স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) গ্রামীণ ৩ লাখ ৫৪ হাজার কিলোমিটার সড়কের কাঠামো পুরোপুরি পরিবর্তন করতে যাচ্ছে। এমনকি প্রয়োজন ও চাহিদার কথা বিবেচনা করে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও নির্মিত হবে চার লেনের সড়ক। পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে দেশে নতুন যেসব গ্রামীণ সড়ক হবে, সেগুলো চার লেন করার পাশাপাশি বিটুমিনাস কার্পেটিং, বেস ও সাববেসেও পরিবর্তন আনা হবে। ওসব সড়ক করতে প্রয়োজনে এলজিইডি সরাসরি জমি অধিগ্রহণও করতে পারবে। আঁকাবাঁকা সড়ক পরিবর্তন করে সোজা করা হবে। আর বিদ্যমান যেসব সড়ক আছে এবং ভবিষ্যতে যেসব সড়ক নির্মিত হবে, সেসব ক্ষেত্রে নতুন নকশা বাস্তবায়িত হবে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা পর্যায়ে যেসব সড়ক রয়েছে, সেগুলোর দায়িত্ব সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ)। কিন্তু এলজিইডির দায়িত্বে উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ের সড়কগুলো। সারা দেশে বর্তমানে ৩ লাখ ৫৪ হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক রয়েছে। তার মধ্যে ৩৭ হাজার কিলোমিটার উপজেলায়, ৪২ হাজার কিলোমিটার ইউনিয়ন এবং ২ লাখ ৭৫ হাজার কিলোমিটার গ্রামের সড়ক। ওসব সড়কের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ পরিকল্পনা কমিশন থেকে জারি হওয়া গেজেট ‘সড়কের নকশা কাঠামো’ দিয়ে এতোদিন চলে আসছে। এখন ওই সড়কের নকশা কাঠামো হালনাগাদ করে নতুন প্রস্তাবনা তৈরি করেছে এলজিইডি। ইতিমধ্যে প্রস্তাবনাটির স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনও মিলেছে। সড়কের নকশা কাঠামো পরিকল্পনা কমিশন থেকে গেজেট হওয়ার অপেক্ষায়। গেজেট জারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন কাঠামো নিয়ে কাজ শুরু করবে এলজিইডি। যদিও ইতিমধ্যে মাঠ পর্যায়ে নতুন কাঠামোটি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে এবং ওই আলোকে নতুন করে সড়কের নকশা তৈরি করতে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, গ্রাম পর্যায়ে এতোদিন যেসব সড়ক নির্মাণ করা হয়েছিল, সেগুলো ছিল সর্বনিম্ন ১০ ফুট চওড়া। ইউনিয়ন পর্যায়েরগুলো ছিল ১২ ফুট চওড়ার। আর উপজেলা পর্যায়ে সড়কগুলো নির্মাণ করা হয়েছে ১৮ ফুট চওড়া মধ্যে। এর বেশি চওড়া সড়ক এলজিইডি করতে পারে না। কিন্তু প্রস্তাবিত কাঠামোতে ১০ ফুটের সড়ক রাখা হয়নি। অর্থাৎ নতুন নকশাটি পাস হওয়ার পর গ্রাম পর্যায়ে আর ১০ ফুটের সড়ক নির্মাণ করা হবে না। সর্বনিম্ন সড়ক হবে ১২ ফুট চওড়া। আর যানবাহনের সংখ্যা ও চাপের ওপর নির্ভর করে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে সড়ক হবে ১৮, ২০, ২২, ২৪ ও ৩৬ ফুট চওড়া। নতুন প্রস্তাবনা অনুযায়ী এলজিইডি চার লেন পর্যন্ত সড়কও করতে পারবে। যা এখন শুধুমাত্র সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর করতে পারে। নতুন নকশাটি পাস হলে এলজিইডিও শুধু প্রয়োজন ও চাহিদার ওপর ভিত্তি করে চার লেনের সড়ক বাস্তবায়ন করতে পারবে। একই সঙ্গে জলবায়ু সহিষ্ণু সড়কও নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে একটি সড়কের বেস (কার্পেটিংয়ের নিচের অংশ) হয় ১৫০ থেকে ২২৫ মিলিমিটারের মধ্যে, সাববেস (বেসের নিচের অংশ) হয় ১৫০ থেকে ৩০০ মিলিমিটারের মধ্য। নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে সড়কের বেস হবে ২০০ থেকে ২২৫ মিলিমিটার। সাববেস হবে ২০০ থেকে ২৭৫ মিলিমিটার।
সূত্র আরো জানায়, দেশে দ্রুত নগরায়ণ ঘটছে। গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। গ্রামে অর্থনৈতিক কর্মকা- বেড়েছে। গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ অনেক ইউনিয়নে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। নতুন নতুন স্থলবন্দরও হচ্ছে। কিন্তু গ্রামীণ সড়কগুলো ১০ ফুটেরই রয়ে গেছে। তাছাড়া গ্রাম পর্যায়ে অসংখ্য ইটভাটা রয়েছে। সেখানে ভারি যানবাহন যাচ্ছে। গ্রামীণ রাস্তা ওই ভার নিতে পারছে না। ফলে অল্প সময়ে রাস্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ওসব দিক বিবেচনা করেই সড়কের নকশা কাঠামো হালনাগাদ করা হয়েছে।
এদিকে বিগত ২০১৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলজিইডির আওতাভুক্ত সড়কের আকার, রাস্তার ভার নেয়ার ক্ষমতা বাস্তবতার নিরিখে পর্যালোচনা করে বিদ্যমান গাইডলাইন পুনর্গঠনের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশনার আলোকে পরের বছর সড়ক পুনর্গঠনের পাশাপাশি নকশা কাঠামো হালনাগাদ করার জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সঙ্গে এলজিইডি চুক্তি সই করে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে সড়কের নকশা কাঠামোটি তৈরি করেছে বুয়েট। সেটি যুক্তরাজ্যের ট্রান্সপোর্ট রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সব পক্ষের সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষ করে কাঠামোটি চূড়ান্ত করে এলজিইডি। সেটি এখন গেজেট জারির অপেক্ষায়।