পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার অন্তর্গত "ঢালারচর "একটি ইউনিয়ন। ইউনিয়নটি সম্পূর্ণই পদ্মা নদীর চরাঞ্চল দ্বারা গঠিত। বেড়া উপজেলা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দুরে এই ঢালারচর। ঢালারচর ইউনিয়নটি দুর্গম এবং চরাঞ্চল এলাকা। এর দক্ষিণে পদ্মা নদী; নদী পাড় হলেই রাজবাড়ী জেলা শহর। পুর্ব দিকে যমুনা নদী; নদী পাড় হলেই আরিচা মানিকগঞ্জ জেলা। এই চরাঞ্চল ও চরমপন্থীর আঁতুড়ঘর হিসেবে বিখ্যাত এই ইউনিয়নটি আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে বলে জানান এলাকাবাসী।
সরেজমিনে ঘুরে একাধিক প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আশির দশকে ঢালারচর ইউনিয়নে এমনও গ্রাম ছিল যে গ্রাম ঘুরলেও লেখার জন্য একটি কলম ও কাগজ মিলতো না। ছিল না কোন রাস্তা-ঘাট,স্কুল- কলেজ, হাট-বাজার বা বিদ্যুৎ। সারা ইউনিয়নে খুজলে পাওয়া যেত না একটি টিনের ঘর। ছিল শুধু বন ও ছনের এক বা দোচালা কাঁচা মাটির কুড়ে ঘর। চারপাশে শুধু বালি আর বালির ধুধু করা মরুভূমির ন্যায় বালির চর ও কাশবন।
এ এলাকার অধিকাংশ জনবসতি পশুপালন, কৃষি ও মৎস্য স্বীকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। ইউনিয়নটি বহুকাল পুর্ব হতেই পদ্মা নদীর ভাঙ্গনের স্বীকার হত। পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে বিলীন যেত চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষের ভিটে বাড়ী জমি জমা সহ সহায় সম্বল। পদ্মার ভাঙ্গনে একপাড় বিলিন হয়ে যেত পুনরায় চর জাগত নদীর অন্যপাড়ে। নদী ভাংঙ্গা অসহায় মানুষগুলো তাদের ঘর বাড়ী গবাদি পশু নিয়ে নদীর অন্যপাড়ে জেগে উঠা চরে বসতি গড়ে তুলত। এভাবে পাশাপাশি গড়ে উঠতে শুরু হয় বর্তমান ঢালারচরের অসংখ্য লোকের বসতি ও কয়েকটি গ্রাম। এমনও কিছু পরিবার ছিল তাদের জীবনে ৪/৫ বারও নদী ভাঙ্গনের স্বীকার হয়েছে বলে জানা যায়। এখন আর নদী ভাঙ্গনে স্বীকার হয় এ এলাকার মানুষ। ঢালারচরের মানুষ একসময় বাদাম চাষের উপর নির্ভশীল ছিল তবে চারপাশে এখন বেড়িবাধ দ্বারা বেষ্ঠিত হওয়ায় ঐসকল জমিতে তারা সকলরকম ফসল ফলাতে সক্ষম।
সেই অবহেলিত ঢালারচর এখন ডিজিটাল বাংলাদের অংশ হিসেবে পরিণত হয়েছে। এ এলাকার মানুষের জীবন যাত্রা আরও সহজ হয়েছে ট্রেন চলাচলের কারণে। এলাকার মানুষ ঢালারচর থেকে পাবনা, ঈশ্বরদী, রাজশাহী এবং ঢাকাসহ সারা দেশের সাথে সহজেই যোগাযোগ,ব্যবসা-বাণিজ্য এবং প্রয়োজনীয় কাজকর্ম করতে পারবেন। গত (২৬জানুয়ারী) সকাল সাড়ে ১১টার সময় সেই ঢালারচরে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢালার চর এক্সপ্রেস ট্রেনের উদ্বোধন করেন।
এখানে হয়েছে হাট-বাজার,সরকারি-বেসরকারি অনেক মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মসজিদ-মাদ্রাসা। অনেক ছেলে মেয়ে সুশিক্ষা অর্জন করে সরকারী চাকরীসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছেন। হয়েছে উপজেলার সাথে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা। হয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। সারা ঢালারচরে হয়েছে বিদ্যুতায়ন। এখন প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ, টিভি, ফ্রিজ,ডিশ লাইন ও আছে। এ ছাড়া দুই লেন বিশিষ্ট সিএমবি হাইওয়ে,ব্রিজ, কালভার্ট হয়েছে এই ঢালারচরে। এখানে সন্ত্রাসীদের প্রভাব আর নেই বললেই চলে জানান এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে ঢালারচর ইউপি চেয়ারম্যান কোরবান আলী জানান, আমাকে ঢালার চরের জনগন ভোট দিয়ে তিনবার নির্বাচিত করেছে। আমি আমার ঢালারচর ইউনিয়নের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। এ ইউনিয়নে নেই নদী ভাঙ্গন, হয় না বাল্য বিয়ে, নেই মাদক, নেই সন্ত্রাসীদের প্রভাব। তবে এটা কলেজ হলেই পরিপুর্ণ হয়ে যাবে আমার ইউনিয়নটি।