লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কিসামত চন্দ্রপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের ছাঁদ ঢালাইয়ে অনিয়ম ঢাকতে প্লাষ্টার করা ভবন পরিদর্শন করলেন নির্বাহী প্রকৌশলী।
শনিবার(৭ ডিসেম্বর) বিকেলে বিদ্যালয়টির নব নির্মিত ভবন পরিদর্শন করেন লালমনিরহাট এলজিইডি'র নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ আলী খাঁন।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় ও স্থানীয়রা জানান, চাহিদা ভিত্তিক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে কিসামত চন্দ্রপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চার তলার ভিত্তির উপর দ্বিতল ভবনের ৫টি শ্রেণি কক্ষ নির্মানের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের প্রকৌশল বিভাগ। এজন্য দরপত্র আহবান করলে ৮৮ লাখ ১৩হাজার টাকা বরাদ্ধ হলেও ৮৩ লাখ ৭২ হাজার ৬১৭টাকা চুক্তিতে কাজটি পান উৎস এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। পরবর্তিতে কাজটি কমিশনে ক্রয় করে শাহজামাল নামে স্থানীয় একজন ঠিকাদার কাজটি করছেন বলে প্রকৌশলীরা জানান।
নির্মান কাজ শুরু থেকে নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে করা হচ্ছে বলে স্থানীয় অভিভাবকরা অভিযোগ করলেও কর্নপাত করেনি স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগ। বিশাল ভবন তৈরী করলেও নেই শিক্ষার্থীদের ওয়াশ রুম বা টয়লেট। নেই প্রতিবন্ধিদের উঠার সিঁড়ি। ভবনের সকল পিঁলার আঁকাবাঁকা হওয়ায় ঝুঁকিপুর্ন। ছাঁদ ঢালাই ৫ইঞ্চির দেয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে ৩/৪ ইঞ্চির ঢালাই দেয়া হয়েছে। পাতলা ঢালাই করায় তার রড বাহিরে দৃশ্যমান। প্রকৌশলীরা ছাড়াই দ্বিতীয় তলার ছাঁদ ঢালাই দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। ফলে দ্বিতীয় তলার শেষ কক্ষে ছাঁদে সাঁটিং ভাল না হওয়ায় ছাঁদ হয়েছে ঢেউ খেলানো তিন ইঞ্চির। ফলে ঢেউয়ের এ ফাঁকাস্থান তথা ৫ ইঞ্চি পুরনে দেয়া হয় নেটসহ দুই ইঞ্চির প্লাষ্টার। যা অল্প কিছু দিনের মধ্যে পলেস্টারা খুলে শিক্ষার্থীদের ক্ষয়ক্ষতির শ্বঙ্কা করছেন অভিভাবকরা।
স্থানীয় অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১ ডিসেম্বর 'বিদ্যালয়ের ভবনের ছাদ ঢালাইয়ে অনিয়ম ঢাকতে প্লাষ্টার!' শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এরপর নড়েচড়ে বসে স্থানীয় প্রকৌশল দফতর। যার প্রেক্ষিতে শনিবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেল বিদ্যালয়টির নব নির্মিত ভবন পরিদর্শনে আসেন লালমনিরহাট এলজিইডি'র নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ আলী খাঁন। এ সময় স্থানীয় অভিভাবকরা অনিয়মগুলো ঘুরে ঘুরে দেখিয়ে প্রতিকার দাবি করেন।
বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আব্দুল জলিল বলেন, ঢালাই কাজে অনিয়ম ঢাকতে প্লাষ্টার করার বিষয়টি ও বাঁকা পিঁলারসহ কাজের যাবতীয় অনিয়ম পরিদর্শনে আসা নির্বাহী প্রকৌশলীকে দেখানো হয়েছে। ত্রুটিপুর্ন এ কাজে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে তিনি প্রতিকার করার আশ্বাস দিয়েছেন।
পরিদর্শন শেষে লালমনিরহাট এলজিইডি'র নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ আলী খাঁন বলেন, ঢালাইয়ের নিচে কোন ভাবে প্লাষ্টার করা যাবে না। একটা অনিয়ম ঢাকতে আরো একটা অনিয়মের আলামত পাওয়া গেছে। এখন পলেস্টারা খুলে পড়ার সম্ভাবনা না থাকলেও আগামীতে সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি সরেজমিনে দেখেছি, ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে। তারা যা নির্দেশনা দিবেন সেই অনুযায়ী পরবর্তি কাজ করা হবে। এতে প্রকৌশলীদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে সেটাও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।