যৌতুকের মামলা প্রত্যাহার না করায় যৌতুকলোভী স্বামীর মামা ও তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে মামলার বাদি গৃহবধূ রোজিনা আক্তার ফাল্গুনিকে হত্যার জন্য হামলা চালিয়েছে। এসময় ফাল্গুনিকে রক্ষা করতে স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি এসএম রানা এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা তাকে মারধর করে আহত করে। ঘটনাটি জেলার গৌরনদী উপজেলার পশ্চিম চন্দ্রহার গ্রামের।
মঙ্গলবার দুপুরে ওই গ্রামের মৃত শাহ আলম বিশ^াসের কন্যা রোজিনা আক্তার ফাল্গুনী জানান, গত দশ বছর পূর্বে একই গ্রামের মৃত এসাহাক শরীফের পুত্র শামিম শরীফ তুহিনের সাথে প্রেমের সম্পর্কে তার বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের আট বছর বয়সের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে শামীম বিভিন্ন সময় যৌতুকের দাবীতে তাকে (ফাল্গুনী) নির্যাতন করে আসছিলো।
ফাল্গুনী আরও জানান, সম্প্রতি সময়ে তার স্বামী শামিম শরীফ ও তার মা (শ্বাশুড়ি) শাহিনুর বেগম কৌশলে তার নামে জমি ক্রয়ের কথা বলে তার মায়ের (রহিমা বেগম) কাছ থেকে দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে শামীম, তার মা শাহিনুর ও মামা একই গ্রামের আনোয়ার হোসেন রোজিনার নামে দলিল না করে শামিমের নামেই দলিল সম্পাদন করেন।
তিনি (রোজিনা) আরও জানান, গত এক বছর পূর্বে তার স্বামী শামিম শরীফের সাথে একই গ্রামের মিজান সরদারের স্ত্রী এক সন্তানের জননী ডালিয়া আক্তারের সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এমনকি শামিম তার পরকীয়া প্রেমিকা ডালিয়াকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অসামাজিক কাজ করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরাও পরে। সর্বশেষ গত একমাস পূর্বে পরকীয়া প্রেমিকা ডালিয়ার সাথে অসামাজিক কাজ করতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয় শামিম। পরবর্তীতে নিজ সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তিনি (রোজিনা) মুচলেকা দিয়ে শামিমকে পুলিশের হাত থেকে ছাড়িয়ে আনেন। এরপরেও পরকীয়া প্রেমিকা ডালিয়ার সাথে গোপনে সম্পর্ক চালিয়ে আসছিলো শামিম। এনিয়ে তাদের মধ্যে দাম্পত্যকলহ শুরু হয়। এরইমধ্যে শশুর বাড়ী থেকে আরও দুই লাখ টাকা এনে দিতে পারলে পরকীয়া প্রেমিকা ডালিয়ার সাথে আর সম্পর্ক রাখবেনা বলে জানায় শামিম।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে রোজিনা বলেন, স্বামীর এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে (রোজিনা) শারিরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে পরকীয়া প্রেমিকা ডালিয়াকে নিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় শামিম। এরপরেও স্বামীকে অনৈতিক পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়ে তিনি (রোজিনা) শামিমের বিরুদ্ধে ব্র্যাকের মাধ্যমে একটি এবং বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে আরেটি মামলা দায়ের করেন।
রোজিনার বৃদ্ধা মা রহিমা বেগম বলেন, নিজেদের অভাবের মধ্যেও মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে এনজিও থেকে টাকা উত্তোলণ করে মেয়ে জামাতা শামিমের হাতে তুলে দিয়েছি। কিন্তু সেই মেয়ে জামাতা এখন অন্যের স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়েছে।
অসহায় গৃহবধূ রোজিনা আক্তার ফাল্গুনী বলেন, স্বামী শামিম শরীফের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করায় মামলা উত্তোলনের জন্য তাকে গত কয়েকদিন থেকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিলেন শামিম শরীফের মামা পশ্চিম চন্দ্রহার গ্রামের সফিজউদ্দিন সরদারের পুত্র আনোয়ার হোসেন সরদার ও দেলোয়ার সরদার।
তাদের অব্যাহত হুমকির মুখেও মামলা উত্তোলণ না করায় সোমবার বিকেলে আনোয়ার ও দেলোয়ারের নেতৃত্বে তাদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা কৌশলে রোজিনা আক্তার ফাল্গুনীকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। এসময় পশ্চিম চন্দ্রহার জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও বাটাজোর বন্দরের ব্যবসায়ী এসএম রানা এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা তাকে মারধর করে আহত করে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।