বরগুনার আমতলীতে প্রেসক্লাবের উদ্যোগে মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে।
আমতলী মুক্তদিবস (১৪ ডিসেম্বর) পালন উপলক্ষে আমতলী প্রেসক্লাবের উদ্যোগে ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, এনএসএস, পিভিএ’র সহযোগীতায় সাকিব প্লাজা চত্বরে আমতলী উদীচী শিল্পগোষ্ঠীর শিল্পীদের পরিবেশনায় সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত ও আলোচনা সভার অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমতলী প্রেসক্লাবের সভাপতি দেওয়ান মস্তফা কবিরের সভাপতিত্বে প্রেসক্লাব সাধারন সম্পাদক আবু সাঈদ খোকনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন চাওড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আখতারুজ্জামান বাদল খান, আমতলী সরকারী কলেজের অবসরপ্রাপ্ত প্রভাষক মোঃ আনোয়ার হোসেন আকন,আমতলী পৌর নাগরিক ফোরামের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক মোঃ আবুল হোসেন বিশ্বাস, আমতলী উপজেলা নাগরিক ফোরামের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আ্যডভোকেট এম এ কাদের মিয়া, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আমতলী উপজেলার সাবেক কমান্ডার ও কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের দপ্তর সম্পাদক ও আমতলী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম শামসুদ্দিন সানু , আমতলী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ মজিবর রহমান, আমতলী পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ মতিয়ার রহমান, আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাঃ মনিরা পারভীন, আমতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ গোলাম সরোয়ার ফোরকান ও ৭১’এ আমতলী মুক্ত হওয়ার পর আমতলী থানার বেসরকারী অফিসার ইনচার্জ বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ নুরুল ইসলাম পাশা তালুকদার ।
মুক্ত দিবসের স্মৃতিচারন করতে গিয়ে বক্তারা বলেন- ১৪ ডিসেম্বর ৭১” এ বরগুনার আমতলী থানা হানাদার মুক্ত হয়েছিল।
১১ ডিসেম্বর বরগুনার বুকাবুনিয়া ক্যাস্প থেকে নৌকা যোগে হাবিলদার হাতেম আলী, আফাজ উদ্দিন বিশ্বাস ও মোয়াজ্জেম হোসেনের নেতৃত্বে দু’দল মুক্তিবাহিনী পঁচাকোড়ালিয়া হয়ে আড়পাঙ্গাশিয়া বাজারে আসে। ১২ ডিসেম্বর আফাজ উদ্দিন বিশ্বাস ও নুরুল ইসলাম পাশা তালুকদারের নেতৃত্বে একদল মুক্তি বাহিনী কুকুয়া শহীদ সোহরাওয়ার্দী মাধ্যমিক বিদ্যালয় পৌছেন। ওইখানে নিজাম তালুকদারের নেতৃত্বে অস্থায়ী ক্যাস্প করা হয়। ১৩ ডিসেম্বর সকালে তারা ওসি রইস উদ্দিন ভূইয়া আমতলী থানা মুক্তি বাহিনীর হাতে ছেড়ে দিতে রাজি হয়ে ক্যাম্পে তাদের মাধ্যমে একটি চিঠি পাঠায়। এদিকে ওসি রইস উদ্দিন ভুইয়ার সমঝোতা চিঠিটি ছিল পাতাফাঁদ । মুক্তিবাহিনী থানায় আসলে গুলি করে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ওসি’র এ পরিকল্পনা মুক্তিবাহিনী জেনে যায়। রাত আনুমানিক ৮ টার দিকে মুক্তি ও মুজিব বাহিনী যৌথ ভাবে “জয় বাংলা” শ্লোগান দিয়ে এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়লে জবাবে রইস উদ্দিন ও রাজাকার বাহিনী বর্ষার মত গুলি ছোঁড়ে। শুরু হয় যুদ্ধ। রাতভর গুলি বিনিময়ে এক নৌকার মাঝি শহীদ হয় (তার নাম পাওয়া যায়নি)। মুক্তিকামী জনতা দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত থেকে বিজয় মিছিল নিয়ে থানার দিকে আসতে থাকে এবং মুক্তিবাহিনী নদী পাড় হয়ে উত্তর প্রাপ্ত থেকে থানার দিকে অগ্রসর হয়। অবস্থার বেগতিক দেখে ওসি রইস উদ্দিন, পুলিশ ও রাজাকার বাহিনী সাদা পতাকা উত্তোলন করে আতœসমপর্নের আহবান জানান। ১৪ ডিসেম্বর সকাল ৮ টায় মুক্তি - মুজিব বাহিনী যৌথ ভাবে এবং জাগ্রতজনতা “ জয় বাংলা” শ্লোগান দিয়ে থানার প্রথম ফটকে প্রবেশ করে। এ সময় ওসি রইস উদ্দিন ভূইয়া ও তার বাহিনী অস্ত্র তুলে আতœসমর্পন করে। পরে আওয়ামী লীগ নেতা আফাজ উদ্দিন বিশ্বাস ও নুরুল ইসলাম পাশা তালুকদার ওসি রইস উদ্দিনসহ তার সহোযোগীদের আটক করে। মুক্তিযোদ্ধা আফাজ উদ্দিন বিশ্বাস আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং উপস্থিত জনতা জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আমতলী থানাকে মুক্তাঞ্চল ঘোষনা করা হয়।