গত ৭ দিনের ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় বীজতলা ফ্যাকাসে রঙ ধারন করায় আসন্ন বোরো আবাদ নিয়ে বেশ শ্বঙ্কিত হয়ে পড়েছেন লালমনিরহাটের সাধারন কৃষক।
জানা গেছে, ভাল ফসল পেতে ভাল বীজ বা ভাল মানের চারা গাছের বিকল্প নেই। তাই বোরো চাষাবাদের জন্য বীজতলা তৈরী করে পরিচর্যা শুরু করেন চাষীরা। চারা গাছ একটু বড় হতে না হতেই টানা ৭ দিনের ঘন কুয়াশার কবলে পড়ে কৃষকদের বোরো বীজতলা। টানা কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় বোরো বীজতলার গাছ গুলো ফ্যাকাসে রং ধারন করেছে। শীতের তীব্রতায় বীজতলার অনেক চারা গাছ মরে যেতে শুরু করে।
গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া ঘন কুয়াশা চলে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। রোববার (২৩ ডিসেম্বর) টানা ৬ দিন পর সুর্যের দেখা মেলে সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের আকাশে। ফলে টানা ৭ দিনের ঘন কুয়াশায় প্রানিকুলের মতই বিপর্যস্থ নেমে আসে উদ্ভিদ জগতে।
আদিতমারী উপজেলার কিসামত চন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক খোশ মামুদ বলেন, নিজের ৩ দোন (২৭ শতাংশে দোন) জমিসহ বর্গা নেয়া ৫ দোন জমিতে বোরো ধান রোপন করতে উন্নত জাতের ১০ কেজি বীজের একটি বীজতলা তৈরী করেন। চারা গাছগুলো বেশ পুষ্ট হলেও গত সপ্তাহ ধরে টানা শীতে বীজতলা ফ্যাকাসে রং ধারন করেছে। অনেক চারাগাছ শীতের প্রকোপে মারা গেছে। ফলে ৮ দোন জমির জন্য চারা গাছ সংকট দেখা দিতে পারে। বীজতলার এ অবস্থায় করনীয় বিষয়ে পরামর্শ নিতে কৃষি বিভাগের কোন কর্মীর দেখা পাওয়া যায় না। তাই বোরো আবাদ নিয়ে অনেকটাই শ্বঙ্কিত কৃষক খোশ মামুদ। একই গ্রামের কৃষক ইয়াকুব আলী, নুরল হক ও আলম মিয়া জানান, তারা বোরো চাষাবাদের জন্য বীজতলা তৈরী করেছেন। কিন্তু প্রতিকুল আবহাওয়ার কারণে তাদের সেই বীজতলা প্রায় নষ্ট হতে বসেছে। ৬ দিন পর সোমবার সুর্যের দেখা মিলেছে। এতে যেটুকু রয়েছে সেটা রক্ষা করতে পারলে হয়তো পাতলা করে বোরো জমিতে চারা রোপন করা যাবে। কিন্তু বাকীটুকু নষ্ট হলেও চারাগাছের অভাবে বোরো চাষাবাদ ব্যাহত হতে পারে বলেও শ্বঙ্কিত তারা। ধানের দাম কম। এতে চারা গাছ অধিক দামে ক্রয় করে বোরো ধান চাষ করা প্রায় অসম্ভব বলেও দাবি করেন তারা।
একই অবস্থা জেলার ৫টি উপজেলার সকল বোরো চাষীর। এভাবে বীজতলা নষ্ট হলে বোরো চাষাবাদে চারা গাছের সংকট দেখা দিতে পারে। ফলে বোরো চাষাবাদে ক্ষতির মুখে পড়বে কৃষকরা। বীজতলার এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তোরনের আধুনিক উপায় জানেন না অনেক কৃষক।
অপর দিকে, কৃষি বিভাগের মাঠ-কর্মীদের মাঠে না যাওয়ার অভিযোগও কৃষকদের। ফলে আধুনিক এ যুগে আদিম যুগের চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরন করে মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চাষীরা। অফিসে বসে রিপোর্ট না করে মাঠে গিয়ে কৃষকদের খোঁজখবর নিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে কৃষি বিভাগের মাঠ-কর্মীদের প্রতি আহবান জানান কৃষকরা।
আদিতমারী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা আলী নূর রহমান বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে বীজতলায় কিছুটা সমস্যা হতে পারে। তবে ৬ দিন পরে হলেও সুর্যের দেখা মিলেছে। দুই চারদিন রোদ পেলে বোরো বীজতলায় বড় ধরনের কোন সমস্যা হবে না।
লালমনিরহাট কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ডিডি) বিধু ভূষন রায় বলেন, জেলার ৫টি উপজেলায় বোরো চাষাবাদের জন্য দুই হাজার ৫শত হেক্টর লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হলেও বীজতলা তৈরী হয়েছে দুই হাজার চারশত হেক্টর জমিতে। যা চলমান অবস্থায় রয়েছে।
শীত বা কুয়াশা থেকে বোরো বীজতলা রক্ষার জন্য পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখা অথবা বীজতলায় সেচ দিয়ে চারাগাছের পাতা ও ডগা থেকে কুয়াশার ঠান্ডা পানি ফেলে দিতে চাষীদের প্রতি পরামর্শ প্রদান করেন তিনি।