যশোরে সড়ক দুর্ঘটনায় বিয়ের কনেসহ একই পরিবারের তিন নারীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন এক শিশুসহ চার জন। ঘটনার পরপরই গাড়ির চালক ও নিহত তনিমা ইয়াসমিন পিয়াসার স্বামী শফিকুল ইসলাম জ্যোতিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। তবে পুলিশের ধারণা, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন জ্যোতি।
শুক্রবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে শহরের শহীদ মসিয়ূর রহমান সড়কের পাশে (আকিজ গলি) একটি প্রাচীর ও বিদ্যুতের খাম্বার সঙ্গে প্রাইভেটকারটি ধাক্কা লেগে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- যশোর শহরের ঢাকা রোড বিসিএমসি কলেজ এলাকার ইয়াসিন আলীর মেয়ে তানজিলা ইয়াসমিন (২৮), তনিমা ইয়াসমিন পিয়াসা (২৫) ও পিয়াসার খালাত ভাই আরএন রোড এলাকার মঞ্জুর হোসেনের স্ত্রী আফরোজা তাবাসসুম তিথী (২৬)।
আহতরা হলেন- পিয়াসার স্বামী শফিকুল ইসলাম জ্যোতি (২৮), আফরোজা তাবাসসুম তিথীর মেয়ে মানিজুর (৩), শাহিন হোসেন (২৩) ও হৃদয় (২৮)।
দুর্ঘটনার বিষয়টি স্বীকার করে যশোর কোতোয়ালি থানার ইন্সপেক্টর শেখ তাসমীম আলম বলেন, ‘শুক্রবার রাত ১টার দিকে পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর থেকে আমরা জানতে পারি, শহরের শহীদ মসিয়ূর রহমান সড়কে একটি প্রাইভেটকার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। পরে পুলিশের রাত্রিকালীন দুটি টহল টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আমিও যাই। দুর্ঘটনা কবলিত প্রাইভেটকারে তিনজন পুরুষ, তিনজন নারী ও একটি শিশু ছিল। ঘটনাস্থল শহীদ মসিয়ূর রহমান সড়কের প্রাক্তন কাস্টমস কমিশনার জিএম কামালের বাড়ির প্রাচীর ও বিদ্যুতের খুঁটিতে সজোরে আঘাত করে প্রাইভেটকারটি।,
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন শফিকুল ইসলাম জ্যোতি। তিনি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। রাতেই তাকে আটক করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, মদ্যপান করে বেপরোয়া গাড়ি চালানোয় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে গাড়িটি পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
স্থানীয়দের ধারণা, শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা থেকে নিজস্ব প্রাইভেটকার চালিয়ে যশোরে আসেন জ্যোতি। আবার রাতে গাড়ি চালানোয় ক্লান্তির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
ইয়াসিন আলীর ভাই, নিহত দুইবোনের চাচা আব্দুল কাদের জানান, আগামী ২৩ জানুয়ারি তার ভাতিজি পিয়াসার বিবাহোত্তর সংবর্ধনার কথা ছিল। সে জন্য জ্যোতির বাড়িতে আলোকসজ্জা করা হয়।
পিয়াসার মামা শাহিনুর রহমান ঠান্ডু জানান, দেড় বছর আগে শহরের লোনঅফিসপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জ্যোতির সঙ্গে বিয়ে হয় আদদ্বীন সখিনা মেডিক্যালের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী তনিমা ইয়াসমিন পিয়াসার। শুক্রবার রাতে পিয়াসা জ্যোতিকে ফোন করে বলে তারা আলোকসজ্জা দেখতে যাবে এরপর শহর ঘুরবে। ওইদিন রাত ১০টার দিকে আলোকসজ্জা দেখতে জ্যোতি তার নিজস্ব প্রাইভেটকার নিয়ে বের হয়। তার সঙ্গে ছিল পিয়াসার বোন তানজিলা, খালাত ভাইয়ের স্ত্রী আফরোজা তাবাসসুম তিথী, তার মেয়ে মানিজুর এবং জ্যোতির দুই বন্ধু হৃদয় ও শাহিন। আলোকসজ্জা দেখার পর তাদের স্বজনদের দাওয়াত দিয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে শহরের পালবাড়ি এলাকা থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। রাত সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে যশোর শহরের পুরাতন কসবা শহীদ মসিয়ূর রহমান সড়কের (আকিজের গলি) পাশে থাকা একটি বিল্ডিংয়ের প্রাচীর ও বিদ্যুতের খুঁটিতে সজোরে আঘাত করে গাড়িটি। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। অন্যরা কমবেশি আহত হয়েরেছ।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের ব্রাদার (সিনিয়র নার্স) মোফাজ্জেল হোসেন জরুরি বিভাগের ডাক্তার কাজল মল্লিকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই তিনজন মারা যান। আহত শিশুটি আশঙ্কামুক্ত।