রাজধানী ঢাকার সন্নিকটে টঙ্গীর কহর দরিয়াখ্যাত সোনাবানের শহর তুরাগ নদের তীরে আগামি শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে আলমী শূরার তত্ত্বাবধানে বিশ্ব তাবলিগ জামাতের ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এদিকে ইজতেমাকে সামনে রেখে এখন লাখো মুসল্লির পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে তুরাগ নদের পূর্বতীর। এ উপলক্ষে শিল্পনগরী টঙ্গী সেজেছে নতুন সাজে। এরইমধ্যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও বিদেশ থেকে তাবলিগ অনুসারি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইস্তেমায়ী সামানা নিয়ে ইজতেমা ময়দানে জড়ো হচ্ছেন। ১০ জানুয়ারি ইজতেমা শুরু হলেও গতকাল বুধবার থেকেই ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিরা দলে দলে আসতে শুরু করেছেন এবং নিজ নিজ খিত্তায় অবস্থান নিচ্ছেন।
শুক্রবার বাদ ফজর আ’ম বয়ানের মধ্যদিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে ১২ জানুয়ারি দুপুরে অর্থাৎ জোহরের নামাজের আগে যেকোনো একসময় আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্মেলন বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটবে। মাঝে চারদিন বিরতি দিয়ে ১৭ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১৯ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে দ্বিতীয় পর্ব তথা এবারের বিশ্ব ইজতেমা। এরইমধ্যে ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতিরকাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা তুরাগ নদে ৭টি ভাসমান পন্টুন সেতু নিমার্ণ করেছেন। ১৬০ একর জমির ওপর নির্মিত সুবিশাল প্যান্ডেলের কাজ, খুঁটিতে নম্বর প্লেট, খিত্তা নম্বর, জুড়নেওয়ালি জামাতের কামরা, মুকাব্বির মঞ্চ, বয়ান মঞ্চ, তাশকিল কামরা, পাহাড়া ও এস্তেকবালের জামাত তৈরি, হালকা নম্বর বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। তবে ইসলামি সম্মেলনে নারী-পুরুষের সহঅবস্থান ইসলামি শরিয়ত বিধিসম্মত না হওয়ায় এদফার ইজতেমায় ময়দানে মাস্তুরাত (মহিলাদের) কামরা রাখা হয়নি। আগত নারী মুসল্লিরা ময়দানের চারপাশের বাসাবাড়িতে বসে মুরুব্বিদের বয়ান শুনতে পারবেন। আগত মুসল্লিদের সুষ্ঠুভাবে বয়ান শোনার জন্য পুরো ময়দানে শব্দ প্রতিধ্বনিরোধক প্রায় আড়াইশ বিশেষ ছাতা মাইক, ৫০টি ইউনিসেফ (প্রতিধ্বনি প্রতিরোধক) মাইকসহ প্রায় সাড়ে তিনশ’টি মাইক স্থাপন করা হয়েছে।
দেশ-বিদেশের মুসল্লিদের অবস্থান : শুক্রবার ইজতেমার মূল কার্যক্রম শুরু হলেও গতকাল বুধবার থেকেই লাখ লাখ দেশি-বিদেশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ময়দানে তাদের নিজ নিজ খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন।
কাজাখাস্তানের মুসল্লি মোহাম্মেদ ডেনি বেক (৪৫) জানান, ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে মহান আল্লাহকে রাজি খুশি করাতেই টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে এসেছি। এদিকে ময়মনসিংহ থেকে ১৫ সদস্যের এক জামাত নিয়ে এসেছেন আবুল কাশেম (৬২)। তিনি জানালেন ইজতেমা ময়দানের মুরুব্বিদের বয়ান শুনে হেদায়েতের পথ পাওয়ার জন্য এসেছি। নারায়ণগঞ্জ আড়াই হাজার এলাকার মুসল্লি আবদুর রশিদ (৬৫) জামাতের সাথে তিন দিনের ইজতেমায় এসেছেন। আখেরি মোনাজাত শেষে চল্লিশ দিনের জন্য বের হবেন বলে জানিয়েছেন।
ইজতেমা উপলক্ষে আইনশৃংখলা জোরদার : বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীতে আইনশৃংখলা জোরদার করা হয়েছে। পাচঁ সেক্টরে ভাগ করে তিন স্তুরের নিরাপত্তার লক্ষ্যে ইজতেমার ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে প্রায় ৮ হাজার পুলিশসহ র্যাব, সাদা পোশাকধারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হবে। এ ছাড়া বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ময়দানে আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তায় চারপাশে টহল দিবেন। নিরাপত্তা জোরদার করতে র্যাবের কমিউনিকেশন উইং, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে ২০টি প্রবেশপথসহ চারপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এছাড়াও থাকছে মেটাল ডিটেক্টর, নাইটভিশন গগল্স, বাইনোকুলার, বোম্ব ডিসপোজাল টিম, এন্টিটেরোরিজম ইউনিট, হেলিকপ্টার-নৌ টহল ও স্টাইকিং ফোর্স। বিশেষ প্রয়োজনে হেলিকপ্টার উঠানামার জন্য বাটা গেট ও জেরিনা গার্মেন্ট কারখানায় দুটি হেলিপ্যাড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। র্যাবের ইন্টেলিজেন্সের সদস্যরা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ ইজতেমা মাঠে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটতে পারে সে ব্যাপারে কড়া নজরদারি রাখবেন। প্রতিটি খিত্তায় বিশেষ টুপি পরিহিত ও সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা সদস্য অবস্থান করবেন। তারা কোনো প্রকার সন্ত্রাসী তৎপরতার ইঙ্গিত পেলে বিশেষ সংকেতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তৎক্ষণিক অবহিত করবেন। এছাড়াও তারা ইজতেমা মাঠসহ আশপাশের কোথায় কি হচ্ছে না হচ্ছে প্রত্যক্ষ করার জন্য ল্যাপটপ কম্পিউটারের স্ক্রিনে সার্বক্ষণিক দৃষ্টি রাখবেন। নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন স্থানে বসানো র্যাবের ১০টি ও পুলিশের ১৪টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষক দল সার্বক্ষণিক বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের পর্যবেক্ষণ করবেন।
ফায়ার সার্ভিস এণ্ড সিভিল ডিফেন্স : ফায়ার সার্ভিস এণ্ড সিভিল ডিফেন্সের গাজীপুর ফায়ার
সার্ভিসের জোন-২ এর উপ-সহকারি পরিচালক মো.মানিকুজ্জামান জানান, ইজতেমাস্থলে আমাদের একটি কন্ট্রোল রুম থাকবে। সেখানে সার্বক্ষণিক কর্মকর্তাসহ ফায়ারম্যানরা অবস্থান করবেন। ৬টি টু-হেলার মোটরসাইকেল টহল, ১৪ টি ফায়ার ফাইটিং ইউনিট, ১ টি ষ্ট্যান্ডবাই লাইটিং ইউনিট, ৬ টি মোবাইল জেনারেটর, প্রতি খিত্তায় ২জন ফায়ারম্যান থাকবে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ৩ টি পানিবাহী গাড়ী, ৩ সদস্যের ডুবুরি ইউনিট এবং ৩ টি এ্যাম্বুলেন্স, ১টি রেসকিউ বোর্ড, ১টি রেসকিউ গাড়ি থাকবে। ফায়ার সার্ভিসের ২০ জন কর্মকর্তাসহ ২৫০ কর্মী সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকবে।
বিশেষ ট্রেন : টঙ্গী রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার মো. হালিমুজ্জামান জানান, এবারের বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের সুষ্ঠু যাতায়াতের জন্য ১৬টি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু করে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা অভিমুখী সব ট্রেন ৫মিনিট পর্যন্ত টঙ্গী স্টেশনের দাঁড়াবে। সাপ্তাহিক বন্ধের সকল ট্রেনও ওই সময়ে চলাচল করবে। এছাড়াও প্রতিটি ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোজন কার হচ্ছে।
ময়দানে প্রথম পর্বে খিত্তাভিত্তিক মুসল্লিদের অবস্থান : এবছর প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যেসমস্ত খিত্তায় অবস্থান করবেন তা হলো-গাজীপুর (খিত্তা-১), টঙ্গী (খিত্তা-২,৩ ও ৪), ঢাকা (খিত্তা-৫-১৯ ও ২৪, ২৫, ২৭, ২৮, ২৯, ৩২), রাজশাহী (খিত্তা-২০), নওগাঁ (খিত্তা-২১), নাটোর (খিত্তা-২২), চাপাই নবাবগঞ্জ(খিত্তা-২৩), সিরাজগঞ্জ (খিত্তা-২৬), টাঙ্গাইল (খিত্তা-৩০), নড়াইল (খিত্তা-৩১), রংপুর (খিত্তা-৩৩), নীলফামারী (খিত্তা-৩৪), কুড়িগ্রাম (খিত্তা-৩৫), লালমনিরহাট (খিত্তা-৩৬), গাইবান্ধা (খিত্তা-৩৭), মুন্সিগঞ্জ (খিত্তা-৩৮), মাগুরা (খিত্তা-৩৯), ঝিনাইদহ (খিত্তা-৪০), বগুড়া (খিত্তা-৪১), নারায়নগঞ্জ (খিত্তা-৪২), ফরিদপুর (খিত্তা-৪৩), যশোর (খিত্তা-৪৪), সাতক্ষীরা (খিত্তা-৪৫), বাগেরহাট (খিত্তা-৪৬), নরসিংদী (খিত্তা-৪৭), ভোলা (খিত্তা-৪৮), জামালপুর (খিত্তা-৪৯), ময়মনসিংহ (খিত্তা-৫০, ৫১), মেহেরপুর (খিত্তা-৫২), চুয়াডাঙ্গা (খিত্তা-৫৩), নেত্রকোনা (খিত্তা-৫৪), কিশোরগঞ্জ (খিত্তা-৫৫), গোপালগঞ্জ (খিত্তা-৫৬), বরিশাল (খিত্তা-৫৭), রাজবাড়ি (খিত্তা-৫৮), শেরপুর (খিত্তা-৫৯), শরীয়তপুর (খিত্তা-৬০), মাদারীপুর (খিত্তা-৬১), সিলেট (খিত্তা-৬২), কক্সবাজার (খিত্তা-৬৩), রাঙ্গামাটি (তুরাগ নদের পশ্চিমপাড়) (খিত্তা-৬৪), খাগড়াছড়ি (তুরাগ নদের পশ্চিমপাড়) (খিত্তা-৬৫), সুন্দরবন (খিত্তা-৬৬), ফেণী (খিত্তা-৬৭), নোয়াখালী (খিত্তা-৬৮), লক্ষ্মীপুর (খিত্তা-৬৯), চাঁদপুর (খিত্তা-৭০), বি.বাড়ীয়া (খিত্তা-৭১), খুলনা (খিত্তা-৭২), পটুয়াখালী (খিত্তা-৭৩), বরগুনা (খিত্তা-৭৪), চট্টগ্রাম (খিত্তা-৭৫), কুমিল্লা (খিত্তা-৭৬), পিরোজপুর (তুরাগ নদের পশ্চিমপাড়) (খিত্তা-৭৭), ঝালকাঠি (খিত্তা-৭৮), সুনামগঞ্জ (খিত্তা-৭৯), হবিগঞ্জ (খিত্তা-৮০), মৌলভীবাজার (খিত্তা-৮১), পাবনা (খিত্তা-৮২), ঠাকুরগাঁও (খিত্তা-৮৩), পঞ্চগড় (খিত্তা-৮৪), দিনাজপুর (খিত্তা-৮৫), জয়পুরহাট (খিত্তা-৮৬), কুষ্টিয়া (খিত্তা-৮৭)। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, পাবনা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর-এর খিত্তাগুলোর অবস্থান তুরাগ নদের পশ্চিমপাড়ে। এছাড়াও ১৫(খ), ৮৮, ৮৯, ৯০, ৯১, ৯২ নং খিত্তাগুলো সংরক্ষিত হিসেবে রাখা হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা তাদের নিজ নিজ খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকবেন।
ইজতেমায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা : টঙ্গী বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রায়হান আরেফিন জানান, ইজতেমার ময়দান ও আশপাশের এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। উত্তরা, টঙ্গী সুপার গ্রিড ও টঙ্গী নিউ গ্রিডকে বরাবরের মতোই মোট ১৩২ কেভি সোর্স হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে, যাতে করে একটি গ্রিড অকেজো হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘিœত না হয়। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৪ টি ১১ কেভি ফিডার লাইন ও ২১ টি বিতরণ কেন্দ্র করা হয়েছে। হঠাৎ কোনো কারণে ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে পড়লে সাথে সাথে যাতে বদল করা যায় তার জন্য স্বস্ব স্থানে ৪টি সাব স্টেশন ও ৫ টি ট্রলি মাউন্টেন ট্রান্সফরমার রাখা হবে। অতিরিক্ত ব্যবস্থা হিসাবে ৪ টি জেনারেটর সব সময় প্রস্তুত থাকবে। এছাড়াও যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে দ্রুত অপারেশনের নিমিত্তে ইজতেমা ময়দানের ৭টি টুলসসহ লাইন ক্রু দল নিয়োজিত থাকবে।
পানি ও গ্যাস সরবরাহ : ইজতেমা আয়োজক তাবলিগ জামাতের স্বেচ্ছাসেবিদের প্রস্তুতি ছাড়াও ওয়াসা, তিতাসসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী সংস্থাগুলোও তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। স্থানীয় ওয়াসা ও তিতাস গ্যাস কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, ইজতেমা ময়দানে ১৩ টি গভীর নলকুপ স্থাপন করা হয়েছে। সাড়ে ১৮ কি.মি পাইপ লাইনের মাধ্যমে যা থেকে দৈনিক প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি ৫৪ লক্ষ গ্যালন সুপেয় পানি মুসল্লিদের মধ্যে সরবরাহ করা হবে। ময়দানের চারপাশে ৩০টি তিনতলা বিশিষ্ট ভবনে ৮ হাজার ৩শ ৩১টি পাকা ও প্রায় ৪শ’ অস্থায়ী কাঁচা পায়খানা তৈরিসহ প্রায় ৯ হাজার পায়খানা, গোসল ও অজুখানা তৈরি ও মেরামত করা হয়েছে। এ ছাড়া ওয়াসা কর্তৃপক্ষও তাদের গাড়ীর মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে পানি সরবরাহ করবে। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ইজতেমা ময়দানের বিদেশি মেহমানখানায় রান্না বান্নার প্রয়োজনীয় স্থানে ১৭৫টি গ্যাসের চুলা স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করেছেন। এছাড়াও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মুসল্লিদের যাতায়াতের রাস্তায় ধূলাবালি প্রতিরোধে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি ছিটানো হবে।
মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম : ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে প্রথম পর্বে ব্যাপক প্রস্তুতি হাতে নেয়া হয়েছে। টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা: মাসুদ রানা বলেন, ‘টঙ্গী ৫০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালকে ইজতেমার জন্য অস্থায়ীভাবে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, বক্ষব্যাধি/ এ্যাজমা ইউনিট, হৃদরোগ ইউনিট, ট্রমা (অর্থোপেডিক) ইউনিট, বার্ণ ইউনিট, ডায়রিয়া ইউনিট, স্যানিটেশন টিম এবং ১৪টি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়াও চক্ষু, মেডিসিন ও সার্জারিসহ বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞসহ চিকিৎসক রোস্টার অনুযায়ী চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকবেন।
বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ বিতরণ : ইজতেমা মাঠের উত্তরপার্শে নিউ মন্নু ফাইন কটন মিলস মাঠসহ বিভিন্নস্থানে স্থাপিত বিনামূল্যে চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো প্রতিবারের ন্যায় এবারও ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১০ জানুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে আসা অসুস্থ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ বিতরণ করবে। এছাড়াও টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি, হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াকফ) বাংলাদেশ, ইবনে সিনা, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, র্যাব, ইমাম সমিতিসহ অর্ধশতাধিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান তাদের তৈরিকৃত স্টলে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করবে। আজ (বৃহস্পতিবার) এসব স্টলগুলো উদ্বোধনকালে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন, গাজীপুর জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলামসহ রাজনীতিক নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
নজমের তারতীব ও হেদায়েত : বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়ক মুফতি জহির ইবনে মুসলিম বলেন, বুধবার সকালে বয়ান মঞ্চের পাশ থেকে ইজতেমা ময়দানে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত সাথীদের উদ্দেশ্যে নজমের তারতীব ও হেদায়েতী বয়ান করেন মাওলানা রবিউল হক। তিনি সকল সাথীদেরকে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পুরোপুরিভাবে পালনের আহ্বান জানান।
ইজতেমা কমিটি ও প্রশাসনের বক্তব্য : বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরুব্বি প্রকৌশলী মো. মাহফুজ হান্নান জানান, ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দানের প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম পর্বে অংশ গ্রহণকারী ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ময়দানে স্ব-স্ব খিত্তায় এসে অবস্থান নিচ্ছেন। দেশের ৬৪টি জেলার মুসল্লিরা ইজতেমায় অংশ নেবেন। ইজতেমার আয়োজক তাবলিগ জামাতের স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুতি ছাড়াও ডেসকো, তিতাস, ওয়াসাসহ সরকারের সংশ্লি-ষ্ট সেবাদানকারী সংস্থাগুলোও তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি মো. এমদাদুল হক জানান, টঙ্গীর আইনশৃংখলা পরিস্থিতি বিশেষ করে চুরি, ছিনতাই রোধসহ মাদক ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ এবং এলাকার বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম বন্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তা বিধানে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণস্থানে পর্যাপ্ত পরিমাণে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের সমন্বয়ে ১৪টি কমিটি গঠনের মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকা দুর্গন্ধ ও রোগজীবানুুমুক্ত রাখতে ৬শ’ ড্রাম ব্লিচিং পাউডার ও দুই হাজার লিটার কেরোসিন ছিটানো হচ্ছে। মশা মাছি তাড়াতে ৬০টি ফগার মেশিনে মশানাশক ওষুধ ¯েপ্র করা হচ্ছে এবং রাস্তার ধূলাবালি রোধ করার জন্য প্রতিদিন সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পানি ছিটানো হবে। এছাড়াও ৬০টি গার্বেজ ট্রাকের মাধ্যমে দিনরাত বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম চলবে।