পরিবহন খাতে জ্বালানি তেল বিক্রি নিয়ে বিপাকে বিপিসি

এফএনএস এক্সক্লুসিভ: : | প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ০২:৫৯ এএম : | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ০৪:৩৬ এএম

দেশজুড়ে পরিবহন খাতে জ্বালানি তেল বিক্রি নিয়ে বিপাকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। মূলত দীর্ঘদিন ধরে নতুন পেট্রোল পাম্প ও ফিলিং স্টেশন স্থাপনে নিষেধাজ্ঞার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অথচ দেশব্যাপী শত শত কিলোমিটার বাইপাস সড়ক নির্মিত হয়েছে। সেগুলোর কোথাও পাম্প ও ফিলিং স্টেশন নেই। তাছাড়া অধিকাংশ হাইওয়ের মধ্যখানে ডিভাইডার হয়ে যাওয়ায় পাম্প স্টেশনের দূরত্বও অনেক বেড়ে গেছে। এক পাশের তেলবাহী গাড়ি অন্য পাশে যেতে পারছে না। তাছাড়া বিদ্যমান পাম্পগুলোর অনেকে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারণে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা অয়েল কোম্পানিগুলো জ্বালানি তেল বিক্রিতে বড় ধরনের বিপাকে পড়েছে। বিপিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিপিসির অধীনে বর্তমানে সারা দেশে ২ হাজার ১২১টি পেট্রোল পাম্প ও ফিলিং স্টেশন থাকলেও বিভিন্ন কারণে অনেকগুলোই বন্ধ রয়েছে। আর বিগত ২০১৬ সাল থেকে কার্যত বন্ধ রয়েছে পাম্প স্টেশন স্থাপনের অনুমোদন। সর্বশেষ ২৪ জুন জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে পেট্রোল পাম্প ও ফিলিং স্টেশন স্থাপনের অনুমোদন না দিতে মন্ত্রণালয় থেকে বিপিসিকে চিঠি দেয়া হয়। মূলত পেট্রোল পাম্প ও ফিলিং স্টেশনগুলোর মধ্যে অশুভ প্রতিযোগিতা, ভেজাল ও নিম্নমানের তেল বিক্রি, পরিমাণে কম দেয়া এবং অবৈধ পথে তেল সংগ্রহের প্রবণতার কারণেই নতুন করে পাম্প স্টেশন স্থাপনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। কারণ প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেও কার্যকরভাবে তেলে ভেজাল রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সূত্র জানায়, বর্তমানে সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় পেট্রোল পাম্প ও ফিলিং স্টেশন স্থাপনের জন্য যমুনা অয়েল কোম্পানির কাছে ৫শ’র বেশি আবেদন জমা পড়েছে। গত বছর যাচাই-বাছাই করে ১৬টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে এখনো সেগুলো স্থাপনে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না বিপিসি। একইভাবে পদ্মা ও মেঘনা অয়েল কোম্পানিও মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে পাম্প ও ফিলিং স্টেশন স্থাপন করতে পারছে না। অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে পেট্রোল পাম্প মালিকদের একটি সিন্ডিকেট নতুন পাম্প স্টেশনের অনুমোদন বন্ধ রাখার জন্য জ্বালানি বিভাগের একটি চক্রকে মাসিক মোটা অঙ্কের টাকা মাসোহারা দিয়ে আসছে। ওই কারণেই নীতিমালা থাকার পরও নানা কৌশলে দীর্ঘদিন ধরে নতুন ও আধুনিক পাম্প স্টেশন স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখা হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের আওতাধীন সারা দেশে ৭৬৩টি পেট্রোল পাম্প রয়েছে। তার মধ্যে ১২টি ছাড়া সবই ব্যক্তিমালিকানাধীন। বেশির ভাগ পেট্রোল পাম্প স্বল্প পরিসরে সর্বোচ্চ ৭ হাজার বর্গফুটের জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে, যা আধুনিক মানের নয়। ইতিমধ্যে অধিকাংশ জেলা শহরে যানজটের কারণে বাইপাস সড়ক নির্মিত হওয়ায় জেলা শহরের পুরনো অধিকাংশ পেট্রোল পাম্প রুগ্ন অবস্থায় পড়ে আছে। সেগুলো আধুনিকায়নের কোনো সম্ভাবনা নেই। অনেক ডিলার ভবিষ্যতে ব্যবসায়িক সম্ভাবনা না থাকায় ফিলিং স্টেশনগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে কিংবা সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করে মার্কেটে রূপান্তর করছে। আর মেঘনা পেট্রোলিয়াম বলছে, প্রতিবছর পেট্রোল বিক্রি ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ বাড়ে। একইভাবে অকটেন ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ, ডিজেল ১০ থেকে ১৫ শতাংশ, লুবঅয়েল ৫ থেকে ১০ শতাংশ বিক্রি বাড়ছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে অকটেন বিক্রি হয়েছিল ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৫৭ টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা বিক্রি বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৯৩০ টন। একইভাবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পেট্রোল বিক্রি হয়েছিল ১ লাখ ৩৮ হাজার ২২৪ টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সেটি বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার ৩৫৯ টন। তাছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ডিজেল বিক্রি হয়েছিল ৩৫ লাখ ৭৩ হাজার ২৩২ টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সেটি বেড়ে হয়েছে ৩৯ লাখ ৪২ হাজার ৭০৯ টন। কিন্তু এই দুই অর্থবছরে মেঘনা, যমুনা ও পদ্মা অয়েল কোম্পানিতে একটি নতুন পাম্প ও ফিলিং স্টেশন যোগ হয়নি। তাছাড়া ঢাকাণ্ডচট্টগ্রাম, ঢাকাণ্ডটাঙ্গাইল মহাসড়কসহ দেশের বিভিন্ন মহাসড়কের মধ্যখানে উঁচু সড়ক ডিভাইডার করে দেয়ায় এক পাশের চলমান যানবাহন বিপরীত পাশে অবস্থিত ফিলিং স্টেশন থেকে তেল নিতে পারছে না। এমন অবস্থায় দ্রুত পাম্প স্টেশন স্থাপনের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করলে তেল বিক্রিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এদিকে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, নতুন মডেল পেট্রোল পাম্প ও ফিলিং স্টেশন স্থাপনের জন্য খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। তাতে ২৫০ শতাংশ জমি, একটি পার্ক, শিশুদের জন্য খেলার মাঠ ও ফাইভ স্টার মানের ১০-১২টি রুমসহ একটি নকশা তৈরি করতে বলা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ- ২০১৫ সালে ২০১৪ সালের নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে, তারপরও নকশা বানানোর নামে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে।

অন্যদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল হক বিপিসির এক সভায় অভিযোগ করেছেন, নতুন নতুন পেট্রোল পাম্প ও ফিলিং স্টেশনের অনুমোদন দিলে বিদ্যমান পাম্পগুলোর বিক্রি কমে যাবে। এ কারণে মালিকদের মধ্যে অশুভ প্রতিযোগিতা তৈরি হতে পারে। মূলত এসব কারণে জ্বালানি বিভাগ থেকে নতুন পাম্প স্টেশন স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW