গাজীপুরের কাপাসিয়ায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক ২৯ ডিসেম্বর রোববার বিকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন শেষে সন্তোষ প্রকাশ করে চলে যাবার কয়েক ঘন্টা মধ্যে রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া এক রোগির স্বজনরা হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হয়নি এমন অভিযোগে স্বজনদের হামলায় ডাক্তারসহ তিনজন আহত হয়েছে। এ সময় হাসপাতালে তারা ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছে। সোমবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুস সালাম সরকার বাদী হয়ে ৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত নামাদের বিরুদ্ধে কাপাসিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
লিখিত অভিযোগ ও রোগির স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত রোববার রাতে তরগাঁও পূর্ব পাড়া গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে রাফাত উল্লাহ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করলে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। এ সময় জরুরী বিভাগের ডাঃ গোলাম রসুল রোগীর লক্ষণ দেখে কিছু ওষুধ লিখে পাশর্^বর্তী দোকান থেকে কিনে আনতে বলেন এবং অন্য একজন রোগির পরে ইসিজি করতে হবে জানান। কিন্তু রোগির স্বজনরা কোন রকম অপেক্ষা না করে এবং কোনো ওষুধ খাওয়াতে আপত্তি জানিয়ে তাকে দ্রুত উপজেলা সদরের বেসরকারি শীতলক্ষ্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ইসিজি রুমে প্রবেশ করালে তার মৃত্যু হয়। এ সময় রোগির স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে ডাঃ গোলাম রসুলের উপর হামলা চালায়। হামলাকারীদের হাত থেকে ডাক্তারকে বাঁচাতে সহকারী নার্স মোঃ মাহাবুবুর রহমান ও নৈশ প্রহরী মোঃ আবুল কাশেম এগিয়ে এলে তাদের উপরও হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরে তারা হাসপাতালের চেয়ার, টেবিল, সিটিং চেয়ার, জানালার গ্লাস, রোগির বিছানা, বিপি মেশিন, ডাক্তারের মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য সরকারি সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ঘটনায় হসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ আব্দু সালাম সরকার জানান, এ রোগিকে যখন আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তখন অন্য একজন বয়স্ক রোগির ইসিজি করা হচ্ছিল এবং তার পরেই তাকে ইসিজি করা হবে বলে ডাক্তার নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। কিন্তু রোগির স্বজনরা সেইটুকু সময় না দিয়ে এবং ইনজেকশন পুশ করতে না দিয়েই রোগিকে নিয়ে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চলে যান। ফলে এ বিষয়ে আমাদের কিছুই করার ছিলনা। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
কাপাসিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। উল্লেখ, রোববার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সভাকক্ষে মাতৃমৃত্যু মুক্ত কাপাসিয়া মডেল ও সার্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক উপস্থাপনা ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমির সভাপতিত্বে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী আ খ ম মহিউল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান সহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ।