বাড়ির বস্তা ভর্তি ধান নিয়ে নাড়া-চাড়া করতে পারেন, কিন্তু মেয়েকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে পারবেননা কেন ? আর এটা যদি না পারেন তাহলে এমন পঙ্গু মেয়েকে কিভাবে স্কুলে আনা-নেয়া করবেন ? ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার দিন হাত-পা ছাড়াই জন্ম নেয়া লিতুন জিরার সামনেই তার মায়ের সাথে এমন আচরন করেন যশোরের মনিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী। প্রধান শিক্ষকের এমন মানসিক আচরনে কষ্ট পেয়ে ভর্তি যুদ্ধে মেধা তালিকায় স্থান পেয়েও ভর্তি হয়নি মুখে ভর দিয়ে লিখে পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া লিতুন জিরা।
আর ভর্তি না হওয়ায় এসব তথ্য প্রকাশ্যে ফাঁস হয়ে আসে। অথচ শিক্ষানীতি ২০১০ বলা হয়েছে প্রতিবন্ধকতার কারনে কোন শিশুকে শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে রাখা যাবে না। শিক্ষানীতি ২০১৩-এর প্রারম্ভিব সংঘা ২(ঢ)-তে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর সম-সুযোগভিত্তিক শিক্ষা অধিকার ও অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। অথচ এর কোনটিই মানেননি প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী।
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার শেখ পাড়া খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে মুখে ভর দিয়ে লিখে পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জনকারি অদম্য মেধাবি লিতুন জিরা মনিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় মেধার স্বাক্ষর রাখে। সে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান করে।
লিতুন জিরার মা জাহানরা বেগম বাকরুদ্ধ কন্ঠে বলেন, গত ২৩ ডিসেম্বর মনিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনে আমার মেয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মেয়েকে নিয়ে উপরে উঠতে কষ্ট হবে বিধায় প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী স্যারকে নিচ তলার একটি কক্ষে লিতুন জিরার পরীক্ষা নেয়ার অনুরোধ করা হয়। এতেই প্রধান শিক্ষক তেলেবেগুনে ক্ষেপে উঠেন। এক পর্যায় লিতুন জিরা ও তার বাবার সামনে প্রধান শিক্ষক আমাকে বলেন, বাড়ির বস্তা ভর্তি ধান নিয়ে নাড়া চাড়া করতে পারলে প্রতিবন্ধী মেয়েকে (লিতুন জিরা) নিয়ে উপরে উঠতে সমস্যা কোথায়? আর এটা যদি না পারেন তাহলে পঙ্গু মেয়েকে কিভাবে স্কুলে আনা-নেয়া করবেন।
আপনার পঙ্গু মেয়ের জন্য আমি আলাদা কোন ব্যবস্থা করতে পারবো না। আর এই যদি না পারেন তাহলে মেয়েকে অন্যখানে ভর্তি করান। প্রধান শিক্ষকের এহেন আচরনে এ সময় অঝোরে কাঁদতে থাকেন লিতুন জিরা ও তার বাবা-মা। অবশেষে বেদনা দায়ক অবস্থায় হতবাক হয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে লিতুন জিরাকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করানো হয় এবং মেধা তালিকায় সে উত্তীর্ণ হয়। প্রধান শিক্ষকের আচরনে কষ্ট পেয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও কোনভাবেই মেয়ে ওখানে ভর্তি হতে রাজি হয়নি বলে পরিবার সূত্রে জানাযায়।
লিতুন জিরা জানায়, মেধাবি শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিযোগিতা করে নিজের মেধা যাচাইয়ে প্রবল ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু প্রথম থেকেই প্রধান শিক্ষক স্যার যদি এমন আচরন করেন। তাহলে শারিরীক অসুবিধা দেখে সহপাঠীরা কিভাবে তাকে মানিয়ে নিবে। লিতুনের বাবা হাবিবুর রহমান জানায, শুধু প্রধান শিক্ষকের খারাপ আচারনের কারনে মেয়ে ভর্তি হতে কোনভাবেই রাজি হয়নি।
প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কেন ভর্তি হলো না বুঝতে পারছি না। জেলা প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের কর্মকর্তা মুনা আফিরীন জানান, প্রধান শিক্ষকের এমন খারাপ আচরনের কথা লিতুন জিরার বাবা-মা তাকেও জানিয়েছেন। প্রধান শিক্ষকের এমন আচরন কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।