মন আজ বড্ড আন্দোলিত। স্বাধীন দেশে আমার মায়ের ভাষায় কথা বলছি। আমার প্রাণের প্রিয় মাকে বুক ভরে ‘মা’ ডাকতে পারছি। এত মুক্তিযুদ্ধেরই অনন্য ফসল, বাঙালীর মুক্তিকামী মানুষের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের মহান বিজয়। মুক্তির স্বাদে তখন উন্মত্ত হয়ে গিয়েছিল বাঙালী জাতি। নিপীড়ন আর পরাধীনতা যখন চেপে বসেছিল ঘাড়ে, ঠিক তখনই বাঙালী জাতির জনক, স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর উদাত্ত্ব সংগ্রামী আহবান এদেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে শুধু স্বাধীনতার স্বাদ পেতেই অনুপ্রাণিত করেনি, অনুপ্রাণিত করেছিল দেশমাতৃকাকেও পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত করতে, পরদেশী শাসকের উদ্যত রক্তচক্ষুকে নিবৃত করতে, জীবন বাজি রাখতে। কিন্তু আমাদের এদেশীয় দোসররা ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সৈন্যরা নিরস্ত্র বাঙালীর উপর চালিয়েছে নির্মম হত্যাযজ্ঞ। নয় মাসের সেই রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে কত মায়ের কোল যে খালি হয়েছে, কত বোন যে হয়েছে মাতৃহারা, কত স্ত্রী তার প্রিয়তম স্বামীকে হারিয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। লুণ্ঠিত হয়েছে অনেক অসহায় মা-বোনের সম্ভ্রম। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা হত্যা করে দেশের কৃতী সন্তান, বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের। দুঃখ হয়, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও যখন সেই সব নরপশুদের হত্যার বিচারের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করতে দেশে চলে নানা অপতৎপরতা। চলে ধূ¤্রজাল তৈরির ব্যাপক পরিকল্পনা। কিন্তু এখনো যারা এ বিচারের বিরোধীতা করে, তারা কি একবারও চিন্তা করেন, এই নরপশু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখে যাবার আশায় এখনো অনেক স্ত্রী অপেক্ষার প্রহর গুণছে। কবে তার স্বামীর হত্যার বিচার হবে! অনেক সন্তান তাকিয়ে আছে কবে তার পিতার হত্যাকারীদের বিচার হবে। সবমিলিয়ে বিজয় হয়ত আমরা পেয়েছি। কিন্তু বিজয়ের কাঙ্খিত স্বাদ বা সুফল আমরা এখনো অর্জন করতে পারিনি। দেশে জনসংখ্যার আধিক্য, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাব, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, মূল্যবোধের অবক্ষয়, আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতার আধিপত্য, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি আমাদেরকে বড্ড বেশি আধুনিক করে দিয়েছে, এত বেশি আধুনিক করে দিয়েছে যে আমরা আমাদের নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে কুন্ঠাবোধ করি না, অমুক্তিযোদ্ধা হয়েও মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার বাসনাকে স্বার্থক করি অবলীলায়, এদিকে এখনো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা বয়সের ভারে ন্যুজ¦ হয়ে বহু কষ্টে জীবনযাপন করছে, তাকিয়ে আছে আমাদের একটু সহযোগিতা-সহানুভূতির আশায়! সে দিকে আমাদের অনেকেরই ভ্রুক্ষেপ নেই। তাই আজ মহান বিজয়ের দিনে আসুন, বিজয়ের সোনালী স্বপ্ন বাস্তবায়নে সকলে নিজের অবস্থান থেকে সকল বিভেদ ভুলে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্ম বিসর্জনকে স্বার্থক করতে দেশের জন্য কাজ করি। দেশমাতৃকাকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে নিজের সাধ্যমত চেষ্টা করি। বিজয়ের আনন্দ আমাদের সকলের মাঝে দেশের প্রতি মমত্ববোধকে আরো জাগ্রত করুক। জয় বাংলা।
সুমিত বণিক, উন্নয়নকর্মী ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদি