চার ভাইয়ের তিন ভাইয়েই লাল-সবুজের পতাকা বিক্রি পেশার সাথে জড়িত। তিনি লালমনিরহাটে, এক ভাই রংপুরে, এক ভাই দিনাজপুরে লাল-সবুজের পতাকা বিক্রি করেন এবং আরেক ভাই বাড়ির সামনে একটি পানের দোকান করেন। সেই দোকানেও তার সেই ভাই বিজয় মাসের পতাকাসহ বিভিন্ন রং বেরঙের ক্যাপ কপালে সাটানো সরঞ্জাম বিক্রি করেন। ১২ বছরের এই ব্যবসায় ভাল আয় রোজগারও হয় তাদের। অন্যান্য সময়ে তারা ক্যালেন্ডার ও বই ফেরি করে বিক্রি করেন। এভাবেই কথা গুলো বলছিলেন লাল-সবুজের ফেরিওয়ালা নুর ইসলাম (৬৩)।
নুর ইসলাম লালমনিরহাট জেলা শহরের শহীদ শাহজাহান কলোনী সংলগ্ন মুক্তিযোদ্ধা চত্বর এলাকার মৃত শহিদ রহমানের ছেলে। ৫ ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই সবার বড়।
ষাটর্ধো মোঃ নুর ইসলাম বলেন, যে পতাকায় জড়িয়ে আছে ১৮ কোটি মানুষের আবেগ সেটি আমাদের সবুজ জমিনে রক্তলাল সুর্য। আর এটিই আমাদের বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। এর সাথে জড়িয়ে আছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। এ ডিসেম্বও মাসেই যে বাঙালির মুক্তি ও বিজয়ের মাস। তাই ডিসেম্বর এলেই লাল-সবুজ পতাকা হাতে নিয়ে দেখা মেলে অসংখ্য শিশু-খিশোর, যুবক-বয়স্কদের। যারা রক্তিম সুর্য্য কাধেঁ নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বাংলার পথে পথে।
এ যেন বিজয়ের আনন্দ ক্ষনে ক্ষনে মনে করিয়ে দিতেই দেশের নানা পথে ঘাটে জাতীয় পতাকা হাতে বেরিয়ে পড়েন লাল-সবুজের ফেরিওয়ালা। শুধু ঢকা শহর রাজধানীই নয়, বিজয়ের মাস ডিসেম্বও এলেই গ্রাম থেকে শহওে চলে আসেন অসংখ্য তরুন-যুবক-বয়স্ক কাধেঁ লাল সবুজের পতাকা নিয়ে। বিক্রি করেন বাঙ্গালীর আবেগমাখা লাল-সবুজের পতাকা। আবার ডিসেম্বর মাস শেষ হতেই ফিরে যান আপন গ্রামে।
তাই নুর ইসলাম বলেন, নিজের চোখে দেশের বিজয় দেখতে পেরেছি। তাই বিজয়ের মাসে আমাদের লাল-সবুজের পতাকা বিক্রি করে খুবি আনন্দ পাই। আবার ভাল উপার্জনও হয়। তার বিক্রি করা লাল-সবুজের পতাকা কেউ উড়িয়ে গেলেই গর্ভে তার বুকটা ভরে যায়। হেটে ফেরি করে এসব বিক্রি করতে তার খুব কষ্ট হয়। আবার গর্বও হয় দেশের পতাকা বিক্রি করতে পেরে।
শুধু লালমনিরহাট জেলা শহরেই নয়, বিজয়ের মাস ডিসেম্বর এলেই ১২ ফুটের একটি বাশেঁর সাটানো লাল-সবুজের অনেক গুলো পতাকা নিয়ে বের হন নুর ইসলাম। তিনি জানান, ফেব্রুয়ারী, মার্চ ও ডিসেম্বর এবং বাংলা বৈশাখ মাস এলেই পতাকা হাতে বেড়িয়ে পড়েন নিজ জেলা লালমনিরহাট ছাড়াও রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা জেলা শহরের পথে প্রান্তরে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা ঘুরে পতাকা বিক্রি করেন। ২০, ৩০, ৫০, ১০০, ২০০, ৩০০, ৪০০ ও ৫০০ টাকা দামের বিভিন্ন পতাকা রয়েছে। তবে ছোট ২০ টাকা দামের পতাকাই বেশি বিক্রি হয় বলে তিনি জানান। একদিনে ৭০০ থেকে ৮০০ বিক্রি হয়। রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে একেবাওে ১০-১৫ হাজার টাকার পতাকা কিনে নিয়ে আসেন। জেলার প্রানকেন্দ্র মিশনমোড় এলাকাতেই তিনি বেশি পতাকা বিক্রি করেন।
আরেক বিক্রেতা শাহ জামাল বলেন, এই ডিসেম্বর মাসেই আমরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের পরাস্ত করে বিজয়ী হয়েছি। এজন্য এই বিজয়ের মাস ডিসেম্বর এলই দেশের মানুষের মনে অন্য রকম এক আবেগ কাজ করে। তাই ডিসেম্বর মাস এলেই গ্রাম থেকে শহরে পতাকা কিবক্রি করতে চলে আিিস। দেশের পতাকা বিক্রি করতে তার ভালই লাগে। সব ধরনের সব পেশার মানুষই পতাকা কিনেন, রোজগারো ভাল হয়। তবে ডিসেম্বর শেষ হতেই আবার গ্রামে গিয়ে দৈনিক হাজিরার কৃষি কাজ করেন।
বিজয়ের মাস এলেই শহরের অলি গলিতে দেখা মেলে পতাকা বিক্রেতাদের। জেলা শহরের বিডিআর রেল গেটে গেলেই দেখা মেলে ১২ বছরের এক শিশু ফাহিমের সাথে। বিভিন্ন অটো যাত্রীদের পতাকা কেনার জন্য অনুরোধ করেন ফাহিম। অনেক সময় অটো ছাড়াও বিভিন্ন গাড়ির চালকরাও পতাকা কিনেন।
লাল-সবুজ পতাকা ক্রেতা অটো চালক আমিনুল ইসলাম জানান, বিজয়ের মাস ডিসেম্বর পতাকা কিনে গাড়ির সামনে রাখি। এতে বেশ ভালই লাগে তার। তাছাড়া এসব সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিকট থেকে পতাকা কিনলে তাদেরও কিছুটা আয় রোজগার হয় বলে তাই দেশের লাল সবুজের পতাকা কিনি।
ট্রাক চালক শফিয়ার রহমান জানান, লাল-সবুজের পতাকা বিশে^ আমাদের বাংলাদেশের পরিচয় বহন করে। সেই অনুভুতি থেকেই বিজয়ের মাস ডিসেম্বর এলেই পতাকা কিনে গাড়ির সামনে রাখি।