ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে চাঞ্চল্যকর মাদরাসা ছাত্র আলামিন হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও আলামত উদ্ধারে গিয়ে আসামিদের স্বজনদের হামলায় আহত হয়েছে ঝিনাইদহ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পাঁচ কর্মকর্তা। আহতরা হলো এসআই সোহেল হোসেন, এসআই হুমায়ন, এএসআই হাফিজুর রহমান, এএসআই মোঃ জাফর ও এএসআই আব্দুল খালেক। আহতদের রাতেই কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বুধবার দিবাগত রাত ১০ দিকে কালীগঞ্জ পৌর শহরের আড়পাড়ায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার ঘটনায় জড়িত হত্যাকান্ডে জড়িত রিমান্ডের আসামি তারিক হাসান সাব্বিরের বাবা মুশফিকুর রহমান ডাবলু, চাচা মোস্তাক আহম্মেদ লাভলু, নাসিরুল ইসলাম ও লাল্টু সহ পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা সাবেক পৌর মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজুর ভাই ও শ্যালক।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকাল ৫ টায় ঝিনাইদহ পিবিআই’র ইনসপেক্টর সোহেল হোসেন বাদি হয়ে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় পুলিশের কাজে বাধাদান ও আসামি ছিনতাই ও মামলার ডকেট ছিনতাইয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় ১নং আসামি করা হয়েছে কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজু, মোস্তাক আহমেদ লাভলু, মুশফিকুর রহমান ডাবলু, রহিমা পারভীন, মোছাঃ পারভীনা আক্তার, মোঃ লাল্টু বিশ্বাস, আব্দুস সালাম মিল্টন, মোছাঃ রিনি বেগম, বাবুল হোসেন, জহুরুল ইসলাম, নাসিরুল বিশ্বাস , আলম বিশ্বাস , মোঃ শওকত আলী, মোঃ মোস্তফা বিশ্বাস ,ইব্রাহীম খলীল লিটন, ইকবাল হোসেন খোকন, সালাম বিশ্বাস , সিরাজ বিশ্বাস ও অপু বিশ্বাস।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহা: মাহফুজুর রহমান মিয়া বলেন, এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে পিবিআইয়ের এসআই সোহেল রানা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং-৯ মামলায় ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ ৩৫/৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, কালীগঞ্জে মাদরাসা ছাত্র হত্যাকান্ডের তদন্তে গেলে আসামিদের উপস্থিতিতে উক্ত আসামিরা পিবিআই এর উপর হামলা করে। এ সময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও একটি রবি সীমকার্ড আলামত ছিনিয়ে নেওয়ার পর কালীগঞ্জ থানার মামলা নং-৩ এর অভিযুক্ত হাসান তারিখ সাব্বির কে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে আমরা তাকে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করি। অন্য আসামিরা এএসআই হাফিজুর রহমানের মোবাইল ফোনে ধারণকৃত ভিডিও ডিলিট ও গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও ও অডিও ডিলিট করে। এরপর হাফিজুর রহমানকে মারধর করে তারা।
এর আগে মাদরাসা ছাত্র আল-আমিন হত্যার সাথে জড়িত আটক তারিক হাসান সাব্বির ও ইয়াছিন আরাফাত হৃদয় নামে দু’জনকে দুই দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই। তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক বুধবার সকালে ওই এলাকার একটি পুকুরে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও অন্য আলামত উদ্ধারে যায় পিবিআই’র একটি দল। ডুবুরিরা দিনভর চেষ্টার পর ছুরি না পেয়ে বিকালে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগীতায় পুকুরের পানি নিষ্কাষনের কাজ শুরু করে। রাত ১০টার দিকে পুকুর থেকে হত্যাকাজে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করে পুলিশ। আটক আসামিদের নিয়ে ছুরিসহ ছবি তোলার সময় পিবিআই সদস্যদের উপর দুই দফায় হামলা করে বেধড়ক মারপিট করে আসামি পক্ষের স্বজনরা। মারধর করার পর পিবিআই’র একজন সদস্যকে আটকে রাখে মোস্তাফিজুর রহমান বিজুর দ্বিতল ভবনে। অন্য সদস্যরা আটক আসামিদের নিয়ে চলে যায়। খবর পেয়ে কালীগঞ্জ পুলিশ সেখানে পৌছে আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এছাড়া সেখান থেকে হত্যা মামলার আসামি সাব্বিরের বাবা মুশফিকুর রহমান ডাবলু ও তার চাচা মোস্তাক আহম্মেদ লাভলু সহ পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ।
ঝিনাইদহ পিবিআই এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম.কে.এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আল-আমিন হত্যায় জড়িত দু’জন আটকের পর তারা চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করে। তাদের দেয়া তথ্য মোতাবেক পিবিআই’র একটি দল বুধবার সকাল থেকে আসামীদের দেখিয়ে দেয়া ওই গ্রামের রবিউল ইসলাম ঠান্ডু মিয়ার পুকুরের পানির মধ্যে ছুরি উদ্ধারের কাজ শুরু করে। হত্যাকান্ডে ৬ জন অংশ নেয় বলেও পুলিশ হেফাজতে থাকা আসামিরা জানিয়েছে। এদিন রাত ১০ টার দিকে ছুরি উদ্ধার হলে সাব্বিরকে ওই ছুরি দিয়ে স্বীকারোক্তি নেওয়ার সময় আসামির স্বজনরা কয়েক দফায় পুলিশের উপর হামলা করে বেধড়ক মারপিট করে জখম করে।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাঃ মাহফুজুর রহমান মিয়া মামলা দায়ের বিষয়টি উল্লেখ করে জানান, আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরুদ্ধ পিবিআই সদস্যদের উদ্ধার করে নিয়ে আসি। তাদের বেশ মারধর করা হয়েছে। আহতদের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, গেল বছরের ৩০ নভেম্বর রাতে বাড়ির পাশে ওয়াজ শুনতে যাওয়ার পর আল আমিন নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের চারদিন পর ওই এলাকায় নির্মাণাধীন একটি চারতলা ভবনের পেছন থেকে তার জবাই করা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আল-আমিন আড়পাড়ার আব্দুর রাজ্জাক নামে এক ব্যবসায়ীর ছেলে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান আল-আমিন শহরের সাওতুল হেরা হাফেজিয়া মাদরাসার ছাত্র ছিল। লাশ উদ্ধারের পর হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে দুইজনকে আটক করে পুলিশ। আটক তারিক হাসান সাব্বির সাবেক মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজুর ভাই মুশফিকুর রহমান ডাবলুর ছেলে এবং ইয়াছিন আরাফাত হৃদয় একই এলাকার আব্দুস সামাদ ওরফে মিল্টনের ছেলে।