কলেজছাত্রীদের যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে কলেজ থেকে লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ী শহিদ আবুল কাশেম মহাবিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবিএম ফারুক সিদ্দিকীকে সাময়িক বহি:স্কার করা হয়েছে। আগে তার দ্বারা সংঘটিত নয়টি অপরাধের বর্ণনা দিয়ে গত ১১ জানুয়ারি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। সাতদিনের মধ্যে লিখিভাবে কোনো জবাব না দেয়ায় সোমবার (২০ জানুয়ারী) তাকে কলেজ থেকে সাময়িক বহিঃস্কার করা হয়।
কলেজছাত্রীদের যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করলে ওই শিক্ষক তার স্ত্রীকে শারীরিক ভাবে নির্যাতন করায় স্ত্রী সোমবার (২০ জানুয়ারী) লালমনিরহাট নারী ও শিশু অপরাধ দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন আইন (সংশোধনী/২০০৩) এর ১১ (খ) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন।
অভিযুক্ত কলেজ শিক্ষক এবিএম ফারুক সিদ্দিকী বড়বাড়ী শিবরাম গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিকীর ছেলে এবং জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্নিগ্ধা চক্রবর্তী জানান, ”অভিযুক্ত কলেজ শিক্ষক কারণ দর্শানো নোটিশের কোনো জবাব না দিয়ে উল্টো কলেজ কর্তৃপক্ষকে শাসানোর মতো সদম্ভ দেখিয়েছে। তাই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বহিঃস্কারাদেশ প্রদান করেন”। “অভিযুক্ত শিক্ষককে কারণ দর্শানো নোটিশ ও সাময়িক বহিঃস্কারাদেশের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ঠ সকল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ”শিক্ষক ফারুকের বিরুদ্ধে অর্ধশত কলেজছাত্রীর অভিযোগ রয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে বলেও জানান এই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
বহিঃস্কার হওয়া অভিযুক্ত কলেজ শিক্ষক এবিএম ফারুক সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে আনীত ৯টি গুরুতর অভিযোগ গুলোর মধ্যে হলো তিনি কলেজের সুন্দরী মেয়েদের যৌন উত্ত্যক্ত করে থাকেন, অনেক ছাত্রীকে তার ফাঁদে ফেলে যৌন হয়রানীর মতো ঘৃণ্য ঘটনা ঘটিয়েছেন, কলেজের অন্যন্য শিক্ষকদের সাথে থারাপ আচরণ করা এবং তার স্ত্রীকে প্রকাশ্য মারধর করা।
২০১০ সালে তিনি কলেজের এক হিন্দু ছাত্রীকে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে গোপনে আটকে রেখে তাকে যৌন হয়রানি করেন। এ ঘটনায় মামলা হলে তিনি ছয় মাস কারা ভোগ করেন।
স্নিগ্ধা চত্রবর্তী জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক স্থানীয় ও অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি ধরাকে সরাজ্ঞান করে থাকেন। ওই একজন শিক্ষকই কলেজের শিক্ষার পরিবেশকে একেবারে দূষিত করে তুলেছেন। তার ভয়ে অনেক ভদ্র পরিবারের লোকজন তাদের মেয়েকে এই কলেজে অধ্যয়নের জন্য ভর্তি করাতে চা না। আবার অনেক পরিবারের লোকজন তাদের মেয়েকে ভর্তি করার পর ফারুকের অশোভন আচরনে বাধ্য হয়ে মেয়েদের অন্যত্রে ভর্তি করান।
যেহেতু ফারুকের বিরুদ্ধে গুরুতর সব অপরাধের মাত্রা মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে তাই তাকে কলেজ থেকে চাকুরীচ্যুত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ঠ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে সুপারিশ করবেন কলেজ কর্তৃপক্ষ-জানালেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্নিগ্ধা চক্রবর্তী।
অভিযুক্ত কলেজ শিক্ষক ফারুকের স্ত্রী কাওছারা বেগম অভিযোগ করে বলেন, তার স্বামীর নারী লোভ তাকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। প্রতিবাদ করে কোনো ফল পাওয়া যায় না। “অবশেষে জোড়ালো প্রতিবাদ করলে সে আমাকে প্রকাশ্য মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। আমি তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি বলেও,” তিনি জানান।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, অভিযুক্ত কলেজ শিক্ষক ফারুক শিক্ষকতার পাশাপাশি স্থানীয় বড়বাড়ী বাজারে সুদের ব্যবসা করে থাকেন যেখানে প্রায় দুই কোটি টাকার সুদের ব্যবসা থেকে রমরমা ব্যবসা করে আসছেন। সুদের টাকায় তিনি সবকিছুকে নিজের আয়ত্বে রাখার অপচেষ্টাও চালান।
অভিযুক্ত কলেজ শিক্ষক এবিএম ফারুক সিদ্দিকীর সাথে ফোনে কথা হলে তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগ নূতন নয়, তিনি এটার মোকাবেলা করবেন। এরপর ফোন কেটে দিয়ে ফোনটি বন্ধ রাখেন।