কালীগঞ্জের কবিরুস অষ্টম শ্রেনীর পর আর পড়া হয়নি করিরুস সোবহানের। পরিবারের হাল ধরতে কৃষি কাজ শুরু করেন তিনি। গতানুগতিক ফসল চাষে সফলতা আসছিল না তার। তখন তিনি ড্রাগন, পেয়ারা, ফুল, কুল, আমসহ ভিন্ন ফসলের চাষ শুরু করেন। এরপর তার ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে। ফল চাষ করেই বাড়ি করেছেন,কিনেছেন জমি। কৃষি কাজ করে সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। আর অন্যদের স্বপ্ন দেখান তিনি। কবিরের বয়স ৪৪ বছর বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর গ্রামে। প্রায় ২০ বছর আগে ফুল ও সবজি চাষ শুরু করেন তিনি।
কবির বলেন, ‘আত্মবিশ্বাস থাকলে যেকোনও কাজ করলে মুনাফা পাওয়া সম্ভব। সেই আত্মবিশ্বাস থেকে অল্প অল্প করে চাষের জমি বৃদ্ধি করতে থাকি। ২০১২ সালে ৫ বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষ শুরু করি। ভালো মুনাফা আসে। বর্তমানে ৮ বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষ করছি। স্থানীয় এক চাষির ড্রাগন চাষ দেখে ২০১৬ সালে এক বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করি। এখন প্রায় ৩ বিঘা জমিতে এ ফল চাষ করছি। ড্রাগন চাষে প্রথমবার অনেক টাকা খরচ হলেও অন্য যেকোনও ফসলের তুলনায় বেশ লাভ হয়।’ এছাড়া ৩ বিঘা জমিতে থাই আম ও ৫ বিঘা জমিতে বেল সুন্দরি জাতের কুল গাছ লাগিয়েছেন তিনি। ড্রাগন বাগানে কবিরুস ফল চাষ করেই তিনি ১০ বিঘা ফসলি জমি কিনেছেন। একটি দালান বাড়ি বানিয়েছেন।
কবির বলেন, পরিশ্রম করে আমি শুধু আমার নিজের অবস্থার পরিবর্তন করেছি তা নয়, আরও ১৪ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। শ্রমিকরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে বলে আজ আমি একজন সফল চাষি হয়েছি।’ কবিরের জমিতে কাজ করা শ্রমিক উত্তম বলেন, আমি ১২ বছর ধরে কবির ভাইয়ের ক্ষেতে কাজ করছি। আরেক শ্রমিক পরিতোষ জানান, তিনি ১৭ বছর ধরে কাজ করছেন। সফলতা ব্যাপারে কবির বলেন, ‘পরিকল্পিত ভাবে যদি কেউ কৃষি কাজ করে তবে তার উন্নতি হবেই। সঙ্গে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।’
ড্রাগন বাগানে কবিরুস তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন অনেক চাষি আমার কাছে ছুটে আসেন। তাদেরকে আমি আমার বাগান গুলো ঘুরিয়ে দেখাই। অভিজ্ঞতা তাদের সঙ্গে শেয়ার করি। আমি বলবো, যাদের মাঠে জায়গা জমি আছে তারা যেন বিভিন্ন ফলের গাছ লাগায় এবং যত্ন নেন। তাহলে দেখবেন এই চাষই একদিন আপনার ভাগ্যকে বদলে দিবে। আপনাকে করে তুলবে স্বাবলম্বী।’
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম জানান, কবিরুস সোবহান ড্রাগন, থাই আম, কুল, পেয়ারা চাষ করে অনেকটা স্বাবলম্বী। বাগান থেকে আয়ের টাকা দিয়ে সে ৬ বিঘা জমিও কিনেছে। চাষ করে এলাকায় সে সফল চাষী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে তাকে সব সময় সার্বিক সহযোগিতা করছি।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার জাহিদুল করিম বলেন, ‘কবিরুস একজন সফল ফল চাষি। আমি অনেকবার তার বাগান পরিদর্শন করেছি। সব সময় আমরা তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেই। তিনি অন্য চাষিদের জন্য অনুপ্রেরনা দায়ক।