মহান ও নিবেদিত পেশা হিসেবে শিক্ষকতা সর্বজন স্বীকৃত। মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবেই মনে করা হয় শিক্ষকদের। পাঠদানে আত্ম-নিয়োগ, শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিহিত থাকা সুপ্ত মেধা জাগ্রত করা, দুঃস্থ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিজের অর্থ ব্যয়ে দেশ সেরা হিসেবে গড়ে তোলা শিক্ষকও দেশে বিরল নয়। এ জন্যই সমাজে শিক্ষকরা সবচেয়ে বেশি সম্মানিত, শিক্ষার্থীরাও যুগে যুগে স্মরণ রাখেন। বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির জন্য বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর। দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকযে সব এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তা জাতীয়করণ করা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের কোন ব্যাপারই নয়। এসব শিক্ষ প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের আওতায় আসলে সরকারের প্রায় ৬ শ কোটি টাকা থেকে ১ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। এ টাকা বিনিয়োগ করা বর্তমান সরকারের জন্য কোন অসম্ভব কিছুই নেই। আমি মনে করি সরকারের জন্য এ বিনিয়োগ হবে শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। এ বিনিয়োগে সরকারের প্রচুর লাভ হবে। দেশের জনগোষ্ঠীকে সম্পদে পরিণত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। পরিণত হবে উন্নত দেশে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা‘র নিকট সবিনয়ে আবেদন জানাতে চাই, আপনি উন্নত বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য আমরা শিক্ষক সমাজ আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনি শিক্ষকদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। সব প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছেন, মাদ্রাসার শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূর করেছেন, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত করার ব্যবস্থা করেছেন। আপনি পারবেন দেশের সব এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক- উচ্চমাধ্যমিকশিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুল কলেজ মাদ্রাসাকে জাতীয়করণ করতে। শিক্ষক সমাজ আপনার কাছে আজীবন ঋণী থাকবে। বলতে দ্বিধা নেই, আমাদের দেশে মানুষগড়ার কারিগরদের নিয়ে কারো যেন টেনশন নেই! এমপিওভুক্তগণ পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল, ও উৎসব ভাতা পান না। তারা পদোন্নতি, সেচ্ছাঅবসর, বদলি সুবিধাসহ অসংখ্য বঞ্চনার শিকার। এমপিওভুক্তগণ বৈশাখীভাতা ও বার্ষিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি সুবিধা পাচ্ছেন এজন্য চিরকাল কৃতজ্ঞ শিক্ষক সমাজ ! এমপিওভুক্ত কেউই পদমর্যাদা অনুযায়ী বাড়িভাড়া পান না। বরং বাড়ি ভাড়া পান ১০০০ টাকা, চিকিৎসাভাতা ৫০০ টাকা, যা নিতান্তই অপ্রতুল। একটি ‘জাতীয়লজ্জা’ বেসরকারি শিক্ষকবৃন্দই সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র পেশাজীবী যারা সিকিভাগ (২৫ শতাংশ) উৎসবভাতা পান। যা দিয়ে শিক্ষকদের আনন্দ উৎসব তো দূরের কথা ঠিকভাবে দিনটি পালন করতে পারেন না। ছেলে মেয়েদের নতুন পোশাক, কুরবানী, উন্নত খাবার তৈরী করা যেন অসম্ভব ব্যপারে হয়ে দাঁড়ায় শিক্ষক সমাজের কাছে। তার পরেও বোঝার উপর শাকের আঁটির মতো শিক্ষকদের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে আয় কর দেয়া। সোনালী ব্যাংক, জনতাসহ বিভিন্ন ব্যাংক কতৃপক্ষ আয় কর রির্টান জমা, টিন নম্বর ছাড়া মাসিক বেতন বিল জমা নিচ্ছেন না, সকল শিক্ষকগণ বেতন বন্ধের ভয়ে আয় কর প্রদান করেছেন রির্টান জমা দিয়েছেন। নতুন করে ৪ ভাগ কর্তন করছেন। যে শিক্ষক সমাজের নুন আন্তে পান্তা ফুরায় অবস্থা তাদের আবার আয় কর দিতে হবে কেন ? মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বিষয়টি একটু ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করাচ্ছি শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে। আপনি তো একদিন আন্দোলনরত শিক্ষক সমাজের নিকট বলেছিলেন আমি ও আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে শিক্ষক সমাজেকে আর আন্দোলন করতে হবে না। তারা ক্লাস রুম থেকে রাস্তায় আসতে হবে না। কিন্তু শিক্ষক সমাজ আন্দোলন করছেন রাস্তায় নেমেছেন, সাংবাদিক সন্মেলন করছেন, কর্মবিরোতী পালন করছেন। সরকার আসে সরকার যাই বেসরকারী শিক্ষক সমাজের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন নাহি হয়। অভিন্ন সিলেবাসে পাঠদানকারী শিক্ষকদের বেশিরভাগই বেসরকারি! এমন পটভূমিতে শিক্ষকসমাজের অন্যতম চাওয়া বিচ্ছিন্ন ও খ-িতভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের পরিবর্তে স্বচ্ছ, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে ‘এক ঘোষণায় সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ’। তথাকথিত ‘শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো’র কল্পনা বাদ দিয়ে যা আছে, যেমন আছে তাকে অব্যাহত রেখে ক্রমশ তার মানোন্নয়ন, ভিত্তি সুদৃঢ়করণ বেশি জরুরী। কেননা, ‘ঢেলে সাজানো’র কথা বলে শুধু ঢালা হয় সাজানো হয় না! অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, শিক্ষকদের প্রত্যাশা পূরণ না হবার জন্য দায়ী কেন্দ্রে শিক্ষক সংগঠনগুলোর দলীয় লেজুড়বৃত্তি। ফলে কোনো দাবির পেছনে যৌক্তিকতার চেয়ে বিবেচনায় থাকে দাবিটি কারা করেছে? সঙ্গে চলে আসে দু’ধরনের ব্যাখ্যা ও অবস্থান। তখন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবিগুলো হয়ে যায় রাজনৈতিক। তবে আশার কথা, বর্তমানে শিক্ষক সংগঠনগুলোর মধ্যে ‘এক ঘোষণায় সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ’ বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি প্রায় অভিন্ন। কেননা, ‘দল যার যার শিক্ষকস্বার্থে সব শিক্ষক একাকার’। শিক্ষকতার মহানব্রতের গর্বিত অংশীদার হিসেবে আমি ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে মনে করি, পেশাগত প্রাণের দাবি আদায়ে নেতিবাচক কর্মসূচি বা কোনো রূঢ় বাস্তবতার দিকে আমাদের নেতৃবৃন্দ যাবেন না বরং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তুলে শিক্ষা জাতীয়করণ করতে হবে। দেশের বেসরকারি স্কুল কলেজ মাদ্রসা জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। কেননা বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে অবশ্যই জাতীয়করণের আওতায় আনতে হবে। যদিও বর্তমান সরকার এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে স্কুল ও কলেজ জাতীয়করণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং ঘোষনাও হয়েছে। এক শ্রেণীর দালাল, চাঁদাবাজ জনপ্রতিনিধি হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা, বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, এ পর্যন্ত বহু স্কুল- কলেজ জাতীয়করণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। উপজেলা সদরে অবস্থিত এবং যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত সুবিধা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণে প্রাধান্য রাখা হয়েছে। এ রকম ঘোষণা রয়েছে সরকারের। কিন্তু এসব নিয়ম-নীতি শিক্ষার মান উন্নয়নে তেমন ফলপ্রসু হবে বলে মনে হয় না।। উন্নত রাষ্ট্র পরিণতকরণে দেশের সব এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করতে সরকারকে অত্যন্ত বাস্তবমূখী ও সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে মানুষের আয়-রোজগার। শিক্ষায় প্রবেশ করেছে সৃজনশীলতা। কিন্তু সরকারের একার পক্ষে এটি সম্ভব নয়। সকল মহলের সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণে সরকারের নিজস্ব কিছু মূল্যায়ন আছে এতে কোন সন্দেহ নেই। পাশাপাশি আমার কিছু পরামর্শ সরকারের বিবেচনার জন্য পেশ করলাম। বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির জন্য বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর। দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকযে সব এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তা জাতীয়করণ করা সরকারের কোন ব্যাপারই নয়। এসব শিক্ষ প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের আওতায় আসলে প্রতিবছর সরকারের প্রায় ৬ শ কোটি টাকা থেকে ১ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। এ টাকা বিনিয়োগ করা বর্তমান সরকারের জন্য সম্ভব। আমি মনে করি সরকারের জন্য এ বিনিয়োগ হবে শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। এ বিনিয়োগে সরকারের প্রচুর লাভ হবে। দেশের জনগোষ্ঠীকে সম্পদে পরিণত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। পরিণত হবে উন্নত দেশে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা‘র নিকট সবিনয়ে আবেদন জানাতে চাই, আপনি উন্নত বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য শিক্ষক সমাজ আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছেন। আপনি শিক্ষকদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। আপনি পারেন দেশের সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় করণ করতে। কেননা আপনি একসাথে দেশের ২৬ হাজার ১শ ৯৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয় করণ করেছেন এবং এসব শিক্ষ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগকৃত ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষকের চাকুরী সরকারী করা হয়েছে, প্রতি বছর জানুয়ারী মাসের প্রথম তারিখে বিনামূল্যে কোটি কোটি বই বিতরণ এবং প্রতিবছর ১ নভেম্বর জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষা, ১ ফেব্রুয়ারী এসএসসি ও সমমান এবং ১ এপ্রিল এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা গ্রহন করেন এবং ৬০দিনের মধ্যে ফলাফল ঘোষনা করা হচ্ছে যতে বেসরকারী শিক্ষক সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে। ডিজিটাল ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকেরা। যা ইতঃপূর্বে কোন সকার প্রধান করতে পারেননি। এত বড় সাহসী পদক্ষেপ গ্রহন করায় আপনাকে শিক্ষক সমাজ শুধু ধন্যবাদ জানান নি আপনার জন্য প্রতিনিয়ত আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছেন, আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছেন। আপনি পারবেন দেশের সব এমপিওভুক্ত স্কুল কলেজ মাদ্রসা জাতীয় করণ করতে লাখ লাখ পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফুটাতে। আর এ সাহসী কাজের জন্য শিক্ষক সমাজ আপনার কাছে আজীবন ঋণী থাকবে। আমাদের সবারই জানা আছে, শিক্ষাক্ষেত্রে সাংবিধানিক দায় হলো সবার সমান সুযোগ নিশ্চিতকরণ। অথচ পক্ষপাতদুষ্ট ও খ-িত জাতীয়করণের দোলাচালে চলছে অস্থিরতা। জাতীয়করণের দাবিতে কলেজ শিক্ষকের মৃত্যু, আদালতে রিট বা এমপিওভুক্তির জন্য অনশন কাম্য নয়। মানুষ গড়ার কারিগরদের এমপিওভুক্তির নামে দেওয়া হয় ‘অনুদান’। কাজেই, শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষকদের পেশাগত বঞ্চনার অবসানে দেশের সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ জরুরি। দুঃখজনক হলেও সত্য, শিক্ষকদের প্রত্যাশা পূরণ না হবার জন্য দায়ী কেন্দ্রে শিক্ষক সংগঠনগুলোর দলীয় লেজুড়বৃত্তি। ফলে কোনো দাবির পেছনে যৌক্তিকতার চেয়ে বিবেচনায় থাকে দাবিটি কারা করেছে? সঙ্গে চলে আসে দু’ধরনের ব্যাখ্যা ও অবস্থান। তখন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবিগুলো হয়ে যায় রাজনৈতিক। তবে আশার কথা, বর্তমানে শিক্ষক সংগঠনগুলোর মধ্যে ‘এক ঘোষণায় সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ’ বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি প্রায় অভিন্ন। কেননা, ‘দল যার যার শিক্ষকস্বার্থে সব শিক্ষক একাকার’। শিক্ষকতার মহানব্রতের গর্বিত অংশীদার হিসেবে আমি ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে মনে করি, পেশাগত প্রাণের দাবি আদায়ে নেতিবাচক কর্মসূচি বা কোনো রূঢ় বাস্তবতার দিকে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ যাবেন না বরং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তুলে শিক্ষা জাতীয়করণ করতে হবে। প্রধান মন্ত্রীকে শিক্ষা ক্ষেত্রে আর একটি সাহসী পদক্ষেপ গ্রহন করে হবে।
লেখক: প্রধান শিক্ষক ও সাংবাদিক