পাবনার সুজানগরের রাজাকার মুক্ত এক গ্রামের নাম মানিকহাট। ১৯৭১সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভেই ওই গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ গ্রামটিকে রাজাকার মুক্ত ঘোষণা করেছিলেন।
মানিকহাট গ্রামের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক আলী শেখ জানান, দীর্ঘ ৯মাস মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে উপজেলার অধিকাংশ গ্রামে কম-বেশি পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকার ও আলবদর থাকলেও ওই গ্রামে ছিলনা। সে সময় গ্রামের প্রতিটি মানুষ ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। ফলে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট চালানোর উদ্দেশ্যে বারবার মানিকহাট গ্রামে আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করলেও মুক্তিযোদ্ধা এবং গ্রামবাসীর ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। একই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের মিয়া জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে স্বল্পসংখ্যক জনগোষ্ঠীর ওই গ্রাম থেকে প্রায় ২‘শ যুবক মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এদের মধ্যে কোবাদ হোসেন খান, আব্দুল বারী, জিলাল উদ্দিন মন্ডল, ইসহাক আলী শেখ, কাজী শাহজাহান আলী, কেতু খান, আব্দুর রহিম খান, আব্দুস সুবহান খান, আব্দুল মাজেদ মোল্লা, ইসহাক আলী প্রামাণিক, আফছার আলী মোল্লা, মকবুল হোসেন, তোরাপ আলী মন্ডল, আব্দুল মাজেদ শেখ, আব্দুল আজিজ সরদার, শামসুর রহমান, আব্দুল মাজেদ মোল্লা ও আব্দুল গনি মোল্লাসহ শতাধিক যুবক ভারত থেকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তারা প্রশিক্ষণ শেষে গ্রামে ফিরে সরাসরি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন আর গ্রামের প্রতিটি মানুষকে মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেন। গ্রামের সর্বস্তরের মানুষও তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে চরম প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ফলে পাকসেনারা উপজেলার সাতবাড়ীয়া, শ্যামনগর এবং নাজিরগঞ্জসহ বিভিন্ন গ্রামে হানা দিয়ে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট চালালেও মানিকহাট গ্রামে ঢুকতে পারেনি। সেই সঙ্গে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকার ও আলবদরেরও ওই গ্রামে ঠাঁই হয়নি।