জাতীয় গনফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সদস্য এলাকায় অসংখ্য আন্দোলন-সংগ্রামের নেতা ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার হরদেবপুর গ্রামের কমরেড সরোজ বিশ্বাস লিভার,কিডনি,ডায়াবেটিস ও হাইপ্রেশার রোগে আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছেন। অর্থাভাবে চিকিৎসার আশা একেবারে ছেড়েই দিয়ছেন। প্রায় দু'বছর ধরে তিনি নিজ বাড়ীতে বিছানায় শয্যশায়ী। শুধু হাইপ্রেশার ছাড়া অন্য কোন রোগের ঔষধ কিনে খাওয়ার ক্ষমতা তার নেই।
এখন আর রাজনীতির কোন খোঁজ রাখতে পারেন না। অসুস্হতার প্রথম দিকে দেশে কয়েকবার ও ভারতে একবার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখালেও ডাক্তারের পরামর্শমতো ফলোআপ চিকিৎসা তো দুরে থাক সে সময়ের ব্যাবস্হাপত্র অনুযায়ী ঔষধই ঠকমতো কিনে খেতে পারেন নি। তিনি বলেন এসব রোগের চিকিৎসা খুবই ব্যায়বহুল, কয়েক লাখ টাকার দরকার। যে ক্ষমতা তার বা তার পরিবারের নেই। তিনি আক্ষেপ করে বলেন দেশের অনেক লোকই তো অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। আমিও একই পথের যাত্রী। জীবন-যৌবন ব্যায় করেছি গরীব শ্রমজীবি মানুষের শোষন মুক্তির সংগ্রামে। এখন চিকিৎসার টাকা পবো কোথাই।
সরোজ বিশ্বাসের দুই পুত্র, মাঠে বিঘেখানেক চাষযোগ্য জমি আছে। বড় ছেলে শারিরীক প্রতিবন্ধি কোন কাজ করতে পারেন না। ছোট ছেলে কখনো নিজেদের জমিতে কখনো পরের জমিতে কামলার কাজ করেন। দু'ছেলেরই স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। এমনিতেই তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরাই অবস্থা। পিতার চিকিৎসা করানোর ক্ষমতা তাদের নেই। সরোজ বিশ্বাস ও চান না সন্তানরা ধ্বংস হয়ে তার চিকিৎসা করাক। এরপর সরোজ বিশ্বাসের প্রায় শতবর্ষী মাতাও জীবিত। তার পিছনেও টুকটাক ঔষধ লাগে। ছেলের দুরঅবস্থা জন্য প্রায়ই চোখের পানি ফেলেন শতবর্ষি মা।
১৯৫০ সালের ৮ মে উপজেলার হরদেবপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন কমরেড সরোজ বিশ্বাস। পিতার নাম মৃত শশাঙ্ক বিশ্বাস। পিতা ছিলেন একজন কৃষক। সংসারিক অবস্থা ও ভাল ছিল। কিন্ত ছেলে রাজনিতীতে জড়িয়ে ও জেল -হাজতে গিয়ে ছেলের কথামতো ৩/৪ বিঘা জমি বিক্রি করে খরচ করেন। এ টাকা দিয়ে সরোজ বিশ্বাস অনেক অসহায় কমরেডকে চিকিৎসা করিয়েছেন, রাজনৈতিক কারণে বাড়িছাড়া অনেক কমরেডকে নিজ বাড়ীতে রেখে মাসের পর মাস খাওয়াছেনও। ১৯৬৮ সালে অবিভক্ত ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে সরোজ বিশ্বাাস রাজনীতিতে হাতে খড়ি নেন। ১৯৭৩/৭৪ সালে পূর্বপাকিস্তানের কমিউনিষ্ট পার্টি সদস্য হিসেবে আত্মগোপনের রাজনীতিতে যান। ১৯৭৭ সালে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন এবং ১৯৮০ সালে জেলমুক্তির মাধ্যমে পূনরায় প্রকাশ্যে রাজনীতিতে আসেন। পরবর্তিতে বিপ্লবী কমিউনিষ্ট পার্টি ( মুনির) গ্রুপে যোগদান করেন। তিনি কৃষক আন্দোলনেও অগ্রনী ভূমিকা রাখেন। অসুস্থ হবার আগ পর্যন্ত তিনি কমরেড টিপু বিশ্বসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় গসফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তিনি দলের জেলা-উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি কালীগঞ্জের সামনের সারিতে থেকে যসব আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন তারমধ্যে রয়েছে অযৌক্তিক হাট খাঁজনা বিরোধী আন্দোলন, ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন, পানচাষী ও আখচাষী আন্দোলন প্রভৃতি। এসব আন্দোলনে ব্যাপক লোক সমাগম ও দাবী আদায় হতো। তার সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টকারী আন্দোলন ছিল ১৯৮৭ সালে একটি ধর্ষনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গণনির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি গঠনের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির মাস্তান বিরোধী আন্দোলন। সে আন্দোলন দেশে- বিদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। ওয়ার্কার্স পার্টি ও কৃষক সংগ্রাম সমিতির সাথে যৌথভাবে যৌথ নেতৃত্বে তিনি এ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। এ আন্দোলনে হাজর হাজার লোক সমবেত হতে থাকে। এক পর্যায়ে তৎকালীন ক্ষমতাসীন জাপার এমপি আন্দোলন কারীদের সাথে বৈঠকে বসতে বাধ্য হন। জাতীয় পার্টির মাস্তানরা এলাকা ছেড়ে পালায়। ধর্ষনের আসামীরা পুলিশের হাতে ধরা দিতে বাধ্য হয়। সে ধর্ষনের আসামীরা ছিল জাপা এমপির গ্রামের। পুলিশ প্রথম দিকে তাদেরকে গ্রেফতারে অনিহা দেখায়।
সরোজ বিশ্বাস বাংলাদেশ পানচাষী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক। রাজনীতি করতে গিয়ে রাজনীতির পিছনে জীবন-যৌবনসহ ৪/৫ বিঘা জমি বিক্রির টাকা ঢাললেও তিনার খোঁজ-খবর কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ আর এখন রাখেন না। তিনি অসুস্থ হবার পর এখন কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনার নাম আছে কি তাও বলতে পারেন না। মাঝে মধ্যে এলাকার দু'একজন শিষ্য ছাড়া কেউ আর তার খোঁজ নেন না। উপযুক্ত চিকিৎসা পেলে তিনি সুস্থ হয়ে আবারো রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারতেন।