নিয়ামতপুরে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে ইট পোড়াতে কাঠ-খড়ি প্রধান জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং কৃষি জমির উপর স্থাপিত এ সমস্থ ভাটা মালিকরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়ত দূষিত করছে পরিবেশ ও ক্ষতি করছে কৃষি জমির। ফলে ভাটার ক্ষতিকারক প্রভাবে চলতি বোরো মৌওসুমের শুরুতে ভটার পাশর্^বর্তী ফসলি জমিতে কৃষকরা তাদের ফসল রক্ষা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
এদিকে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোনোরকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইটভাটায় গাছের গুঁড়ি পোড়ানোয় বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও বর্জ্যে বিপন্ন হচ্ছে স্থানীয় জীববৈচিত্র ও পরিবেশ। হুমকির মুখে পড়েছে ভাটা সংলগ্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও গ্রামীণ জনপদের জনস্বাস্থ্য। অবৈধ ইটভাটার সৃষ্ট দূষণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে বয়স্ক ও শিশুরাও। প্রশাসনের কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ না থাকায় বেপরোয়া মালিকপক্ষ। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ এসব ইটভাটা বন্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নেই কার্যকর কোনো ভূমিকা।
উপজেলা সদর নিয়ামতপুরের অদুরেই গাবতলী গ্রাম ঘেঁষে কৃষি জমিতে একের পর এক গড়ে উঠছে ইটের ভাটা। এতে পরিবেশ ও ফসল উৎপাদন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এইসব ইট ভাটার মূল ক্লেন এর পাশেই বিপুল পরিমাণ কাঠ-খড়ি স্তূপ করে রাখা হয়েছে কয়লার পরিবর্তে পোড়ানোর জন্য। ইট ভাটার চিমনির ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগ বালাই ছড়াচ্ছে। ধোঁয়া ও ধূলি দূষনে বিষাক্ত হচ্ছে পরিবেশ।
নিয়ামতপুর উপজেলা প্রশাষণ সূত্রে জানা যায়, নিয়ামতপুরে রয়েছে ৫ টি ইটভাটা। ভাটাগুলো একেবারেই গ্রামের ভেতর অবস্থিত। এগুলোর একটিরও বৈধ লাইসেন্স বা কাগজপত্র নেই। বিভিন্ন গাছের গুঁড়ি ও লাকড়ি ভাটাগুলোর প্রধান জ¦ালানী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মোসাদ্দেক হোসেন শাহিন মালিকাধীন মেসার্স এসএসটি ব্রিকস (উঊঝঐ) উপজেলার মালঞ্চি মৌজার ভাবিচা ইউনিয়নে। ইটভাটাটি একেবারে প্রধান সড়কের (নিয়ামতপুর-নওগাঁ) পাশে হওয়ায় বেশীর ভাগ সময় পাকা সড়কের উপর মাটি পড়ে থাকে। একটু বৃষ্টি হলেই এ মাটি গলে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। এতে করে প্রায়শঃ দুর্ঘটনা ঘটে এখানে। এছাড়াও একই গ্রামে রয়েছে আবুল হোসেন সোনার মালীকানাধীন এমএবি ইটভাটা ও বাছের আলী খান মালীকানাধীন এসকেবি ইটভাটা। এ ভাটাগুলোর চারিদিকেই ফসলি জমি। ভাটাগুলি পাশাপাশি স্থাপন করায় এর ক্ষতিকারক প্রভাবে এলাকার কৃষি ফসল ও রবি শস্য চাষ ব্যাহত হচ্ছে এমন অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, ভাটা মালিকরা ক্ষমতাসীন দলের লোক এবং প্রভাবশালী হওয়ায় এই এলাকার তিনটি ইট ভাটায় প্রচুর ট্রাক আসা-যাওয়া করে। এতে করে গ্রামীণ মফস্মল সড়কগুলো নষ্ট হচ্ছে। ইটভাটার ধুলাবালী ও বিসাক্ত ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ আবাসনের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। গাছপালা বিবর্ণ হচ্ছে। ফসল জমির উর্বরতা কমে গেছে। তারা আরো জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর সরজমিনে যাচাই করলে কোনো ক্রমেই কৃষি জমিতে এসব ভাটা করার অনুমতি পেতনা। অতি দ্রুত ইটভাটা অপসরনের দাবি জানিয়েছের এলাকাবাসী।
সংশ্লিষ্ট ভাবিচা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ওবাইদুল হক যুগান্তরকে বলেন, “গ্রামটিতে তিনটি ইটভাটা থাকায় গ্রামের বাসিন্দারা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন। এছাড়াও গ্রামটির পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তার বোধগম্য হচ্ছেনা, কী করে এমন জায়গায় ভাটা করার অনুমতি মিলতে পারে। বিষয়টি তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার বলেছেন, কিন্তু কোনো প্রকার প্রতিকার মিলছেনা।