মাঘের শীতে বাঘ কান্দে আমাদের রংপুর অঞ্চলের এ প্রবাদের প্রতিফলন ঘটেছে এবার মাঘে নয় পৌষে। পৌষের শুরুতেই নতুন করে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের মানুষ। বিশেষ করে শ্রমজীবিসহ নদীপাড়ের মানুষ পড়েছে আরো চরম দূর্ভোগে। প্রচন্ড শীতের কারণে তিন-চার দিন বাড়ী থেকে বের হতে না পারায় ক্ষেতমজুর পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। শীতের দাপটে হাট-বাজার, রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গোটা নীলফামারী জেলা। হিমালয়ের চারদিক দিয়ে অক্টোপাসের মত ধেঁয়ে আসছে শীতের সাঁড়াশি আক্রমন। পারদ নি¤œমূখী হওয়ায় রীতিমত শৈত্য প্রবাহ দিন দিন বেড়েই চলছে আর থরথরে কাঁপছে এ জেলার মানুষজন। শীতের এ দাপট আছে বেশ কয়েকদিন ধরে। আবহাওয়া অফিস বলছে এ দাপট আরও কয়েকদিন থাকতে পারে। সূর্যের মুখ দেখা না যাওয়ায় তাপমাত্রা নেমে এসেছে সকালে ১১ ডিগ্রি এবং দুপুরে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এ তথ্য আবহাওয়া অফিস সূত্রে। ফলে ঠান্ডায় মানুষের শরীরে হাঁড় কাঁপানো কাপুনি ধরেছে। এক মাস পূর্ব থেকে নীলফামারী জেলায় শীত শুরু হয়েছে। হঠাৎ করে চারদিন থেকে প্রচন্ড শীতের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। দিনের বেলায়ও শহরে প্রয়োজন ছাড়া কেউ আসছে না। বিকেল হলেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে শহর। শীত নিবারণে গরম কাপড়ের দোকানে ছুটছে ক্রেতারা। সৈয়দপুর উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ পুরাতন গরম কাপড়ের বাজার। এখান থেকেই পাইকাররা কাপড় নিয়ে যান পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁ, দিনাজপুর, ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, তারাগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায়। বর্তমানে সৈয়দপুর পাঁচমাথা মোড় হয়ে রেল স্টেশন পর্যন্ত রেল লাইনের ধারে গড়ে উঠেছে পুরাতন গরম কাপড়ের ব্যবসা। এদিকে হোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন একদিকে কাঁচা বাজারের মূল্য বৃদ্ধি অপরপাশে প্রচন্ড শীত দু’মিলে বিষিয়ে তুলেছে আমাদের ব্যবসা। কারণ ঠান্ডায় মানুষ বের হতে না পারায় আমাদের ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা গচ্ছা দিয়ে হোটেল শ্রমিকদের পারিশ্রমিক পরিশোধ করা হচ্ছে। প্রতিটি সবজির কেজি ৪০ টাকার উপরে হওয়ায় হোটেল ব্যবসা নিয়ে আমরা চরম বিপাকে পড়েছি। পেঁয়াজের কথা শুনলেতো মেজাজ ঠিক থাকে না। সব মিলিয়ে নীলফামারীর সৈয়দপুরে শীতের যন্ত্রনায় গরীব অসহায় মানুষের পাশাপাশি উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষরাও পড়েছে কাহিল হয়ে। বে-সরকারিভাবে কতিপয় প্রতিষ্ঠান শীত-বস্ত্র বিতরণ করলেও সরকারিভাবে চালু হয়নি শীতবস্ত্র বিতরণ। প্রচন্ড শীতের কারণে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।
সৈয়দপুরে জ¦ালানী কাঠের সংকট-দাম বৃদ্ধি
এফএনএস (ওবায়দুল ইসলাম; সৈয়দপুর, নীলফামারী) : সৈয়দপুর উপজেলার সর্বত্র বর্তমানে জ¦ালানি খড়ির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। আর এ সুযোগে এক শ্রেণির অসৎ মুনাফা লোভী জ¦ালানি খড়ি ব্যবসায়ী প্রতি মন ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত দামে বেশী নিচ্ছে। এরপরও ক্রেতা সাধারণকে দিচ্ছে ওজনে কম। অর্থাৎ ৩৫ কেজিতে তারা এক মন খড়ি ধরিয়ে দিচ্ছে ক্রেতা সাধরণকে। সরকারিভাবে ওজন হিসাবে কেজির ব্যবহার করার নিয়ম থাকলেও শহর ও গ্রামাঞ্চলের খড়ি ব্যবসায়ীরা কিন্তু সরকারের সে নিয়ম মানছে না। তারা ইট অথবা পাথর বসিয়ে মনগড়াভাবে দিব্বি ব্যবসা করে যাচ্ছে। ফলে একদিকে খড়ির মনে ১০ টাকা দাম বেশি অপরদিকে ওজনে কম। এ দু’দিক থেকে প্রতিদিন ক্রেতা সাধরণ প্রতারিত হচ্ছে। মজার ব্যাপার হলো অন্য কোনো মালামাল বাজার থেকে বাসায় নিয়ে এসে মাপা সম্ভব হলেও জ¦ালানি খড়ি গোলা থেকে ক্রয় করে বাসায় নিয়ে এসে তা মাপা সম্ভবপর নয়। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে জ¦ালানি খড়ি ব্যবসায়ীরা ওজনে কম দিয়ে যাচ্ছে ক্রেতা সাধারণকে। এ শহরে প্রায় ১ হাজার জ¦ালানি খড়ির গোলা রয়েছে। আর এ গোলাগুলোতে প্রতিনিয়ত জ¦ালানি খড়ি ক্রয় করতে গিয়ে ওজন ও দামে প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতা সাধারণ। কিন্তু এ ব্যাপারে প্রশাসন ও অন্য কোন কর্তৃপক্ষের যেন মাথা ব্যথা নেই। এ ব্যাপারে ক্রেতা মইনুল ইসলাম, মোল্লা, আজিজুল ইসলামসহ অনেকে এ প্রতিনিধিকে জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি জ¦ালানি খড়ির গোলাগুলোতে অভিযান চালানো হতো তাহলে হয়তো কিছুটা হলেও জ¦ালানি খড়ি ক্রেতাগণ এদের হাত থেকে রক্ষা পেত। এ ব্যাপারে খড়ি ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন বলেন বর্তমানে আমি খড়ি নিয়ে আসি নীলফামারী জেলার ডোমার, চিলাহাটী, ভাউলাগঞ্জ থেকে। বিক্রি করছি আমের খড়ি প্রতি মন ১৯০ টাকা, ইউক্লিড ১৮০ টাকা, নিম ১৮৫ টাকা, কাঁঠাল ১৯০ টাকা, মিশালি ১৭০ টাকা। আগে কম দামে খড়ি কিনেছিলাম তাই বিক্রির সময়ও ক্রেতাদের কাছ থেকে কম নেয়া হত। এখন খড়ির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা খড়ি সংকটে পড়েছি। তাছাড়া সবাই গাছ কাটতে অভ্যস্ত, লাগাতে নয়। ফলে গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় খড়ি সংকট দেখা দিয়েছে।