নওগাঁর আত্রাইয়ে গতকাল তেকে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী শীতা তলার মেলা। তিনদিন ব্যাপী এ মেলা গত বুধবার থেকে শুরু হয়। প্রকৃত এক দিনের মেলা হলেও মেলার াগের দিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় এবং পৌষ মাসের শেষ দিন হয় পৌষে সংক্রান্তির মেলা পরের দিন বৌ মেলা হিসেবে কেনা বেঁচা হয়। প্রতিবছর এ মেলা পৌষ মাসের শেষ ও মাঘের শুরুতে অনুষ্ঠিত হয়। মেলাটি অনুষ্ঠিত হয় উপজেলার ভোঁ-পাড়া ইউপির জামগ্রাম মাঠে একটি বটগাছের নীচে। যুগ যুগ থেকে সাজ সাজ রবে অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা। জনশ্রুতি রয়েছে কয়েক যুগ আগে নারায়ণ চন্দ্র তার স্ত্রী শীতাকে জামগ্রামের এ মাঠে বনবাস দিয়েছিলেন।
আর এ বনবাসে শীতা আশ্রয় নিয়েছিলেন এ বটগাছের নীচে। এখানে সেই প্রাচীন যুগের একটি ইন্দরা(কুয়া) স্মৃতি হিসেবে আজোও বিদ্যমান। আর এ ইন্দারায় (কুয়া) জলে নাকি শীতা ¯œান করতেন। তারই স্মরণে হিন্দু সম্প্রদায় পরবর্তীতে এই জামগ্রামে মেলা বসিয়ে পূঁজা অর্চনার মধ্য দিয়ে এই দিনটিকে স্মরণ করে আসছে। ইতি পূর্বে এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে এটি আর হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমা বদ্ধ নেই। এ মেলাতে এখন হিন্দু মুসলিম সকলেই অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়াও মেলাটি এখন উৎসবে পরিণত হয়েছে। মূলত এটা জামাই মেলা। কিন্তু সবাই এটাকে বলে মাছের মেলা। মেলাকে ঘিরে এখানে দিন ব্যাপী চলে আনন্দ-উৎসব। এ ছাড়া মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় আনন্দের বাতাস বইতে শুরু করেছে।
জামাই মেয়ে ও আত্মীয়-স্বজন সহ বন্ধু-বান্ধবদের মিলন মেলায় পরিণত হয়। জামগ্রাম সহ আশে-পাশের্^র গ্রাম গুলো প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই আপ্যায়িত অতিথিদের সন্মানে পিঠা-পুলি, মিঠাই-মিষ্টান্ন সহ রকমারি খাবারের ধুম পড়ে যায়। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রায় সব বাড়িতেই আতœীয়-স্বজনদের আগমন ঘটেছে। গত মঙ্গলবারের মধ্যেই অনেকেরই জামায়-মেয়ে ও আতœীয়-স্বজনরা প্রতিটি বাড়িতে এসে গেছে। ্ দিনটির জন্য সারাটি বছর অপেক্ষায় থাকেন উপজেলাবাসী। এ মেলায় আছে একের ভেতর দুই। এক কথায় রথ দেখা আর কলা বেঁচা। কারণ এটা জামাই মেলা হলেও এখানে বসে মাছের বিরাট মেলা।
জামগ্রামের আশ-পাশের গ্রামে যাঁরা বিয়ে করেছেন,সে সব জামাই হচ্ছে ওই মেলার মূল ক্রেতা ও দর্শনাথী। তা ছাড়া এই মেলাকে ঘিরে এলাকার জামাইদের মধ্যে চলে এক নীরব প্রতিযোগীতা। আর এই প্রতিযোগীতাটি হচ্ছে কোনো জামাই সব চেয়ে বড় মাছটি কিনে শ^শুর বাড়িতে নিয়ে যেতে পারে। একটা মাছকে ঘিরে ক্রেতা জামাইদের ভীষণ জটলা। মাছের নাম, চিতল বিক্রেতা দাম হাঁকান ১২শ’ টাকা কেজি একটি মাছের ওজন প্রায় ৬/৭ কেজি। ক্রেতাদের মধ্যে স্থানীয় জামগ্রাম এলাকার জামাই আলীমুদ্দিন শেখ মাছটির দাম সর্বোচ্চ ৮হাজার ৪শ’ টাকা বলেছেন কিন্তু বিক্রেতা আরো বেশি দাম পাওয়ার আশায় মাছটি ছাড়ছেন না চলছে দর কষাকষি। যত না ক্রেতার সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি উৎসুক জনতার ভিড় মাছটি দেখার জন্য।
গতকাল বুধবার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জাম গ্রামের শতিা তলার মাছের মেলায় গিয়ে দেখা যায় এ দৃশ্য। এ মেলায় উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন তো এসেছেনই এর বাহির থেকেও অনেকে এসেছেন উপজেলা সর্ববৃহৎ এই মাছের মেলায়। বগুড়ার শেরপুর, জয়পুরহাট,নওগাঁ, নাটোর, রাজশাহী,ইশ^রদী, সিরাজগঞ্জ,পাবনা, রংপুর,দিনাজপুর,গাইবান্দা থেকে এ মেলা উপলক্ষেই আত্রাইয়ের জামাগ্রাম শীতা তলার মেলায় এসেছেন। এবারও মেলায় প্রায় শতাধীক মাছ ব্যবসায়ীরা বাহারি মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মেলায় মাছ ছাড়াও আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টান্ন ইত্যাদির দোকান বসেছে। মাছের মেলায় সামদ্রিক, চিতল,বাঘার, আইড়, বোয়াল,কাতল,রুই, সিলভারকাপ,গলদা চিংড়ি মাছ সহ বিভিন্ন রকমের দেশীয় মাছ।
জামগ্রাম শীতা তলা মেলার আয়োজকরা জানান, এ মেলাটি প্রথম অনুষ্ঠিত হতো খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে। এটি অগ্রাহায়নের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবে আয়োজন করা হতো। প্রায় ১শ’ বছর ধরে মেলাটি আয়োজন হয়ে আসছে। সময়ের সাথে সাথে এ মেলাটি একটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। মেলার আয়োজক কমিটির সদস্য মোসলেম উদ্দিন ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল হানিফ জানান,বৃটিশ শাসনামল থেকে শুরু হওয়া জামগ্রামের শীতা তলার মেলা এখন ঐতিহ্যবাহী মেলা হিসেবে রূপ নিয়েছে। এ মেলা আত্রাই উপজেলার মধ্যে সব চেয়ে বড় মেলা হিসেবে স্বীকৃত।
মাছের মেলা সংলগ্ন ভোঁ-পাড়া ইউনিয়নের সোনাইডাঙ্গা গ্রামের সিরাজ উদ্দিন মৃধা জানান, মাছের মেলাটি এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের ধারক। মেলায় বেচা কেনা যতই হোক এ মেলা আমাদের ঐতিহ্য আর কৃষ্ঠি-কালচারকে বহন করছে এটাই সবচেয়ে বড় কথা। মেলার সকল আয়োজন মঙ্গলবারের মধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। মেলা উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। আত্রাই থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ(ওসি) মোসলেম উদ্দিন বলেন, মেলায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে এজন্য সার্বক্ষণিক সেখানে পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।