‘আলোয় থাকার কথা যাদের
অন্ধকারে থাকেন
আলোয় ডাকার কথা যাদের
অন্ধকারে ডাকেন’
বাস্তবতা যখন এমন, তখন মনের ভেতর বিবেক হামার দিয়ে পেটায়। বলে যায় প্রতিনিয়ত- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা ঐতিহাসিক এবং ইতিহাস রচনার সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি চ্যালেঞ্জও বটে। প্রথম কথা হলো, বাংলার ঐতিহাসিকেরা এতোটা বিশাল এবং সম্পূর্ণ নতুন ঘটনাসম্পন্ন ইতিহাস রচনা এর আগে করেননি। এই ইতিহাস রচনার পদ্ধতি কি হবে সে ব্যাপারেও কোনো প্রখ্যাত পন্ডিত এখন পর্যন্ত কোনো গ্রহণযোগ্য দিক নির্দেশনা দেননি। অতএব এই ইতিহাস রচনায় কী প্যারাডাইম (ঢ়ধৎধফরমস) ব্যবহৃত হবে সে প্রশ্নও আছে। প্রচলিত প্যারাইডাইমশিফ্ট তো হতেই হবে। কিন্তু সেটা কোন ধরনের? এই ইতিহাস যথাযথভাবে তৃণমূল পর্যায় থেকে লিখতে হলে এবং এর অনন্য গ্রষ্টা কৃষক-সন্তান ও ব্রাত্যজনের ভূমিকাকে গুরুত্ব দিতে হলে ফিল্ডওয়ার্ক পদ্ধতিতে কাজ করতে হবে। ইতিহাসের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গবেষকেরা এ ধরনের কাজও আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত করেননি। সাধারণ মানুষের বীরত্ব, সাহসিকতা এবং জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করার অনন্য শৌর্যকে তুলে ধরতে হলে মাঠ পর্যায়ে বস্তুনিষ্ঠ অনুসন্ধান অতি জরুরী। সেই কাজ ঐতিহাসিকেরা যে করবেন সে-রকম প্রশিক্ষণওতো আমাদের ঐতিহাসিকদের নেই।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা ইতিহাস রচনার জন্য নানা বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছেন। কেউ বলছেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস লেখাই যথাযথ হবে। অনেকেই এই পদ্ধতিকে উপযুক্ত বলে বিবেচনা করেন না। তারা বলেন, এভাবে ইতিহাস লিখলে তাতে শুধু সামরিক বাহিনীর গুরুত্বই প্রাধান্য পাবে। তারা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন ২১টি জেলাকে ধরেই তৃণমূল পর্যায়ে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ এবং তার প্রামাণিকরণের ভিত্তিতেই ইতিহাস লেখা সমীচীন। এতে ঐতিহাসিকদের ইতিহাস রচনায়ও একটি নতুন চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ফিল্ডওয়ার্কভিত্তিক ইতিহাস তো হতেই হবে। তাছাড়াও রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা এবং বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে আটক থাকা সত্ত্বেও তিনি যে বাস্তবের প্রমাণসাইজের মানুষের চেয়েও বড় হয়ে উঠেছিলেন এবং হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির মুক্তি ও স্বাধীনতার এক অসাধারণ প্রতীক তাঁকেও যথাযথ মাত্রায় ধারণ করতে হবে। যুদ্ধ হয়েছে বহু স্তরে এবং বহু স্থানে। যুদ্ধ কোথাও সরাসরি, কোথাও পরোক্ষ, কোথাও গেরিলা পদ্ধতিতে। এই বিষয়গুলোকেও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মধ্যে আনতে হবে। এই যুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা, ভারত সরকারের ভূমিকা, শরণার্থী সমস্যা, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা বাংলাদেশে অবরুদ্ধ মানুষ পাকিস্তানে আটকেপড়া সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তিবর্গ, প্রবাসী বাঙালিদের বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পুলিশ, ইপিআর, সেনা, নৌ-কমান্ডো এবং নারীদের অবদানও চিহ্নিত করতে হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যে জনযুদ্ধ ছিল এ-সম্পর্কে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। গ্রামবাংলার কৃষক-ক্ষেতমজুর এবং ব্রাত্যজনের ভূমিকাই ছিল প্রধান। এদের অসংখ্য বীরত্বব্যঞ্জক ঘটনাকেও তুলে ধরতে হবে। আমরা আমাদের এই মুক্তিযুদ্ধকে ব্রাত্যজনের এবং সাধারণ মানুষের যুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করি। কৃষক-শ্রমিক- মেহনতি মানুষের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও ছিলো অনন্য ভূমিকা এই মাতৃকার স্বাধীনতাযুদ্ধে।
সেই দেশে আজ গৃহদাহে পুড়ছে। পুড়ছে তথাকথিত বড়দের দেয়া ষড়যন্ত্রের অনলে ছোট একাধিক রাজনৈতিক দল, অবশ্য সেই সকল দলের নেতারাই পরগাছা-পরনির্ভর। যে কারণে নেতৃত্বের বিরোধসহ অভ্যন্তরীণ সংকটের মুখে বেশ কয়েকটি দল ভাঙনের মুখে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে ভাগ হতে পারে আরও অনেক দল। সম্প্রতি দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি। সম্প্রতি দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, রাশেদ খান মেনন নিয়ন্ত্রিত ওর্য়াকার্স পার্টি, হাসানুল হক ইনু নিয়ন্ত্রিত জাসদও ভেঙ্গে ৩ টুকরো, বাসদ-এর মত চেষ্টা করে চলা দলটিও আজ ৫ টুকরো, ভেঙ্গেছে কর্ণেল অলী আহমেদ-এর এলডিপিও। তার উপর আছে সবারই কেন্দ্রীয় কংগ্রেসকে সামনে রেখে অভ্যন্তরীণ সংকট।
মতবিরোধের কারণে ইতিমধ্যে ভেঙে গেছে কর্নেল অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি। সংকট চলছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামেও। এছাড়া ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনসহ ছোট ছোট আরও কয়েকটি দলও ঘরের আগুনে পুড়ছে। যার আঁচ লেগেছে বড় দল বিএনপিতেও। ইতিমধ্যে বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা দল ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। দলটির কেউ কেউ রাজনীতি থেকেও বিদায় নেয়ার কথা জানিয়েছেন গণমাধ্যমকে।
তবে বিজয়ের মাসে সাহসের সাথে আমি মোমিন মেহেদী বলে দিতে চাই যে, জাতির কোন কাজে এই দলগুলো না আসায় আমজনতার সাড়া না পেয়ে পেয়ে অন্যের উপরনির্ভরতার রাজনৈতিক চেষ্টা করার কারণেই এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। তার সাথে আরো একটি বিষয় হলো- এদের মাঝে জারি জন্য কোনো ভাবনা নেই, নেই কোনো গণভিত্তি নেই। অনেক দলই এক নেতা বা এক ব্যক্তিনির্ভর এবং নামসর্বস্ব; আর ক্ষমতার ভাগিদার হবার বাজিকরী রাজনীতি। যে কারণে এরা জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এরা সক্রিয় হয়। মন্ত্রী-এমপি হওয়ার জন্য বড় দলের সঙ্গে জোট বাঁধার চেষ্টা করে। এতে কোনো কোনো দলের নেতা সফল হন। আবার অনেকেই ব্যর্থ হন। নির্বাচন শেষ, এদের কর্মকান্ডও শেষ। ছোট দলগুলোর নেতাদের আদর্শিক অবস্থান যতটা না, এর চেয়ে বেশি তাদের ব্যক্তিস্বার্থ। এই স্বার্থে আঘাত লাগলেই এরা একজন আরেকজনকে ছেড়ে যান, একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন। দল ভাঙেন, আলাদা দল গঠন করেন। এরা কখনোই জাতীয় রাজনীতিতে, এমনকি সামাজিক ক্ষেত্রেও প্রভাব বিস্তার করতে পারেন না। তাই দিন শেষে আবার ভোট এলে বড় দলের ছায়ায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। নেতৃত্বের দুর্বলতা এবং ব্যক্তিস্বার্থই মূলত দলগুলোর ভেতরে টানাপোড়েনের মূল কারণ। এই তো কয়দিন আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রথম সংকটে পড়ে রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টি। নিজের স্ত্রী লুৎফুন্নেসা খানকে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য করা, ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে রাশেদ খান মেননের নাম আসা নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। এছাড়া দলটির বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলে থাকা-না-থাকা নিয়ে কথা ওঠে। গঠনতন্ত্রের নিয়ম উপেক্ষা করে কংগ্রেসকে সামনে রেখে পার্টিতে নতুন সদস্য করাসহ নানা ইস্যুতে মতপার্থক্য দেখা দেয়। ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত পার্টির দশম কংগ্রেস ঘিরে এই নিজেদের মধ্যে দূরত্বের বিষয়টি প্রকাশ্য রূপ নেয়। কমিউনিস্ট আদর্শভিত্তিক দলের যে রাজনৈতিক চরিত্র থাকা উচিত, ওয়ার্কার্স পার্টি তা থেকে অনেক আগেই দূরে সরে গেছে। এমন দাবি করে পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পলিটব্যুরোর সদস্য বিমল বিশ্বাস দল ছাড়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। প্রাথমিক সদস্যপদসহ পার্টির সব জায়গা থেকে তিনি ইস্তফা দেন। বিমল বিশ্বাস ছাড়াও দলটির পলিটব্যুরোর দুই সদস্য নুরুল হাসান ও ইকবাল কবির জাহিদসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতা কংগ্রেস বর্জন করেন। বিক্ষুব্ধ এই অংশটি এখন আলাদা দল গঠনও করেছেন।
যদিও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলে বেরাচ্ছেন- যারা বলেছিল ওয়ার্কার্স পার্টি ভাঙছে, তাদের কথা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কংগ্রেসের পর ওয়ার্কার্স পার্টি আরও সুসংগঠিত ও শক্তিশালী হয়েছে।
বাস্তবতা হলো- ওয়ার্কার্স পার্টির পরপরই ভাঙনের মুখে পড়ে আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি। স্বাধীনতার পরপরই আওয়ামী লীগের বিপরীতে গড়ে ওঠা শক্তিশালী এই দলটি নানা সময়ে ভেঙেছে। বর্তমানে এর একটি অংশ আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলটি বিএনপির সঙ্গে মিলে সরকারবিরোধী জোট ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গঠন করে। আর এই জোট গঠনের দেড় বছরের মাথায় এসে ভাঙনের মুখে পড়েছে জেএসডি। মূলত দলীয় নীতি ও আদর্শ বিসর্জন দেয়া এবং বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ এনেই দলের শীর্ষ নেতারা দুই শিবিরে ভাগ হয়ে গেছেন। একদিকে সভাপতি আ স ম আবদুর রব, অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন। একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে দু’পক্ষই পাল্টাপাল্টি কেন্দ্রীয় কাউন্সিল আহ্বান করেছেন। মাঝে সমঝোতার একটি উদ্যোগ নেয়া হলেও তা ভেস্তে গেছে। এখন অপেক্ষা দলটির আরও একটি ব্র্যাকেটবন্দি হওয়ার। জেএসডি কি ভাঙনের মুখে- এমন প্রশ্নের জবাবে অবশ্য আবদুল মালেক গণমাধ্যমকে বলছেন- আমরা চাই আমাদের দল চলবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গঠনতন্ত্র মেনে। সেখানে ব্যক্তিতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র ও স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে আঁতাত থাকবে না। দল চলবে নেতাকর্মীদের মতের ভিত্তিতে। একটি অংশ জেএসডিকে ব্যক্তিস্বার্থে বিএনপি-জামায়াতের বি-টিম বানাতে চায়। আমরা তা হতে দিতে পারি না। তবে এ বিষয়ে দলটির সভাপতি আ স ম আবদুর রব কোনো মন্তব্য করেননি। সংকট চলছে স্বয়ং ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামেও। স্বেচ্ছাচারী কায়দায় দল পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ কারণে ভাঙনের মুখে গণফোরামও। ড. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে দলটির একটি অংশ গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকান্ড, ব্যক্তিস্বার্থে অগণতান্ত্রিক ও স্বেচ্ছাচারী কায়দায় দল পরিচালনার অভিযোগ এনেছে। এছাড়া দলের নীতি, আদর্শ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিসর্জন দিয়ে বিএনপি-জামায়াতসহ স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সঙ্গে ঐক্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে। গণফোরামের ছয় শীর্ষ নেতা তার বিরুদ্ধে লিখিতভাবে এসব অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। এই ছয় শীর্ষ নেতাই গণফোরামের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। ফোরামের একটিংঅংশ বলছে- ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে আমরা গণফোরাম প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। এ দল আমাদের হাতে গড়া। দলটির ক্ষতি হোক, আমরা তা চাই না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য- যে লক্ষ্য, নীতি, আদর্শ ও উদ্দেশ্য নিয়ে গণফোরামের জন্ম হয়েছিল, দলটি এখন সে জায়গায় নেই। ড. কামাল হোসেনসহ কয়েকজন সুবিধাভোগী নেতা গণফোরামকে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গী বানিয়ে ফেলেছেন। আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছি। দলের সভাপতিকে লিখিতভাবে আমাদের কথা জানিয়েছি। যদি তারা না শুধরান, তবে আমরা আমাদের মতো করে পথ চলব। আর খামোশ শিরোনাম হওয়া ড. কামাল হোসেন বলছেন- এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সমস্যা থাকলে আমরা আলোচনায় বসে তা সমাধান করব। এ নিয়ে বাইরে কথা বলা সমীচীন মনে করি না। একই পথের পথিক হয়ে ভাগ হয়েছে কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি। কর্নেল (অব.) অলি আহমদকে সভাপতি এবং ড. রেদোয়ান আহমেদকে মহাসচিব করে নতুন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা হয়। এই কমিটি থেকে বাদ পড়েন দলটির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম। তারপর থেকেই মূলত দলে ভাঙনের গুঞ্জন ওঠে। এরপরই তা চূড়ান্ত রূপ পায়। এদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবে এলডিপির পদবঞ্চিত নেতারা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অলি আহমেদ এবং রেদোয়ান আহমেদের বিপরীতে ৭ সদস্যের নতুন সমন্বয় কমিটি ঘোষণা দেয়। এলডিপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম এই কমিটি ঘোষণা করেন। আবদুল করিম আব্বাসীকে সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং শাহাদাত হোসেন সেলিমকে সদস্য সচিব করা হয়।
এত ছোট ছোট চেষ্টা যে, জাতির ক্রান্তিলগ্নে তারা ৫ টি লোক নিয়েও রাজপথে নামতে পারেন না। অথচ গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় টাকা ভাগাভাগি, ক্ষমতার অংশ নিতে গিয়ে অতি ব্যস্ত বিকল্প ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেছে। ছাইগুলো শুধু উড়ছে আওয়ামী সরাকারের সংসদে। বিজয়ের মাসে সাহসের সাথে বলতে চাই- এদের রাজনৈতিক ক্ষমতার টানাপোড়েনের কারণেই আজ বিজয় বিঘিœত। বিঘিœত আমাদের সমৃদ্ধ দেশ গড়ার চেষ্টাও। আজ তাই তারুণ্যের রাজনীতি উত্তরাধিকারের পার্থ-মাহী-তারেক-ববি বা জাঈমাতে না ঘুরে ঐকবদ্ধ হওয়ার আহবান মা-মাটি-মানবতার সন্তানদের সাথে। যাতে বাঁচে দেশ, ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ... বিজয় বাংলাদেশ...
ভালোবাসাময় মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার তাৎপর্যে যুদ্ধ থেকে তরুণদের শেখার জন্য, জানার জন্য ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করতে হয়। এর কিছু কিছু ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রাক্কালের, আবার গোটা ৯ মাসের শুরু থেকে বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন ঘটনার বিশেষত্ব রয়েছে। যেমন- ২৫ মার্চের আগে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর রেসকোর্সের ঐতিহাসিক ভাষণ। এটি একটি মাইলফলক ঘটনা। তবে এর আগেও অনেকগুলো ঘটনা ৭ মার্চ এসে যুক্ত হয়। আবার ৭ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী মানুষের অংশগ্রহণ সক্রিয় হয়ে ওঠে, মুক্তিযুদ্ধের জন্য মানসিক প্রস্তুতি ও অস্ত্রশস্ত্রের প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর্ব চলতে থাকে, বঙ্গবন্ধু এবং ইয়াহিয়া-ভুট্টোসহ রাজনৈতিক নেতাদের বৈঠকের পর্ব এবং সর্বশেষ ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর আক্রমণ ও গণহত্যার শুরু থেকে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার পর্বটি মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী ছোট ছোট পর্বের অথচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য বহনকারী ইতিহাসের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে ২৬ মার্চ পরবর্তী সময়ে যে প্রতিরোধ জনগণের পক্ষ থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে শুরু হয় সেটি এপ্রিল মাসের ১০ তারিখ সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে একটি নতুন পর্বে উন্নীত হয়। আবার এই সরকারের শপথ নেয়ার মাধ্যমে ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সরকারের গ্রহণযোগ্যতা, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং নেতৃত্বদানের অঙ্গীকারের বিষয়টি একটি নতুন তাৎপর্য সৃষ্টি করেছিল- যা ২৬ মার্চ পরবর্তী সময়ে অসংগঠিত প্রতিরোধ ও যুদ্ধকে একটি বৈধ সরকারের নেতৃত্বে সুসংগঠিতভাবে পরিচালিত হওয়ার যাত্রা শুরু করে। সে কারণে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকে পরিপূর্ণতা দানের ক্ষেত্রে এপ্রিল মাসের ১০ ও ১৭ এপ্রিলের দুটি ঐতিহাসিক ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যের অধিকারী ছিল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনায় এই দুটি ঘটনাকে যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরতে হবে। তা হলেই ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পরিপূর্ণতা লাভের বিষয়গুলো নতুন প্রজন্মের কাছে স্পষ্ট হবে।
মনে রাখতে হবে বিন¤্র ভালোবাসায়-আলোআশায় যথেষ্ট সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ না হলে স্বাধীনতাকে রক্ষা করা যায় না। স্বাধীনতা রক্ষার জন্য স্বাধীনতাকে মর্যাদা দিতে হয় এবং থাকতে হয় সদা সতর্ক। তাই স্বাধীনতার মর্ম উপলব্ধি করে একে রক্ষা করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য মনে করা উচিত। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণের এই মৌল চেতনা সবাইকে অনুপ্রাণিত করুক এটাই মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রত্যাশা। পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর দীর্ঘ ১৯০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করে পাক-ভারত উপমহাদেশের জনগণ পেয়েছিল পাকিস্তান ও ভারত নামের দুইটি দেশ। পাকিস্তানিরা যখন বাঙালিদের নতুন করে শোষণ ও পরাধীনতার শৃঙ্খলে বেঁধে রাখার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, ঠিক তখনই শতাব্দীর মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভ্যুদয়ে বাঙালি জাতিকে মুক্তির মহামন্ত্রে উজ্জীবিত করে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে গেছেন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ছাপ্পান্নর সংবিধান প্রণয়নের আন্দোলন, আটান্নর মার্শাল ল'বিরোধী আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলন, ছেষট্টির বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফার আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পথ পেরিয়ে সত্তরের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন সবই বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের মাইলফলক। পাকিস্তানি শাসনামলে দীর্ঘ ১২ বছরেরও বেশি সময় কারাগারের অভ্যন্তরে থাকা, কয়েকবার ফাঁসির কাষ্ঠের মুখোমুখি, অসংখ্য মিথ্যা মামলায় অসংখ্যবার কারাবরণ করার পরও এ দেশের স্বাধিকার আন্দোলনে প্রেরণা দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার অপরিসীম সাহস, দৃঢ়চেতা মনোভাব ও আপসহীন নেতৃত্ব পরাধীন বাঙালি জাতিকে সংগ্রামী হওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছিল। সেই প্রেরণার হাত ধরে এগিয়ে যেতে চাই প্রতিদিন। দেখতে চাই দ্রব্যমূল্যও বাজার স্থিতিশীল, বাড়ি ও গাড়ি ভাড়ায় আইনের পরশ ও প্রয়োগ; গড়তে চাই বিদ্যুৎ-গ্যাস- তেল-এর দাম ভর্তুকি দিয়ে হলেও জনগনের উপকারে ব্যবহৃত; চাই বেকারত্ব-দুর্নীতি-ধর্ষণ-খুন-গুমমুক্ত বাংলাদেশ। উচ্চারণ করতে চাই- বিজয় বাংলাদেশ, বিজয় নতুনধারা...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি