অপেন সিক্রেট, অনিয়ম, দুর্নীতি, মিষ্টার পার্সেন্টিজ ও ভক্ষকদের দুর্নীতির মহাযজ্ঞ যেমনি অনেকেই ভূক্তভোগী তেমনি গণমাধ্যমে অহরহ অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতি ও উন্নয়ন কাজে বেসামাল পার্সেন্টিজের সংবাদ অনেক সময় শিরোনাম হয়ে আসছে। ৭ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আবারও উল্লেখ করেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। দুর্নীতি যেই করুক, যত শক্তিশালীই হোক না কেন তাদের ছাড় দেয়া হবে না। দুদক কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদকেও বিভিন্ন অনুষ্ঠান, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রায় সময়ই সোচ্ছার কন্ঠে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখা যায়।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই ক্যাসিনো বিরোধী শুদ্ধি অভিযান হয়েছে এবং তা যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে। গ্রেফতারকৃত ক্যাসিনোর গডফাদাররা আইন শৃংখলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটদের নিকট ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিতে ক্যাসিনোর সাথে জড়িত নেপথ্য নায়কদের কথাও বলেছে। এমনকি সপ্তাহে ও মাসিক ভিত্তিতে কাহাকে কত টাকা দিয়েছে তাও বলেছে। এমনকি তাদের কোটি, কোটি টাকার কাজের টেন্ডার পেয়ে দেয়াসহ কাজের সময় কাহাকে কি হারে পার্সেন্টিজ দিতে হয়েছে তাদের নাম, পদবীও বলেছে। এতদিন পরও মিষ্টার পার্সেন্টিজ গডফাদারদের মধ্যে এখনও অনেকই অধরা, জবাবদিহীতা ও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকাতে এ নিয়ে জনমনে রয়েছে আলোচনা, সমালোচনা, সন্দেহ ও প্রতিক্রিয়া। এক সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আক্ষেপ করে বলেছিলেন, হানাদার বাহিনী এদেশকে জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে, লুন্ঠন করে দেশের নারী, পুরুষ ও কোলের শিশুদেরকেও নারকীয়ভাবে হত্যা করেছে। সোনার বাংলাকে শ্মশানে পরিণত করেছে। কিন্তু কিছু চোর রেখে গেছে। তাদের নিয়ে গেলে বাঁচতাম। যা আজও থেমে থাকেনি। সোনামি ও গোর্কির তান্ডবের মতো এগিয়েই চলছে। প্রায় সময় বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, অফিস আদালতের দুর্নীতি, অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যহার, ফাইভ পার্সেন্ট, টেন পার্সেন্ট ও পনের পার্সেন্ট মিষ্টার পার্সেন্টিজের লেনদেনের কথা শুনা যায়। অনেক সময় উন্নয়নের কাজ না করেও সবকিছু ভাগাভাগি করে আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর ঘটনাও কম চোখে পড়েনি। অনেক উন্নয়ন কাজে রডের বদলে বাঁশের কঞ্চা, মেহগণি ও সেগুনের বদলে শিমুল কাঠ ব্যবহারেরও নজির রয়েছে। নিবন্ধে প্রকাশার্থে অনেক সময় সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতি, আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার, পার্সেন্টিজ ও উন্নয়নের কাজের বেহাল অবস্থা জানিয়ে অনেকেই ডাকযোগে পত্র প্রেরণ করে থাকে। যা পড়ে মনে হয় এসব অনিয়ম, দুর্নীতি ও পার্সেন্টিজ যেন আলকাতরা ও পোড়া মবিলের খনি।
কিন্তু ডাকযোগে পাওয়া এসব চিঠির লেখকদের ঠিকানায় গড়মিল এবং যোগাযোগের মাধ্যম উল্লেখ না থাকাতে অনেক সময় ইচ্ছা থাকলেও টেকনিক্যাল কারণে তা নিবন্ধে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তদোপরি সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া কাহাকেও প্রশ্নবিদ্ধ ও সমালোচিত করাও কোনো নিবন্ধক ও স্বচ্ছ সাংবাদিকতার মধ্যে পড়ে না। তারপরও পত্রে তথ্য, তত্ত্ব, উপাত্তের বিষয়বস্তু যাচাই, বাছাই ও অনুসন্ধ্যান করে যদি সঠিক ও বস্তুনিষ্ট হিসেবে তা গণ্য হয় তবে তা নিবন্ধে উপস্থাপন করতে দ্বিধা সংকোচ না থাকারই কথা। একজন নিবন্ধক (কলামিষ্ট) ও সাংবাদিক বাস্তবতার আলোকে সত্য প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই বলে
যে কাহাকেও প্রশ্নবিদ্ধ ও সমলোচিত করতে উৎসাহিত না থাকারই কথা। যা হলুদ সাংবাদিকতা বা ইয়েলো জার্নালিজমেরই নামান্তর। চিঠিতে সঠিক নাম ঠিকানা ও যোগাযোগের মাধ্যমে সঠিক উল্লেখ পাওয়াতে অনেক সময় তা নিবন্ধে তুলে ধরা হয়ে থাকে। ইতোপূর্বে পাকুন্দিয়া ডিগ্রী কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপকের লেখা চিঠি পেয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার সংক্রান্ত দুটি ঘটনা ইতোমধ্যে নিবন্ধে প্রকাশিত হয়েছে। তাই চিঠি লেখকদের বলব, কোনো বিষয়ে লেখলে, সঠিক ঠিকানা ও যোগাযোগ মাধ্যম উল্লেখ পূর্বক বস্তুনিষ্ট ব্যাপারে লেখবেন। কাহাকেও উদ্দেশ্য প্রনোধিত, অহেতুক প্রশ্নবিদ্ধ ও সমালোচিত না করার ব্যাপারে না লেখাই ভালো। এছাড়া অনেকেই ইয়েলো সাংবাদিকতায় বিশ্বাস করে না। আবার অনেকেরই সত্য উদঘাটনে সাহসিকতারও কমতি নেই। যার রয়েছে ভুরি ভুরি প্রমান, উদাহরণ ও দৃষ্টান্ত। মানুষ শ্রদ্ধাভরে আজও স্মরণ করে থাকে মরহুম প্রথিতযশা সাংবাদিক ও নিবন্ধক দৈনিক আজাদ এর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আকরাম খাঁ, ইত্তেফাকের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, খন্দকার আব্দুল হামিদ, এ.বি.এম মূসাসহ দেশ বরেণ্য প্রমুখ সাংবাদিকদের কথা। স্মরণ করা হয় প্রথিতযথা দেশবরেণ্য কলামিষ্ট বদরুদ্দীন ওমর, ফরহাদ মাজহার, ড. মাহবুবউল্লাহসহ আরও অনেকের কথা।
অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও মিষ্টার পার্সেন্টিজ ব্যাঙের ছাতার মতো কি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা অনেক সময় ভাবতে গিয়েও হিমশিম খেতে হয়। ১৯৮০ সালের মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইনের ১৬ নং আইন সংশোধন করা হয়। যা বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০ নামে অভিহিত। এই আইনে ন্যুনতম এমবিবিএস ও বিডিএস প্রাপ্তগণ ব্যতিত অন্য কেউ তাদের নামের আগে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করতে পারবে না। কোনো ব্যক্তি এ আইনের যথাযথ ধারার বাইরে গিয়ে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করলে তজ্জন্য মোবাইল কোর্টে ৩ বছরের কারাদন্ড বা ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। এছাড়া এ নিয়ম অব্যাহত থাকলে পুনরাবৃত্তির জন্য প্রত্যেকবার বর্ণিত দন্ডের অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা দন্ডের বিধান রয়েছে।
যদিও লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এক শ্রেণীর অসাধু, অনভিজ্ঞ ও ন্যুনতম শিক্ষায় শিক্ষিত ও হাতুড়ে চিকিৎসক, ডাক্তার পদবীর ভিজিটিং কার্ড, ডাক্তার নামের প্রেসক্রিপশন পত্র, বাহারি চেম্বার ও আকর্ষনীয় সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে অহরহ রোগীদের সাথে প্রতারণা করে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের প্রেসক্রিপশনে ইংরেজীতে ঔষধের নাম লেখাতেও ভুল আর ভুলের সমারোহ। ফার্মেসীতেও হাস্যরস ও কৌতুকের সীমা পরিসীমা থাকে না। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং কিশোরগঞ্জ শহরে এমন ফিরিঙ্গি মার্কা ডাক্তার নামের আদলে অনেকগুলো ডেন্টাল চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে। যা ভূক্তভোগীদের জন্য নিদারুন ব্যথা বেদনার কারখানা বা কারণ বললে অত্যুক্তি হওয়ার নহে। যদিও এসব অনিয়ম তদারকির জন্য প্রত্যেক জেলাতেই সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছে। এ ধরণের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও তদারকিতে আরও অনেক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কমতি নেই।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ০৯/৭/১৯ ইং ঢাকার রিপোটার্স ইউনিটে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনের তথ্য, উপাত্ত, বিশ্লেষণ করে একাদশ নির্বাচনকে অনিয়মের খনি ও কলংকজনক অধ্যায় বলে প্রধান নির্বাচন কমিমনার (সিইসি) কে.এম নূরুল হুদাকে দোষারোপ করতে দ্বিধাবোধ করেননি। তিনি নির্বাচনে ভোটের অনিয়মেরও একটি নাতি দীর্ঘ ডাটা ও চিত্র তুলে ধরেছেন (যুগান্তর ১০/৭/২০১৯ ইং)।
জানা যায়, ০৯/০১/২০২০ ইং দুদক অভিযান চালিয়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ তাজুল ইসলামকে ৫৫ হাজার টাকাসহ আটক করা হয়। পরে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে বিছানার নীচে এবং একটি ট্রাভেল ব্যাগ থেকে আরও টাকা উদ্ধার করা হয়। তার পরিমাণ ১ কোটি ৮৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা। পিআইওরাই উপজেলার টি.আর, কাবিখা, কাবিটা ও কিছু উন্নয়ন কাজের তদারকি করে থাকে। দুই কোটি টাকাসহ পার্বতীপুরের পিআইও আটক, এই মর্মে ১০/০১/২০২০ ইং সংবাদ প্রকাশিত হয়ে থাকে।
১২/০১/২০২০ ইং গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, সঞ্চয় পত্র জালিয়াতি করে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে মোস্তাক আহমদ ও তার স্ত্রী মরশিদা আফরিন। তাদের সম্পদের মধ্যে রয়েছে গুলশান- ২ এ ১০০ কোটি টাকা মূল্যের একটি নয়তলা বাড়ী, উত্তরায় শত কোটি টাকা মূল্যের ৬ তলা বাড়ী, উত্তর খান এলাকায় কোটি টাকা মূল্যের একটি দোতলা বাড়ী, ব্যাংকে ২ কোটি টাকা, বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট ও জমি। ২১টি ভূয়া সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ২টি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে ৭ জানুয়ারি তাদের গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। এরপর বেড়িয়ে আসে তাদের অবৈধ সম্পদের নানা তথ্য। আর এ জালিয়াতি চক্রের মূল হোতা হচ্ছে একজন শিল্পপতি। গ্রেফতারের স্বার্থে আগেই তার নাম প্রকাশ করতে চায়নি সিআইডি।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ৫২টি ব্যাংক হিসাব খুঁজে বেশ তথ্য পায় সিআইডি। এসব একাউন্টে জমা হয়েছে ৪১০ কোটি ৩০ লাখ ৭১ হাজার ৫৫৩ টাকা। বর্তমানে তার একাউন্টে স্থিতি রয়েছে ২৯ কোটি ৬৫ লাখ ৮৪ হাজার ১৪৫ টাকা। বাকি টাকা বিভিন্ন সময়ে উত্তোলন করা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে এ পর্যন্ত ২৭৮ কোটি ৯ লাখ ৩৯ হাজার ৮৯৪ টাকা উত্তোলনের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ মিলেছে। যুবলীগের অপর বহিস্কৃত
নেতা জিকে শামীমের ১৯৪টি ব্যাংক হিসাবের সন্ধ্যান পাওয়া গেছে। এসব একাউন্টে ৩২৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা জমা রয়েছে। তার নামে ব্যাংক ঋণ রয়েছে ১৪৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। কেবল খালেদ ও শামীমই নহে ক্যাসিনো বিরোধী শুদ্ধি অভিযানে হাই প্রোফাইল যাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকেরই বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য বেড়িয়ে আসছে। এই মর্মে দৈনিক যুগান্তরে ৯ জানুয়ারি ২০২০ ইং একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। তবে লক্ষ্যণীয় যুবলীগের গ্রেফতারকৃত গড ফাদাররা নাটের গুরু, সরকারি কর্মকর্তাসহ আরও যাদের নাম বলেছে এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তাদের জবাব দিহিতাতো দূরের কথা এখন পর্যন্ত কোনো সংস্থা তাদের ধারে কাছেও যায়নি বলে জনমনে নানা ধরণের প্রশ্ন, আলোচনা ও সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। যাকে কোনো অবস্থাতেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।
৫ জানুয়ারি ২০২০ ইং গণমাধ্যমে প্রকাশিত আরেকটি সংবাদ থেকে জানা যায়, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে (রাকাব) দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার ভয়াবহ তথ্য মিলেছে। সম্প্রতি ব্যাংকটির নিরিক্ষায় ৬৫৫ কোটি টাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। এর মধ্যে ১৬৭ কোটি টাকার কোনো হদিস পায়নি নিরিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। ৪৮৮ কোটি টাকার হিসাবে গড়মিল পেয়েছে তারা। নিরিক্ষা প্রতিবেদনে সরকারি বিশেষায়িত এ ব্যাংকটির এমন নাজুক চিত্র ভেসে ওঠে। এমনিভাবে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কত যে বেরসিক লুটপাট ও উন্নয়নের কাজে মিষ্টার পার্সেন্টিজ বাসা বেঁধেছে এসবের খবর রাখেই বা কজনা। জানা যায়, অনলাইনে জুয়া খেলার জন্য রাজশাহী প্রিমিয়ার ব্যাংকের ক্যাশ ইনচার্জ শামসুল ইসলাম ভল্ট থেকে ৩ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা সরিয়ে নিয়েছে।
প্রায় দেড় বছর আগে কিশোরগঞ্জ কালেক্টরিয়েটের এলএও (ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা) সেতাফুলকে ৫ কোটি টাকার দুর্নীতির মামলায় আটক করা হলেও শুনা যায় দুদক মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল না করাতে জনমনে অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেকেরই প্রশ্ন এর সাথে কি শুধু শুধু এলএও সেতাফুলই জড়িত না এর সাথে নাটের গুরু গডফাদার, গডব্রাদার ও পার্সেন্টিজ খেকো আরও কেউ আছে ? যত তাড়াতাড়ি এ মামলাটির আদ্যোপান্ত তদন্ত করে অভিযোগপত্র আমলে নেয়া হয় ততই মঙ্গল বলে অনেকেই মনে করে থাকে। আর যদি কোনো বেরসিক জারি, সারি, ভাটিয়ালী ও পল্লীগীতির সুরে গাইতে থাকে মন মাঝি তোর বৈঠা নেরে আমি আর গাইতে পারলাম না। তবে হয়তো দুদকের কিছু বলার সুযোগ আর নাও থাকে পারে। তবে একথা সত্য দুর্নীতির মামলায় সাময়িক বরখাস্তকৃত (ওএসডি) পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমান ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করে অভিযোগপত্র (ঈযধৎমব ঝযববঃ) দাখিল করেছে দুদক। তাই অভাজনদের প্রশ্ন দেখা দিলেও সেতাফুলের সাথে সংশ্লিষ্ট নাটের গুরু, দানব, রাক্ষস ও মিষ্টার পার্সেন্টিজ খেকোরা এমনিভাবে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে বলেও অনেকেই মনে করে না। তদোপরি এ ব্যাপারে নিরপরাধ কেহ শাস্তি পাক তাহাও কারও কাম্য নয়। যেদিন দুদকের অভিযোগপত্র প্রকাশ পাবে সেদিন হয়তো অভাজনদের মতো অনেকেরই ধারণা ও ভুল ভেঙেও যেতে পারে। হয়তো সময়ই এক সময় তা বলে দিতে পারে। যদি এ ব্যাপারে নাটের গুরু, কুশীলব ও গড ফাদার ও মিষ্টার পার্সেন্টিজের কেহ সুস্পষ্ট সন্দেহের তালিকায় থেকে থাকে তবে অভিযোগপত্র দাখিলের পূর্বেই উদঘাটন করাই শ্রেয় বলে অনেকেরই ধারণা। তবে এ ব্যাপারে দুদকের ধারণা, কর্মকৌশল ও অভিজ্ঞতাকেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। ২০০৪ সালে দুর্নীতি দমন ব্যুরো থেকে দুদক সৃষ্টির অন্তরালে রয়েছে দুদকের আরও গতিশীল ও সমানে এগিয়ে নেয়া।
সরকারি বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কত যে, অনিয়ম দুর্নীতির ছড়াছাড়ি ও পার্সেন্টিজের রহস্যময় নাটক হচ্ছে গণমাধ্যমে এর কতটাই বা প্রকাশিত হয়ে থাকে। তদোপরি প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপোষহীন প্রত্যয় ব্যক্ত করার পরও যদি দুর্নীতি সামনে এগিয়ে চলে তবে মানুষের দুঃখ বলার জায়গায় বা কোথায় ? ঘুষ, দুর্নীতি, অফিস আদালতে ক্ষমতার অপব্যবহার ও উন্নয়ন কাজে রডের বদলে বাঁশ, মেহগনি ও সেগুনের বদলে শিমুল কাঠ ও সিমেন্টের সাথে পরিমানের চেয়ে অতিরিক্ত বালু, ভূয়া ডাক্তারদের অপচিকিৎসা ও মিষ্টার পার্সেন্টিজ বন্ধই মঙ্গল। তদোপরি পিআইও এত টাকার দুর্নীতি করলেও তার সাথে আরও যে সমস্ত গডফাদার ও নাটের গুরু রয়েছে তাদের অনুসন্ধান, সঞ্চয় পত্র প্রোফাইল কেলেংকারি, ক্যাসিনো মামলার নাটের গুরু, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) ৬৫৫ কোটি টাকার অনিয়ম, দুর্নীতির সাথে জড়িত দানব, রাক্ষস ও কিশোরগঞ্জের এলএও সেতাফুলের সাথে দুর্নীতিতে জড়িত দানব, ভূত ও ইবলিশদের স্বরূপ উদঘাটনই জনপ্রত্যাশা। অনেকের বড় বড় কথা ও কাজে কর্মে জমিদারি ভাব প্রকাশ পেলেও বাস্তবে ওদের পেট আলকাতরা ও পোড়া মবিলের ন্যায় অনিয়ম, ঘুষ ও দুর্নীতির খনি। মোদ্দা কথা ওদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও পার্সেন্টিজের দিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা থাকলে কোনদিনই এসব কিছু আয়ত্বে আনা সম্ভব নয়। প্রয়োজন কথা ও কাজের সমন্বয়, ত্যাগ, জমিদারি হাবভাব পরিহার ও জাতীয় স্বার্থে সামনে এগিয়ে যাওয়া। পরিশেষে বলব, দুর্নীতিবাজদের মূলমন্ত্র হচ্ছে, স্বার্থের জয়ধ্বনি। স্বার্থ ব্যতিরেখে তাদের কোনো দর্শন সচরাচর দৃশ্যমান হয় না। চামচা, চাটুকারীতা, তোয়াজ ও পদলেহনই ওদের ভূষন। এসব দেখে অনেকেই ভেবে থাকে যেন কানার হাট বাজার।
এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট