সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি, যুদ্ধকালীন সময় অস্ত্র বন্টনের দায়িত্ব পালন ও ভারতে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিংয়ে পাঠানো সহ মুক্তিযুদ্ধে সর্বাত্মক অংশ নিয়েও সনদ পাননি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের কুমারখালি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সুলতান আহম্মেদ।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষনের পরে ঝালকাঠির দপদপিয়া ইউনিয়নে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন মুক্তিযোদ্ধা সুলতান আহম্মেদ। তিনি ছিলেন এই সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন চান মিয়া। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে সুলতান আহম্মেদের দায়িত্ব পরে দপদপিয়া অস্ত্র বন্টনের। দপদপিয়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের পাশেই ছিলো প্রাইমারী স্কুল। এই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন সুলতান। সেই সুবাধে তিনি ইউনিয়ন পরিষদেও বসতেন। যুদ্ধকালীন সময় এই দপদপিয়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবনেই অস্ত্র আসতো। সেখান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে অস্ত্র বন্টন করতেন সুলতান আহম্মেদ। অস্ত্র আসার দিন তারিখ আগেই তাকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হতো। তিনি এই চিঠি পেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খবর পৌছে দিতেন। সুলতান আহম্মেদ জানান, বরিশাল ও আটগড় থেকে নৌকায় অস্ত্র আসতো এখানে। নৌকার উপরে থাকতো তরকারী ও সবজীর স্তুপ। নিচে থাকতো অস্ত্র। সুলতান আহম্মেদ এখান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে অস্ত্র বন্টন করতেন। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতে ট্রেনিয়য়েও পাঠাতেন তিনি। এই গ্রামের অনেককেই তিনি ভারতে পাঠিয়েছেন প্রশিক্ষনের জন্য। সুলতান আহম্মেদ জানান, কুমারখালির চৌদ্দপুড়িয়া গ্রামে রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের সমবেত করে সেখান থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য আমি ভারতে পাঠাতাম। এই এলাকার মুক্তিযোদ্ধা মতিন গাজী বলেন, আমিসহ আরো অনেককে সুলতান ভাই ভারতে পাঠিয়েছেন ট্রেনিংয়ের জন্য। সুলতান আহম্মেদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধা গৌরঙ্গ আমার কাছে অস্ত্র আসার খবর পৌছে দিত, আমি আবার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খবর পৌছে দিতাম।
তিনি বলেন আমি ক্যাপ্টেন ওমরের (শাহজাহান ওমর) তত্তাবধানে যুদ্ধে এ দায়িত্ব পালন করেছি। এছাড়া দপদপিয়ার আনোয়ার হোসেন, ভরতকাঠির দেলোয়ার হোসেন, গোয়ানকাঠির আবদুস সালাম, দুধলিয়ার শাহজাহান মোল্লা ও চান মিয়া, দপদফিয়ার আতাহার ও মোতালেব গাজী এবং কয়ারচরের লতিফ গাজী সহ আরো অনেকে আমার যুদ্ধকালীন সহকর্মী ছিলেন।
সুলতান আহম্মেদ বলেন, আমার অলসতার কারনেই আসলে আমি সনদ পাইনি। ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমর আমাকে বার বার সনদ নিয়ে রাখার জন্য বললেও আমি তখন বিষয়টিকে গুরুত্ব দেইনি। কিন্তু এখন ছেলে মেয়ের জন্য এই সনদ জরুরী হয়ে পড়ছে। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধ করলাম, তারতো একটা অফিসিয়াল ডকুমেন্ট থাকা দরকার। এখন আমার বয়স বেড়ে গেছে, ঠিকমত চলা ফেরা করতে পারিনা। এখন আমি সনদের জন্য আবেদন করবো। আমি আশা করি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়া দল আওয়ামীল সরকার আমার এই আবেদন মঞ্জুর করবেন।