দেশে মুরগির পালনের শীর্ষ স্থানে থাকলেও জয়পুরহাটের কালাইয়ে গত দুই’সপ্তাহ থেকে পাইকারি ও খুচরা বাজারে মুরগির দাম অস্বাভাবিক হারে কমেছে। এর ফলে উপজেলার মুরগি খামারি ও খুচরা ব্যবসাইরা মাইকিং করে বিক্রি করছেন ব্রয়লার মুরগি। উপজেলার প্রতিটি বাজারে কম দামে ঐসব পোলট্রি মুরগি বিক্রির জন্য মাইকিং করা হলেও ক্রেতাদের সাড়া না পাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছে খুচরা বিক্রেতারাও। আর হঠাৎ করে বৃদ্ধি পেয়েছে সব ধরনের কোম্পানীর পোল্ট্রি খাদ্যসহ মুরগি পালনে বিভিন্ন উপকরণের দাম। এর ফলে মুরগি পালনের বাজারে মুরগি বিক্রি করতে গিয়ে অনেক পোল্ট্রি খামারি এখন দিশেহারা হয়ে পরেছে।
সরেজমিনে এলাকা ঘুরে ও মুরগি খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কালাই পৌরসভাসহ উপজেলার মাত্রাই, উদয়পুর, পুনট, জিন্দারপুর ও আহম্মেদাবাদ ঐ ৫টি ইউনিয়নে ব্রয়লার খামার আছে প্রায় ২শ ৫০টি। আর গত দুই’সপ্তাহ থেকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাইকারি ও খুচরা ব্রয়লার মুরগির বাজারে ধস নেমেছে। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে মুরগির কম দাম হওয়ায় ঐসব মুরগি বিক্রির জন্য মাইকিং করে মুরগি বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। বর্তমান পাইকারি মুরগির বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার জাতের মুরগির বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৮৫ টাকা দরে। মুরগির দাম কম হওয়ায় উপজেলার শত শত পোল্ট্রি খামারিরা দিশেহারা হয়ে পরেছে। চাকরি না পেয়ে অনেক শিক্ষিক যুবক ও যুবতিরা মনে শত স্বপ্ন নিয়ে একটু লাভের আশায় বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে বা ধার দেনা করে পোল্ট্রি খামার দিয়েছেন। লাভ তো দূরের কথা, বর্তমান মুরগির বাজারে মুরগির বিক্রি করে আসল পুঁজি ঘরে তুলতে পারবে কি না তা নিয়ে তারা হতাশ হয়ে পরেছেন। ইতোমধ্যে এই উপজেলাতে প্রায় ১’শ ব্রয়লার মুরগি খামার বন্ধ হয়েছে। আগামীতে আরও সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলার বিয়ালা গ্রামের মুরগি খামারি মাত্রাই সোনার পাড়া সুজাউল সোনার, মোলামগাড়ী গ্রামের পার্থ হোসেন ও পুনট গ্রামের আনিছুর রহমান জানায়, ব্রয়লার জাতের এক কেজি ওজনের মুরগি উৎপাদন করতে সবমিলে খরচ হয় প্রায় ১’শ টাকা। আর বর্তমানে বিক্রি করতে হচ্ছে প্রতি কেজি প্রায় ৮০ টাকায়। এরপরও লোকসান করে তাদেরকে মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে করে প্রতি কেজি মুরগীর পিছনে লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রায় ২০ টাকা। আর এভাবে লোকসান হলে ভবিষ্যতে মুরগি পালন কররে কি না তারা এখন ভাবছেন। এইজন্য সরকারের কাছে তাদের জোর দাবি, অন্তত্য পোল্ট্রি খামারিরা যেন ন্যায্য মূল্য পায় বলে তারা জানান।
উপজেলার পুনটহাটের মুরগি খুচরা বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম ও নুর আলম বলেন, গত দুই’সপ্তাহ থেকে অস্বাভাবিকহারে ব্রয়লার জাতের মুরগির দাম কমেছে। খামারিরা মুরগি বিক্রি করতে পারছেনা। তারা মুরগি বিক্রির জন্য আমাদেরকে জোড় করে মুরগি দিয়ে যাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে মাইকিং করে মুরগি বিক্রি করছি। বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করছি ৮৬ থেকে ৯০ টাকার দরে।
মাইকিং করে মুরগি বিক্রির কথা স্বীকার করে কালাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা ডা. মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, আমরা মুরগি খামারিদের সঙ্গে যোগাযোগসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি। তাদেরকে বেশি বেশী করে মুরগি পালন করতে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু বর্তমান মুরগির বাজারে মুরগির দাম অনেক কম। এতে করে লোকসানের মুখে পরে পুঁজি হারিয়ে খামারিরা এখন দিশেহারা। অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই ভবিষ্যতে এই বৃহৎ পোল্ট্রি শিল্পকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সরকারের সু-নজর দেওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।