নাটোরের বড়াইগ্রামের কৃষকরা নদী আর বিলের পানিতে কচুরীপানার ভাসমান বেড বানিয়ে রকমারী সব্জি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। কীটনাশকের ব্যবহার নেই বলে উৎপাদিত সব্জিও নিরাপদ। দিন দিন আবাদী জমি কমে যাওয়ায় জলাবদ্ধ জমিতে এই সব্জি চাষ কৃষি উৎপাদনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
জানা যায়, ‘ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বাটরা, বাঘাইট, মেরিগাছা, ধানাইদহ, তারানগর গ্রামে বয়ে যাওয়া নাগর ও খলিসাডাঙ্গা নদী এবং চিনিডাঙ্গার বিলে কচুরিপানা ব্যবহার করে তৈরী হয়েছে ভাসমান বেড। এসব গ্রামের ৩০ জন কৃষক শতাধিক বেডে উৎপাদন করছেন লালশাক, কলমীশাক, পালংশাক, করলা, শসা আর লাউ। কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, প্রণোদনা ও প্রযুক্তি সহযোগিতা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
বাটরা গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, যে জমিতে সব্জির চাষ করা হচ্ছে তাতে কচুরিপানা আর জলাবদ্ধতার কারণে কোন ফসল হতো না। এখন এসব জায়গায় শীতকালীন সব্জির চাষ করছি। ফিরোজুর রহমান জানান, ভাসমান বেডে সব্জি চাষ খুবই লাভজনক। বেডে প্রাকৃতিক উপাদানে জৈবিক সক্ষমতা অনেক বেশি থাকায় সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না।
কৃষক আব্দুল বারী বলেন, চলতি বছর একটি জলাবদ্ধ জমিতে ভাসমান বেডে সব্জি চাষ করেছি। এসব বেডে সব্জি চাষে পোকামাকড়ের আক্রমণ ও আগাছার আধিক্য নেই। ইতিমধ্যে উৎপাদিত সব্জি বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছি। কৃষক রাশেদ বলেন, আবাদ শেষে কচুরীপানার বেড উন্নতমানের জৈব সার হিসেবে বোরো ধান আবাদে ব্যবহার করা হবে। নতুন এই চাষাবাদ পদ্ধতি দেখতে ও তথ্য নিতে প্রায়ই আশেপাশের কৃষকরা ভাসমান বেড এলাকায় আসছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস ভাসমান সব্জি চাষের জন্যে কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান ছাড়াও বেড তৈরীর নেট, সব্জি বীজ ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ প্রদান করেছে। প্রদর্শনী খামার স্থাপন করে কৃষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ ছাড়াও সম্প্রতি বাটরা বিলে মাঠ দিবসের আয়োজন করেছে। এতে ভাসমান সব্জি চাষের প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত পেয়ে উপকৃত হয়েছেন কৃষকরা। তাঁরা জানান, আগামী মৌসুমে তাদের বাড়ীর পাশের জলাধারে বেডে সব্জি চাষ করবেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল আহমেদ বলেন, ভাসমান বেডে সবজি চাষ লাভজনক। বিষমুক্ত হওয়ায় স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য উপকারী। ভাসমান বেড তৈরীতে ব্যবহৃত কচুরীপানা পরবর্তীতে জৈব সারে পরিণত হচ্ছে। আবার জলাবদ্ধতার কারণে ফসল উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা মনোনীত দেশের কৃষিতে একমাত্র ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’- এই চাষাবাদ পদ্ধতি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বলে জানান তিনি।