আবারো বগুড়ার শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) রোগী ও তাদের স্বজনদের মারপিটের ঘটনা ঘটেছে । এবার কতিপয় ইন্টার্নী ডাক্তারদের বেপরোয়া মারপিটে মুক্তিযোদ্ধা সহ তাদের স্বজনরা আহত হয়েছে । শুধু তাই নয় রোগীকে জোর করে ছাড়পত্র দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দেবার ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার ।এসময় হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদে বিরুদ্ধে কার্ডিওলজি বিভাগে ভাংচুরের ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার দুপুরে হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে ।
এ ঘটনায় গতকাল রোববার দুপুরে বগুড়া শহরের ফুলবাড়ি দক্ষিণপাড়া এলাকার হেলাল উদ্দিন (৬৬) নামে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বগুড়া প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ।
সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা হেলাল উদ্দিন তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত শুক্রবার সকালে তার স্ত্রী মাজেদা ইয়াসমিন জোসনাকে (৫৫) বুকে প্রচণ্ড যন্ত্রনার কারণে বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে কার্ডিওলজি সিসিইউ বিভাগের ৩নং বেডে এ ভর্তি করিয়ে নেয়।
এদিকে শনিবার বিকেলের দিকে সেখানকার দায়িত্বরত ২জন ডাক্তার তার অসুস্থ স্ত্রীকে বেড ছেড়ে দিয়ে বাহিরে ফ্লোরে যেতে বলেন। এ খবর পেয়ে বিকেল আনুমানিক ৪টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা হেলাল উদ্দিন হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে গিয়ে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসককে বেড ছেড়ে দেওয়ার কারণ জানতে চান এবং একই সাথে তাকে একটি ভালো বেড দেবার কথা বলেন । এতে সেখানে কয়েকজন দায়িত্বরত ইর্ন্টান চিকিৎসক ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এ সময় কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা কক্ষের বাহিরের গ্রিলের দরজা বন্ধ করে দিয়ে তাদের অবরুদ্ধ করে এবং মোবাইল ফোনে তাদের অন্য ইনর্টান চিকিৎসকদে সেখানে আসতে বলে । ফোন পেয়ে দ্রুত সেখানে ১০/১২ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক সেখানে আসে এবং তারা সেখানে সন্ত্রাসীর ভুমিকায় াবর্তিন হয়ে মুক্তিযোদ্ধা হেলাল উদ্দিনকে বেধড়ক মারপিট করতে থাকে। সে সময় অসুস্থ স্ত্রী মাজেদা পারভিন ও শ্যালক জাহিদুর রহমান এগিয়ে এলে তাদেরকেও মারপিট করা হয়। এই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করতে ধরলে ওই নামধারী চিকিৎসকরা অশুস্থ্যর মেয়ে মাসুমা আকতারকেও বেধড়ক ভাবে মারপিট করে এবং তার মোবাইল কেড়ে নেয়।
এদিকে খবর পেয়ে তার দুই ছেলে মাজেদুর রহমান (৩১) ও মোকসেদুর রহমান (২৫) দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছালে পুনরায় ২০/২৫ জন ইন্টার্ণ চিকিৎসক মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যদের সামনে তাদের বেধড়ক মারপিট করে। এ সময় পুলিশ সদস্যরাও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন। সে সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সেখানে ভাঙচুর করে। পরে ঘটনাকে আড়াল করতে জোর করে রোগীকে ছাড়পত্র দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয় । পরে স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যস্থতায় রোগীকে পুনরায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে ইর্ন্টাণ ডাক্তাররা তাকে হাসপাতাল থেকে আবারো বের করে দেয় ।
অন্যদিকে সন্ধ্যার পর সদর থানা পুলিশ সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে স্ত্রী মাজেদা পারভিন অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় আইনের আশ্রয় নেয়ার কথাও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবার কান্নায় ভেঙে পড়ে । তাদের সকলেও কান্নায় এ সময় সেখানে হৃদয়বিদারক দৃশ্যর অবতারনা হয়। সেখানে আসা মুক্তিযোদ্ধা হেলাল উদ্দিনের পরিবার জানান, শজিমেক হাসপাতালের চিকিৎসকদের আচরণ সন্ত্রাসীদের মত। ঘটনার সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সেখানে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। ভুক্তভোগী পরিবারটি তাদের দুঃখ প্রকাশ করে এ সময় বলেন , ইন্টার্ন চিকিৎসকরা হাসপাতালে মানুষের সেবা দেবার জন্য নয় তাদের আচরনে মনে হয় সন্ত্রাসী কাজের জণ্য ট্রেনিং করছে। তাদের আচরণ মাদকাসক্ত ও পেশাগত সন্ত্রাসীদের মতো। তাদের হাতে কেউ নিরাপদ নয়। ভুক্তভোগী পরিবারটি ঘটনার সাথে জরিতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এদিকে এ বিষয়ে ঘটনার বিষয়ে র ছিলিমপুর (মেডিক্যাল) ফাঁড়ির এসআইর্ আব্দুল আজিজ মন্ডলের সাথে কথা বলা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সেখানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে একই বিষয়ে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবদুল ওয়াদুদ সাংবাদিকদের চিরাচিত নিয়মে ঘটনার সত্যতা অস্বিকার করে বলেন , রোগীর লোকজনদের সাথে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে মাত্র। কোনো মারপিটের ঘটনা ঘটেনি।
উল্লেখ্য , বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল(শজিমেক)হাসপাতালে উল্লেকিত ঘটনা অহরহ ঘটে চললেও তা যেন দেখার কেউনেই । ইত্ব পূর্বে কতিপয় উশৃংখল ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতে একই ভাবে সিরাজগঞ্জের চাকুরীজীবি ও তার পরিবার ,জয়পুরহাটের বাবা-ছেলে মারপিটের শিকার হন । পরে ওই ঘটনায় দেশ ব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয় ।পরে বারবার নিজেদের সংশোধনের কথা বলে দোষী ইন্টার্নরা মিথ্যা সাজানো ঘটনার কথা বলে নিজেরদের আড়াল করে । ফলে আবারো একই ধরনের ঘটনার অবতারনা হলো।