বন্ড সুবিধায় বিদেশ থেকে আনা কাপড় ও সুতা খোলা বাজারে বিক্রি নিষিদ্ধ। কিন্তু খোলাবাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে বন্ড সুবিধায় আনা বিদেশী সুতা। সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও চোরাকারবারীরা তা অব্যাহত রাখতে ক্রমাগত বদলাচ্ছে কৌশল।
স্থানীয় মিলের লেবেলের আড়ালে বিক্রি হচ্ছে বিদেশি সুতা দেশব্যাপী সুতার বাজারগুলোতে বিদেশী ওসব সুতা বহনে কিংবা বিপণনকালে ব্যবহার করা হয় স্থানীয় বিভিন্ন মিলের লোগো সংবলিত বস্তা, ব্যাগ বা প্যাকেট। কিন্তু ব্যাগের ভেতরে থাকে বিদেশ থেকে আমদানি করা সুতা। ক্রেতা, বিক্রেতা এবং এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া এ অপকর্ম অন্যদের পক্ষে ধরা কঠিন। দীর্ঘদিন ধরে দেশব্যাপী এই কৌশলের মাধ্যমে বন্ডেড সুবিধায় আনা সুতা খোলা বাজারে বিক্রি হয়ে আসছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট ও শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তাদের বিশেষ অভিযানে এসব অপকৌশলের চিত্র বেরিয়ে আসছে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মত, এনবিআরের ভ্যাট ও শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তাদের বিশেষ অভিযানে সুতা বিক্রির অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু সিরাজগঞ্জে নানা কৌশলে বন্ড সুবিধায় আনা বিদেশী সুতা বিক্রির বিষয়গুলো উঠে এসেছে। অভিযানে বেশকিছু সুতা জব্দও করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ ছাড়াও সুতা বিক্রির অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু (মোকাম) নরসিংদীর বাবুরহাট, মাধবদী, নারায়ণগঞ্জ, পাবনাসহ কয়েকটি এলাকায় প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার বিকিকিনি হয়। এখন ওসব বাজারেও নজরদারি শুরু করেছে শুল্ক ও স্থানীয় ভ্যাট বিভাগ। কয়েকদিন আগেই সিরাজগঞ্জে এ ধরনের এক অভিযানে বিপুল পরিমাণ সুতা আটক হয়।
সূত্র জানায়, সুতার কোনো (সুতা যেখানে প্যাঁচানো থাকে) সাধারণ বস্তা, চটের ব্যাগ ও পলিথিনের ব্যাগের মাধ্যমে বহন করা হয়। ওসব বস্তায় স্থানীয় স্পিনিং মিলের নাম থাকে। সুতার চোরাকারবারিরা ওই ব্যাগের মধ্যেই বহন করে ট্যাগসহ বিদেশি সুতা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা সাধারণ কারো পক্ষে ওই অনিয়ম ধরা কার্যত অসম্ভব। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিদেশি ট্যাগও ছিঁড়ে ফেলা হয়। শুল্ক বিভাগের অভিজ্ঞ কর্মকর্তা ছাড়া এ অনিয়ম ধরা প্রায় অসম্ভব। আর এ সুযোগে বন্ডের সুতা বিক্রি অপকর্ম দেশজুড়েই চলছে। তবেএনবিআর দেশব্যাপী এ অভিযান জোরদার করলে এ অনিয়ম ও চোরাকারবারি বন্ধ করা সম্ভব হবে।
সূত্র আরো জানায়, স্থানীয় ররফতানিকারকদের বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় সক্ষম করে গড়ে তুলতে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল ও এক্সেসরিজ আমদানির সুযোগ দিয়েছে সরকার। তবে শর্ত হলো উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রফতানি করতে হবে। ওসব কাঁচামাল নির্দিষ্ট গুদামে রেখে পণ্য তৈরি করতে হয়, যা বন্ডেড ওয়্যারহাউজ নামে পরিচিত। একই কাঁচামাল ও এক্সেসরিজ স্থানীয় ব্যবহারের জন্য আমদানি করা হলে সর্বোচ্চ ৯৫ শতাংশ হারে শুল্ক-কর পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু রফতানিকারকদের একটি অংশ প্রয়োজনের চাইতে প্রাপ্যতা বেশি দেখিয়ে, সংশোধন করে কিংবা বন্ধ কারখানা রফতানির অনুমোদন দেখিয়ে সুতা ও কাপড় আমদানি কওে তা খোলাবাজারে বিক্রি করে দেয়। এতে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে স্থানীয় শিল্প অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছে। তাছাড়া কিছু স্থানীয় তাঁত সমিতিকেও সরকার রেয়াতি হারে সুতা আমদানির সুযোগ করে দেয়া হয়। েেক্ষত্রে আমদানিকৃত সুতার শুল্কহার মাত্র ৫ শতাংশ। প্রান্তিক পর্যায়ের তাঁতিদের সহায়তায় সরকারের দেয়া এ সুবিধারও অপব্যবহার হয়ে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, অনিয়মের মাধ্যমে নাম সর্বস্ব তাঁতি সমিতি বানিয়ে কিংবা তাঁতি সমিতিকে দেখিয়ে তাঁত বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে আমদানিকৃত সুতাও অনিয়মের মাধ্যমে খোলাবাজারে চলে যায়। আবার কেউ কেউ মিথ্যা ঘোষণায় দামি সুতাকে কমদামি ঘোষণা দিয়ে আমদানি করে। ওসব সুতার একটি বড় অংশও খোলাবাজারে কিংবা অবৈধ পন্থায় হাতবদল হয়। ফলে কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রকৃত শিল্পোদ্যোক্তারা।
এদিকে সিরাজগঞ্জে সুতা আটকের অভিযানে নেতৃত্ব দানকারী ঢাকার কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট অফিসের সহকারী কমিশনর মো. আল আমিন জানান, অভিযানে বেশকিছু সুতা জব্দ করা হয়েছে। ওসব সুতার প্যাকেট স্থানীয় মিলের কিন্তু সুতা বিদেশি বলে পরীক্ষায় ধরা পড়েছে। ধারণা করছি, দেশের অন্যান্য বাজারেও একই প্রক্রিয়ায় অপকৌশলের মাধ্যমে বন্ড সুবিধায় আনা সুতা বিক্রি হচ্ছে।