কুড়িগ্রামের উলিপুরে বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচনে নৌকার ভরাডুবি ঘটেছে। নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহন না থাকায় ভোটারের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় ভরাডুবির কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মিদের মাঝে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
গত সোমবার সকাল ৯টায় ভোট গ্রহন শুরু হলে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত চলে ভোট গ্রহন। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পুলিশ ও আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন ছিল। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিবি ও স্ট্রাইকিং ফোর্স সার্বক্ষণিক নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেন।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু তালেব সরকারকে বেসরকারীভাবে বিজয়ী ঘোষনা করা হয়েছে। তিনি অটোরিক্সা প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ১৭৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি¦ জাতীয় পার্টির সহিদুর রহমান (লাঙ্গল) পেয়েছেন,৩ হাজার ১২৯ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী মতিউর রহমান (ঘোড়া) পেয়েছেন ২হাজার ৬৮৮ ভোট, আওয়ামী লীগ মনোনীত আসাদুজ্জামান খন্দকার এরশাদ নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২ হাজার ৬৩০ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী ফেরদৌসী বেগম (চশমা) পেয়েছেন ১৯ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী সুলতানা রাজিয়া (আনারস) পেয়েছেন ৫৭ ভোট, ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইদুল ইসলাম (মোটরসাইকেল)পেয়েছেন ৪০০ ভোট।
ওই ইউনিয়নে মোট ২২ হাজার ৮৭১ ভোটারের মধ্যে ১৪ হাজার ২৯৮ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
নৌকার প্রার্থীর ভরাডুবির কারণ হিসেবে দলীয় নেতাকর্মিকেই দায়ী করে ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ সরকার বলেন, গত কয়েকদিন আগে এই ইউনিয়নের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউনিয়ন কমিটিতে যারা বাদ পড়েছেন তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে ইউনিয়ন সভাপতি ওহিদুর রহামানের নিরব ভূমিকা ছিল, ভোটের সময় তিনি বাহিরে ছিলেন। ভোটে আগের রাতে এলাকার এসেছেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতৃবৃন্দ নৌকার প্রার্থীর প্রতি অসন্তোষ থাকায় নৌকার প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে।
এ বিষয়ে বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহিদুর রহমান ভোটের সময় ব্যক্তিগত কাজে কয়েকদিন ঢাকায় থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, তৃণমূলের মতামতকে উপেক্ষা করে দলীয় প্রার্থী নির্বাচন করা হয়েছে। ফলে দলের ৭৫ শতাংশ নেতাকর্মি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু তালেব সরকারের পক্ষে জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দর মৌন সমর্থন থাকায় নৌকার ভরাডুবির কারণ হিসবেও উল্লেখ করেন তিনি।
তবে তফশিল ঘোষনার আগে আবু তালেব সরকারকে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়। কিন্তু গত ১৭ সেপ্টেম্বর আবু তালেব সরকার রংপুরে র্যাবের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হলে তার পরিবর্তে ওই ইউনিয়নের প্রয়াত চেয়ারম্যান একরামুল হক খন্দকারের পূত্র আসদুজ্জামান খন্দকার এরশাদকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনিত করা হয়।