বরগুনার আমতলীতে ৪০ দিনের শিশু কন্যা জিদনীকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন পাষণ্ড বাবা জাহাঙ্গির সিকদার। রোববার সকালে আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সাকিব হোসেনের এজলাসে কন্যাসন্তান হত্যার দায় স্বীকার করে এ জবানবন্দি দেন । পরে আদালতের বিচারক তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের গোছখালী গ্রামের জাহাঙ্গীর সিকদার ও সীমা দম্পতির পরপর তিনটি কন্যাসন্তান হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয় বাবা জাহাঙ্গির সিকদার। গত ৮ ডিসেম্বর ওই দম্পতির জন্ম নেয়া জিদনী নামের শিশু কন্যাকে তিনি মেনে নিতে পারেনি। তার আশা ছিল একটি ছেলে সন্তান হবে। এ কন্যাশিশু জন্মের পর থেকেই জাহাঙ্গির ও তার স্ত্রী সীমার মধ্যে মনোমালিন্য চলে আসছিল। প্রতিবেশীদের অভিযোগ কন্যাসন্তান জন্মের পর থেকেই জাহাঙ্গির স্ত্রীর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয় এবং কন্যা সন্তানটি ছুয়েও দেখেননি তিনি। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বাবা জাহাঙ্গীর সিকদার শিশু কন্যা জিদনিকে কাথাঁয় মুড়িয়ে বাড়ীর পাশের একটি ডোবায় ফেলে দেয়। শিশু কন্যাকে না পেয়ে স্ত্রী ও তার শাশুড়ি পারুল বেগমের ডাক চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসে। পরে স্বজদের খোঁজাখুজির করে ঘটনার ঘন্টাখানেক পর রাত সাড়ে ১১ টার দিকে ঘরের পিছনের ডোবা থেকে কাঁথায় মোড়ানো বিছানাপত্রসহ জিদনির মরদেহ উদ্ধার করে। খবর পেয়ে আমতলী থানার পুলিশ ওই রাতেই শিশুটির মরদেহ উদ্ধার ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে পাষণ্ড বাবা জাহাঙ্গীর সিকদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসেন। শুক্রবার রাতে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাষণ্ড বাবা জাহাঙ্গির শিকদার কন্যা শিশুকে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। হত্যার কথা স্বীকার করায় শনিবার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। রোববার পুলিশ ঘাতক বাবা জাহাঙ্গির সিকদারকে আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করেন। আদালতের বিচারক মো. সাকিব হোসেনের এজলাসে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে পাষণ্ড বাবা শিশু হত্যার দায় স্বীকার করে ঘটনার বর্ণনা দেন বলে আদালত সূত্রে জানাগেছে। পরে আদালতের বিচারক তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
নিহত শিশু কন্যা জিদনীর মা সীমা আক্তার মেয়েকে হারিয়ে শোকে বিহবল। তিনি কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন, আমি এখন সবকুল হারালাম। কন্যাতো গেল আমার এ সংসার কে দেখবে তারও কোনো উপায় রইলো না। তবে তিনি শিশু কন্যা হত্যার বিচার দাবি করেছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি বলেন, পাষণ্ড বাবা জাহাঙ্গিরকে জবানবন্দি নেয়ার জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে।