নি। সার্বিক বিষয়ে খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলী হায়দার বলেন, প্রথম পর্যয়ে ২৭৫ টি বরাদ্ধ এসেছে। যা কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও নতুন করে ৩৩০টি ঘর বরাদ্ধ এসেছে। সুবিধাভোগীদের কাছে কোন কিছু সরবরাহ নেয়া অন্যায়। ঘর নির্মানে সকল খরচ সরকার বহন করছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।