টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে ১০ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমাকে ঘিরে চলছে শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতিমূলক কাজ। ইতোমধ্যে ময়দানের ৯৫ ভাগ কাজ হয়ে গেছে বলে ইজতেমা আয়োজক কমিটির দাবী। মহান আল্লাহকে রাজি-খুশি করাতে ঘণকুয়াশা ও কনকনে শীত উপেক্ষা করে স্বেচ্ছাসেবি মুসল্লিরা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আলমী শূরার তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত তিনদিনের ইজতেমাকে ঘিরে টঙ্গী ও আশপাশ এলাকায় ধর্মীয় উৎসব আমেজ বিরাজ করছে। আজ বুধবার বিকেল থেকে ইজতেমাকে কেন্দ্র করে টুপি-পাঞ্জাবী পড়া মুসল্লিদের আনাগোনা বেড়ে যাবে। প্রতিবছর ইজতেমায় ঢাকা জেলার সাথীরা সবার শেষে তাদের জন্য নির্ধারিত খিত্তার কাজ করে থাকেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে ঢাকা জেলার সাথীরাও তাদের জন্য নির্ধারিতস্থানে ছামিয়ানা তৈরির কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যেই তাদের ছামিয়ানা টানানোসহ সমস্ত কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন একাধিক সাথী। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যেই দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি ময়দানে এসে তাদের জন্য নির্ধারিত নিজ নিজ খিত্তায় অবস্থান নেবেন।
ময়দানে প্রথম পর্বে খিত্তাওয়ারি মুসল্লিদের অবস্থান : এবছর প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যেসমস্ত খিত্তায় অবস্থান করবেন তা হলো-গাজীপুর (খিত্তা-১), টঙ্গী (খিত্তা-২,৩ ও ৪), ঢাকা (খিত্তা-৫-১৯ ও ২৪, ২৫, ২৭, ২৮, ২৯, ৩২), রাজশাহী (খিত্তা-২০), নওগাঁ (খিত্তা-২১), নাটোর (খিত্তা-২২), চাপাই নবাবগঞ্জ (খিত্তা-২৩), সিরাজগঞ্জ (খিত্তা-২৬), টাঙ্গাইল (খিত্তা-৩০), নড়াইল (খিত্তা-৩১), রংপুর (খিত্তা-৩৩), নীলফামারী (খিত্তা-৩৪), কুড়িগ্রাম (খিত্তা-৩৫), লালমনিরহাট (খিত্তা-৩৬), গাইবান্ধা (খিত্তা-৩৭), মুন্সিগঞ্জ (খিত্তা-৩৮), মাগুরা (খিত্তা-৩৯), ঝিনাইদহ (খিত্তা-৪০), বগুড়া (খিত্তা-৪১), নারায়নগঞ্জ (খিত্তা-৪২), ফরিদপুর (খিত্তা-৪৩), যশোর (খিত্তা-৪৪), সাতক্ষীরা (খিত্তা-৪৫), বাগেরহাট (খিত্তা-৪৬), নরসিংদী (খিত্তা-৪৭), ভোলা (খিত্তা-৪৮), জামালপুর (খিত্তা-৪৯), ময়মনসিংহ (খিত্তা-৫০, ৫১), মেহেরপুর (খিত্তা-৫২), চুয়াডাঙ্গা (খিত্তা-৫৩), নেত্রকোনা (খিত্তা-৫৪), কিশোরগঞ্জ (খিত্তা-৫৫), গোপালগঞ্জ (খিত্তা-৫৬), বরিশাল (খিত্তা-৫৭), রাজবাড়ি (খিত্তা-৫৮), শেরপুর (খিত্তা-৫৯), শরীয়তপুর (খিত্তা-৬০), মাদারীপুর (খিত্তা-৬১), সিলেট (খিত্তা-৬২), কক্সবাজার (খিত্তা-৬৩), রাঙ্গামাটি (খিত্তা-৬৪), খাগড়াছড়ি (খিত্তা-৬৫), সুন্দরবন (খিত্তা-৬৬), ফেণী (খিত্তা-৬৭), নোয়াখালী (খিত্তা-৬৮), লক্ষ্মীপুর (খিত্তা-৬৯), চাঁদপুর (খিত্তা-৭০), বি.বাড়ীয়া (খিত্তা-৭১), খুলনা (খিত্তা-৭২), পটুয়াখালী (খিত্তা-৭৩), বরগুনা (খিত্তা-৭৪), চট্টগ্রাম (খিত্তা-৭৫), কুমিল্লা (খিত্তা-৭৬), পিরোজপুর (খিত্তা-৭৭), ঝালকাঠি (খিত্তা-৭৮), সুনামগঞ্জ (খিত্তা-৭৯), হবিগঞ্জ (খিত্তা-৮০), মৌলভীবাজার (খিত্তা-৮১), পাবনা (খিত্তা-৮২), ঠাকুরগাঁও (খিত্তা-৮৩), পঞ্চগড় (খিত্তা-৮৪), দিনাজপুর (খিত্তা-৮৫), জয়পুরহাট (খিত্তা-৮৬), কুষ্টিয়া (খিত্তা-৮৭)। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, পাবনা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর-এর খিত্তাগুলোর অবস্থান তুরাগ নদের পশ্চিমপাড়ে। এছাড়াও ৮৮, ৮৯, ৯০, ৯১ ও ৯২ নং খিত্তাগুলো সংরক্ষিত হিসেবে রাখা হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা তাদের নিজ নিজ খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকবেন।
মুসল্লিদের নিরাপত্তায় পুরো ময়দানে ৩শ’ ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা : ইজতেমা ময়দানে আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের নিরাপত্তায় পুরো ময়দানে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষে ১শ’ ৬০টি, র্যাবের পক্ষ থেকে ৯০টি এবং ঢাকা এসবি’র পক্ষ থেকে ৫০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। এবিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন, র্যাব-১ এর গাজীপুর পোড়াবাড়ি ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার লে. কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ঢাকা এসবি’র পুলিশ পরিদর্শক (টঙ্গী জোন) মো. মাজাহারুল হক।
টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের মিডিয়া সমন্বয়কারী মুফতি জহির ইবনে মুসলিম বলেন, ১০ জানুয়ারি ইজতেমা শুরু হলেও গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকেই দূর-দূরান্তের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের শীর্ষ মুরুব্বি ও ময়দানের জিম্মাদার প্রকৌশলী মাহফুজ হান্নান বলেন, বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের প্রস্তুতিকাজ প্রায় ৯৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। বাকী টুকিটাকি যা আছে তা বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে এবং মুসল্লিরা ময়দানে অবস্থান নেবেন। ১০ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে আলমী শূরার তত্ত্বাবধানে আয়োজিত তিনদিনের বিশ্ব ইজতেমা।