সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের অফুরন্ত রহমত, দয়া, কুদরত, নেয়ামত ও উছিলার শেষ নেই। এত কিছুর পরও আল্লাহকে ভুলে গিয়ে আমরা মন্ত্রী, এমপি, সরকারি কর্মকর্তা, আমলা ও অনেকের সাহায্য কামনা করে থাকি। তাদের পিছে হন্যে, হন্যে হয়ে ঘুরি। একবারও ভেবে দেখিনা আল্লাহর রহমত ছাড়া কিছুই হবে না। মনুষ্য সৃষ্টির সংবিধানের কোনো পদ পদবীকে মহামান্য বলে সম্বোধন করতে ভুল করিনা। ইহাই বাস্তবতা। যা অস্বীকার করার মোটেই কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু দুজাহানের মালিক আল্লাহ রাব্বুল আল আমীন, গাফুরুর রাহীম ও সর্বশক্তিমান আল্লাহকে যেন ভুলে থাকি। আল্লাহ কোনো কিছু ইচ্ছা বা এরাদা করলে কূনফায়াকূন অর্থাৎ হও, হইয়া যাও বলার আগেই তা হয়ে যায়। আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সূরা আর রাহমানে ঘোষণা করেছেন, ফাবি আইয়্যি আলা ইয়া রাব্বিকুমা তোকাজ্জিবান। অর্থাৎ আমার কোন নিয়ামতকে তুমি অস্বীকার করবে। তুমি জান না, অণু পরিমাণু পানির কণা থেকে আমি মানুষ সৃষ্টি করে থাকি। মরুভূমির অতি শুষ্ক বালু কণা থেকে মিষ্টি খেজুর খাওয়াই। যে পাখির আহারের কোনে স্টক বা ব্যবস্থা নেই আমি তাহার আহারের ব্যবস্থা করে থাকি। পশু-পাখি, জীবজন্তু ও মানুষ সৃষ্টির আগেই আমি তাদের রিজিকের ফয়সালা করেছি। চোখের পলকে বাদশাহকে ফকির ও ফকিরকে বাদশাহ করে থাকি। আমি যা জানি তোমরা তা জান না। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে আগুনে ফেলে দিলেও আগুনকে আমি ফুলের বিছানা বানিয়ে দিয়েছি। যে কারণে আগুন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর একটি লোমও স্পর্শ করতে পারেনি। বদরের যুদ্ধে আমি গায়েবী সাহায্য প্রদর্শন করেছি। তাতে কাফেরদের বিশাল সৈন্যবাহিনী অল্প কয়েকজন দীনের সৈন্য বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়ে বন্দী হয়। দিশেহারা হয়ে এদিক সেদিক ছুটে যায় এবং নির্মম পরাজয় বরণ করে থাকে। মক্কা জয় করতে আসা ৬০ হাজার আবরাহার বিশাল হস্তী বাহিনীকে ক্ষুদ্র আবাবিল পাখির মুখের কংকর নিক্ষেপে সমূলে ধ্বংস করে দেয়। যা কোরআনের ১০৫ নং সূরা ফিলে বর্ণিত আছে। এই যুদ্ধে রাজকুমারী হোমামা এবং স্বামী রাবাহ পরাজিত হয়ে কোরাইশদের দাসত্ব মেনে নেয়।
হযরত মুসা (আঃ) তাহার অনুসারীসহ নীলনদ পাড়ি দেয়ার সময় আল্লাহর কুদরতে নীল নদের পানি দুই ভাগ হয়ে যায়। মূসা (আঃ) তাহার অনুসারীসহ নীল নদ পার হয়ে গেলেও, ফেরাউন (রামেসিস) তাহার অনুসারীসহ নীল নদের দুই ধারের পানি চাপায় মৃত্যুবরণ করে থাকে। পাপিষ্ট নমরুদের নাকের মধ্য দিয়ে মশা ঢুকলে অস্থির হয়ে মাথায় আঘাত করতে করতে মারা যায়। কারুনের এত ধন সম্পদের পাহাড় থাকলেও অতিকষ্টে নিপতিত হয়ে মারা যায়। অত্যাচারী আবু জাহেল (আবু জাহেল্যিয়া) বাড়ীতে এখন হাজীসহ গণমানুষের প্রশ্রাব পায়খানার ব্যবস্থাপনা, এমন অসংখ্য উদাহরণ ও আল্লাহ রাব্বুল আল আমীনের সুবিশাল কুদরতের যেন সীমা পরিসীমা নেই। কথিত আছে সুদূর ইয়েমেন থেকে হযরত শাহজালাল (রাঃ) সহ ৩৬০ জন আউলিয়া বহু আগে পাক ভারত উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারে আসেন। তাদের মধ্যে খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি (র), বায়েজীদ বোস্তামী (র), খান জাহান আলী (র), শাহ মুখদুম (র), শাহ সুলতান (র), শাহ পরান (র)সহ আরও অনেকে। সেই সময় সাপ পূজা, সূর্য পূজা, অগ্নি পূজা, দেব দেবী দানব, ভূত, মূর্তি পূজাসহ আরও অনেক ধরণের উপাসনা করা হত। তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে সত্য ধর্ম ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা হয়। আজ ইসলাম ধর্মের সুমহান সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ইউরোপ, আমেরিকা, রাশিয়া ও ইহুদীরা দলে দলে ভুল বুঝতে পেরে ইসলামের পতাকা তলে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল্লাহ কালেমা পড়ে মুসলমান হচ্ছে।
কথিত আছে হযরত শাহজালাল (র) যখন তাহার সহকর্মী নিয়ে ইসলাম প্রচার করতে থাকেন সেই সময় সিলেটের ক্ষমতাধর রাজা গৌর গোবিন্দ বিশাল ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। সেই সময় হযরত শাহজালাল (র) গৌর গোবিন্দের বাড়ীর প্রাঙ্গনে আল্লাহু আকবর (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ) আযান দিতে থাকলে গৌর গোবিন্দের বিশাল ইমারত ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। এখনও এ নিদর্শন রয়েছে। যা এ নিবন্ধের সংক্ষিপ্ত কলামের কলেবরে লেখে শেষ করার মতো নয়।
১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পাক ভারত যুদ্ধ সংগঠিত হয়। সেই যুদ্ধে ভারতের প্রচুর রণ সম্ভার থাকলেও তাদের নির্মম পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। সেই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হুংকার দিয়ে বলেছিল, সকাল ১০টার মধ্যে পাকিস্তান জয় করে লাহোরের সালিমা গার্ডেনে চা খাবো। সেই যুদ্ধে অসংখ্য ভারতীয় সৈন্য বন্দী হয়। শুনা যায় তখন বন্দীদের মধ্যে অনেক ভারতীয় সৈন্য পাকিস্তানী সৈন্যদের কাছে বলেছিল, কেম কারান সেক্টরে তারা অসংখ্য সৈন্য ও মানুষ দেখেছে যারা মাথায় পাগড়ী পড়া অবস্থায় নারায়ে তাকবীর আল্লাহ আকবর ধ্বনি দিয়ে যুদ্ধ করেছে। আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে ভীত হয়ে রণসম্ভার ও এত সৈন্য থাকার পরও তারা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করে থাকে। অনেকেই ভয়ে ভীত হয়ে পাকিস্তানী সৈন্যদের নিকট আত্মসমর্পন করে থাকে। তাদের তখন পাকিস্তানের পক্ষে শুধু সৈন্য আর সৈন্য চোখে পড়েছে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে নীরিহ, নিরপরাধ কুলের শিশুদেরকেও নির্মমভাবে হানাদার বাহিনী হত্যা করে থাকে। সেই সময় অনেকেই তাদের বেয়নেট, গুলির কবল থেকে রক্ষা পেয়ে থাকে। মৃত্যুর সময় অনেকের আহাজারি, নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ধ্বনি শুনে হানাদাররা অস্ত্র ফেলে দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে জ্ঞান হারা হয়ে যাওয়ারও উদাহরণ রয়েছে। এমনকি প্রচুর রণসম্ভারসহ ৯৫ হাজার হানাদার বাহিনী ও নাটের গুরু ১৯৫ জন কুখ্যাত হানাদার বাহিনী নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পন করে থাকে।
এসব নিয়ে চিন্তা করলে আল্লাহর রহমত, কুদরত ও গায়েবী সাহায্যই প্রতিফলিত হয়ে থাকে। সেই যুদ্ধে যে যত সাহায্য সহযোগিতাই করুক না কেন নয় মাসে বাংলাদেশের বিজয় কোনো মতেই সম্ভব ছিল না বলে মোমিনদাররা বিশ্বাস করে থাকে। যা আল্লাহর তরফ থেকে হানাদারদের ওপর গায়েবী ও কুদরতি গজব হিসেবে পরিগণিত। আল্লাহ রাব্বুল আল আমীন, কুলাঙ্গার পাক হানাদার বাহিনীর নারী নির্যাতন, মানুষ হত্যাকে পছন্দ না করার কারণেই তাদের এ নির্মম পরিণতি। তা না হলে ৯৫ হাজার সৈন্য ও প্রচুর রণসম্ভার রেখেও হানাদারদের এমনিভাবে পরাজয় বরণ করার কথা ছিল না। আল্লাহ রাব্বুল আল আমীন কোনো ব্যাপারেই হতাশ না হয়ে ধৈর্য্য ধারণ করার কথা বলেছেন। তারপর বলেছেন, আমি যা জানি, তুমি তা জাননা। সীমা লংঘনকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেননি। আজ ভারতের কাশ্মীরের মুসলমান, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী মুসলমান, মিয়ানমারের রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলমান, চীনের উইঘুর মুসলমানদের ওপর যে নির্যাতন চলছে তাদের জন্য আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে বললে অত্যুক্তি হওয়ার কিছু না থাকারই কথা। নাছরুম মিনাল্লাহে ওয়াফাতহুন কারীব।
প্রসঙ্গক্রমে বলতে চাচ্ছি, এ বয়সে অহেতুক জিঘাংসার কারণে ও রাজনৈতিক কৃষ্ণকর্ম সাধকদের বেড়াজালে অনেক ষড়যন্ত্র, চক্রান্তের রোষানলে পড়েছি। যা ভাবতে গেলে অনেক সময় দিশেহারা হয়ে যাই। কিন্তু সেই সমস্ত বিপদ, আপদ, মৃত্যুর পথযাত্রী ও ঘৃন্য ষড়যন্ত্র থেকে আল্লাহর অসীম রহমতে মুক্তি পেয়েছি। যে রহমত, কুদরত ও গায়েবী সাহায্যের সীমা পরিসীমা নেই। যদি নিজের ব্যাপারে আল্লাহর রহমত, কুদরত, দয়া, উছিলা ও গায়েবী সাহায্য একটার পর একটা বর্ণনা করি তবে এ নিবন্ধে অন্য কিছু লেখার সুযোগ আদৌ না থাকারই কথা। যা বিশদভাবে বর্ণনা না করলেও, আল্লাহর রহমত, কুদরত ও ইচ্ছায় এতকিছুর পরও ভালোভাবে বেঁচে আছি। যে কারণে আল্লাহর রহমত ব্যতিরেখে পার্থিব জগতের কারও ক্ষমতাই আমলে আসতে চায় না। যা সবই ইবলিশ শয়তানের ধোঁকা। জঙ্গিবাদের ওপর চরম ঘৃনা। ওরা ইসলামের দোহাই দিয়ে মানুষ হত্যা করে থাকে। ওদের কোনো ধর্ম ও দর্শন নেই। যা কোনো মতেই ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলাম মানবতার ধর্ম। এখানে কোনো হিংসা, বিদ্বেষ, পরনিন্দা ও জোর জুলুমের স্থান নেই। ইহুদী নাসারাদের ষড়যন্ত্রে ওরা যা করছে, যে পথ বেঁচে নিয়েছে যা সম্পূর্ণ অন্ধকার ও গোমরাহির পথ। ইসলাম ও মুসলমানদিগকে বিধর্মীদের কাছে হেয় ও খাটো করে দেখানোর গভীর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র। স্পষ্ট বলা হয়েছে লা একরাফিদ্দিন। অর্থাৎ ধর্মে জোর জুলুম নেই। লাকুম দীনুকুম ওয়ালিয়া দীন। প্রত্যেকের জন্য নিজ নিজ ধর্ম। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম মানে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন। এখানে অন্য ধর্মের লোকদের অত্যাচার তো দূরের কথা, সামান্য তিরস্কার ও তাদের ধর্মের নিন্দা করারও লেশমাত্র সুযোগ নেই। এছাড়া পীর আউলিয়াদের কবরে বা মাজারে গিয়ে কোনো কিছু চাওয়া যা শিরক বা শেয়ারেরই নামান্তর। আল্লাহ ছাড়া কাহাকেও কোনো মৃত বা জিন্দা পীরের কোনো কিছু দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে আল্লাহর দরবারে যে কারও কিছু চাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আল্লাহ এক, সর্বশক্তিমান, দোজাহানের মালিক ও আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর প্রেরীত রাসুল।
এ প্রসঙ্গে কোরআন হাদীসের নির্দেশনা ও বুজর্গদের বয়ানের আলোকে সংক্ষিপ্তভাবে কিছু বর্ণনা করা হল। আল্লাহর সান্নিধ্যে বান্দার সম্পর্কের বিষয়টি নূরানি অন্তর ছাড়া উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। মানুষ যেমন প্রিয়জনের সঙ্গ ছাড়া একটি মুহুর্ত কাটাতে পারে না, তেমনি আল্লাহ তায়ালাও মোমিন বান্দার সঙ্গ ছাড়া একটি মুহুর্ত কাটাতে পারেন না। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তিনি (আল্লাহ) তোমাদের সঙ্গেই আছেন। তোমরা যা কিছু করছ আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন তার সব কিছুই দেখেন। কোনো বিষয়েই আল্লাহর নুরানি চোখকে ফাঁকি দেয়ার সুযোগ নেই (সূরা হাদিস- ৪)। আর আল্লাহ তায়ালা নবীদের মধ্য থেকে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে হাবিব (দোস্ত) বানিয়ে নিয়েছেন। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে খলিল বলে সম্বোধন করেছেন। আবার হযরত মূসা (আঃ) এর সঙ্গে কথা বলার জন্য তুর পাহাড়ে ডেকে নিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বান্দাদের এক মুহুর্তের জন্য চোখের আড়াল করতে চান না। তিনি বান্দার ডাকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। কখন কোন বান্দা কি চায়, আল্লাহ তা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে আমার কোনো বান্দা যখন আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, আপনি বলে দিবেন আমি (আল্লাহ) কাছেই আছি। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই যখন সে আমাকে ডাকে। তাই তাদেরও উচিত আমার ডাকে সাড়া দেয়া (সূরা বাকারা ১৮৬)। আল্লাহর চেয়ে বান্দার আপন আর কেউ নেই। সমগ্র সৃষ্টিই আল্লাহর পরিবারভূক্ত। আঠারো হাজার মাখলুকাতের মধ্যে কোনো অঞ্চলের মানুষ কী ধরণের খাবার খাবে, অন্য প্রাণীরা কি দিয়ে আহার করবে তিনি তা ভিন্নভাবে বন্টন করে দিয়েছেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, জমিনের ওপর বিচরণশীর এমন কোনো জাতি নেই যার জীবিকা পৌঁছানোর দায়িত্ব আল্লাহর ওপর নেই (সূরা হুদ- ৬)।
মানুষ দুনিয়াতে যেন বিপদে না পড়ে পরকালের কথা যেন মেনে চলে, প্রত্যেক জাতিকে হেদায়েত দিতে পথ প্রদর্শক বা মুর্শিদ দান করেছেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা যাকে হেদায়েত দান করেন সেই একমাত্র হেদায়েত প্রাপ্ত হয়। আর যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন সে কখনও পথ প্রদর্শনকারী ও অভিভাবক পেতে পারেন না (সূরা কাহাক- ১৭)। আল্লাহ তায়ালা গোনাহগারদের ক্ষমা করার জন্য প্রার্থনাকারী বান্দা খুঁজতে থাকেন। হযরত আবু মূসা আব্দুল্লাহ ইবনে কায়েস আশয়ারী (রাঃ) বর্ণিত হযরত রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালা পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় কিয়ামত না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতে তার ক্ষমার হাত প্রসারিত করতে থাকেন। যাতে দিনের গোনাহগার তাওবা করতে পারে। আর তিনি দিনে তার ক্ষমতার হাত প্রসারিত করতে থাকিবেন, যাতে রাতের গোনাহগার তাওবা করতে পারে (মুসনাদে আহমদ ৩২/১৯৫২৯)। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হযরত রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন, যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকি থাকে, তখন আমাদের প্রভু পরওয়ার দেগার দুনিয়ার কাছের আসমানে এসে বলতে থাকেন, ওগো কে আছ, যে আমার কাছে কিছু চাইবে। আমি তাকে দিয়ে দেব। ওগো কে আছ যে এ সময় আমার কাছে গোনাহ থেকে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো (বোখারি- ১১৪৫)।
যারা নিজের আত্মাকে কলুষিত করেছে, তাদের খোঁজ খবরও আল্লাহ তায়ালা রাখেন। আল্লাহর চেয়ে বড় দূরবীন ও অনুবীক্ষণ আর কোথাও নেই। আকাশে, বাতাসে, সাত সমুদ্রের নীচে কী হচ্ছে তাও তিনি জানেন। আল্লাহ তায়ালা অর্ন্তজামি। তিনি জানেন না এমন কিছুই নেই। তাদের ওপরও তিনি বৃষ্টি বর্ষন করেন। আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের তাঁর রহমত থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে আমার বান্দারা যারা নিজের প্রতি অবিচার করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না (সূরা আল ইমরান- ১৩৯)। যদি আমরা আমাদের কৃতকর্ম ও ভুলের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আল আমীনের কাছে তাওবা করি নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু জানেন। তিনি রহমত, কুদরত, ক্ষমা, উছিলা ও গায়েবী সাহায্যের (ঁহংববহ যবষঢ়) একচ্ছত্র অধিপতি। যার কোন শরীক বা অংশীদার দোজানে আর কেহ নেই। হাসবুনাল্লাহু ওয়ানিমাল ওয়াকিল অর্থাৎ আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।
দুনিয়ার কোনো রাজা, বাদশাহ ও ক্ষমতাধর কারও প্রতি নির্ভরশীল না হয়ে ধৈর্য্য ধারণ করে আল্লাহ রাব্বুল আল আমীনের প্রতি ঈমানী বিশ্বাস ও তাওয়াক্কুল রেখে চললে কারও কোনো প্রয়োজন হয় না। যাদের কারণে বা উছিলায় অনেক সময় বিপদ আপদ ও অনেক সমস্যার সমাধান হয় তাও আল্লাহর রহমতেই হয়ে থাকে। আল্লাহর রহমত না থাকলে কেহ উছিলা হয়ে আসতে পারে না। আমি জীবনে চরম বিপদে পড়ে যাদের আনুকূল্য, সহযোগিতা পেয়েছি তা চিন্তা করেও পাইনি। যাদের মধ্যে অনেককে আমি কোনদিন চিনতামও না। এমনকি তাদের সাথে আমার কোনো রাজনৈতিক ও সামাজিক সম্পর্কও ছিল না। আল্লাহ বলেছেন, যারা অবিশ্বাসী এবং পাপে আড়ষ্ট তাদের পায়ের পাতা থেকে মুখ মন্ডল পর্যন্ত মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। তাদেরকে হেদায়েত না করার জন্য বলা হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আল আমীন আমাদেরকে হেদায়েত করুন। সারা দুনিয়ার ক্ষমতার গর্বে উচ্ছসিত ও নিরীহ মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়া জালেমদের কাছ থেকে রক্ষা করুন।
এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট