জেলার বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর গ্রামের কুয়েত প্রবাসী হাফেজ আবদুর রবের পরিবারের তিনজনকে হত্যার ঘটনায় জাকির হোসেন (৩৫) নামের এক গ্রাম্য কবিরাজকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুর তিনটার দিকে ঘটনাস্থল থেকে তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়।
আটক জাকির হোসেন নলছিটি উপজেলার সিদ্ধকাঠী ইউনিয়নের উত্তর রাজপাশা গ্রামের চুন্নু হাওলাদারের পুত্র। এর আগে একইদিন সকালে ওই বাসা থেকে কুয়েত প্রবাসী আবদুর রবের মা মরিয়ম বেগম (৭০), খালাতো ভাই ইউসুফ হোসেন (২২) ও মেঝ বোন মমতাজ বেগমের জামাই অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক শফিকুল আলমের (৬০) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ এহসানউল্ল্যাহ, জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলামসহ র্যাব, পুলিশ, সিআইডি (পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনসহ (পিবিআই) আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট।
বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আবদুর রকিব আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, জাকির হোসেন কবিরাজি কাজে ওই বাড়িতে প্রায়ই আসতো। যার ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাতেও তিনি আসেন। পরে আবার চলে যান। তাই জাকিরকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বানারীপাড়া থানায় আনা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় শনিবার বিকেল পৌনে চারটা পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি।
জেলা পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বেশ কিছু আলামত উদ্ধার করেছে। যা তদন্তের স্বার্থে এখন আলোচনা করা যাবেনা। তবে দ্রুতই এ মামলার অগ্রগতি জানানো হবে। তিনি আরও জানান, নিহতদের পরিবারের স্বজনদের সাথে কথা বলে পুরো ঘটনা হত্যাকান্ড বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।
অপরদিকে শনিবার সকাল থেকে বাড়িটিকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি গ্রামবাসী অবস্থান করছে। তিনজনের একসাথে নিহতের ঘটনায় শোকাহত স্বজনসহ গ্রামবাসী। বাড়ির মালিক কুয়েত প্রবাসী হাফেজ আবদুর রবের স্ত্রী মিশরাত বেগম জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে রাতের খাবার খেয়ে তারা ঘুমিয়ে পরেন। ওইসময় ঘরে তিনিসহ তার দুই শিশু সন্তান নুরজাহান (৪), ইশফাত (৯), দেবর হারুন-অর রশিদের মেয়ে আছিয়া ওরফে আফিয়া, শাশুড়ি মরিয়ম বেগম, ননদ জামাতা শফিকুল আলম ও শাশুড়ির বোনের ছেলে (দেবর) ইউসুফ ছিলেন। এরপর ভোরে ফজরের আযানের পর আফিয়ার চিৎকারের শব্দে সবাই ঘুম থেকে ওঠেন। নিহত মরিয়ম বেগমের নাতনি আছিয়া ওরফে আফিয়া বলেন, ভোরে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য ঘুম থেকে উঠে দাদিকে ওঠানে যান। তখন দেখি দাদির রুমের বারান্দার দরজা খোলা এবং তার নিথর দেহ বারান্দায় পরে রয়েছে। এরপর চিৎকার দিলে বাড়ির সবাই আসেন কিন্তু ফুপা শফিকুল আলম ও চাচা ইউসুফকে দেখতে না পেয়ে তাদের খুজতে থাকি। তখন ঘরের অন্য একটি কক্ষে গিয়ে ফুপার লাশ দেখতে পাই। পরে চাচা ইউসুফকে খুজতে ছাদের দিক গেলে সেখানে দরজা খোলা পাই, তবে কারো দেখা মেলেনি। এরপর বাড়ির বাহিরে খোঁজা শুরু করলে চাচা ইউসুফকে পুকুরের ঘাটলায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় লাশ দেখতে পাই। ওই পরিবারের দাবি, ঘরের ভেতরের একটি আলমিরা থেকে কিছু অলংকার খোয়া গেছে।