দাম ভালো, রোগ বালাইয়ের ঝুঁকি নেই, এছাড়াও সেচ কম লাগার কারণে দিন দিন ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবছর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮২৫ হেক্টর জমিতে আবাদ বেশি হয়েছে। এ ছাড়া কৃষি ভর্তুকি বা প্রনোদনা দেওয়ার কারণে ভুট্টা চাষে আরও বেশি ঝুঁকেছেন কৃষকরা। মাঠের পর মাঠ সবুজ পাতার আড়ালে হাসছে হলুদ রঙের ভুট্টা।মাথায় লাল ফুল ও গায়ে হলুদ বর্নের এসব ভুট্টা দোল খাচ্ছে বাতাসে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বছর ১৫শ’ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে ১৩ হাজার ২শ’ কৃষক দুই হাজার ৩২৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চলতি বছর ৮২৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ বেশি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উন্নয়ন শাখায় কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস জানান, ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধির জন্য কৃষি বিভাগ কৃষকদের সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করছে। এ ছাড়া চলতি বছর সরকার কালীগঞ্জ উপজেলার ৮০০ জন চাষিকে প্রনোদনা ও ৬৪ জন চাষিকে প্রদর্শনী প্লট করার জন্য সহযোগিতা করেছেন। ৮০০ চাষির প্রত্যেককে ২ কেজি করে ভুট্টার বীজ, ২০ কেজি ডিএপি (ড্যাপ সার) ও ১০ কেজি এমওপি (পটাশ) সার বিনামূল্যে দিয়েছেন। এ ছাড়া রাজস্ব খাত থেকে ৬০ জন ও এনএটিপি (ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রোজেক্ট) প্রকল্পের আওতায় ৪ জনসহ মোট ৬৪ জন কৃষককে ভুট্টার ওপর প্রতর্শনী প্লট দেওয়া হয়েছে। এসব কৃষকের প্রত্যেক কে নগদ ১৫শ’ টাকাসহ সার, কীটনাশক, সাইনবোর্ড বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ২৩২৫ হেক্টর, ২০১৮-১৯ অর্থ বছেরে ১৪৫০ হেক্টর, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৩৫০ হেক্টর, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ১১০ হেক্টর, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ১৩৫ হেক্টর ও ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ১০৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগের বিগত ৬ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এই উপজেলায় দিন দিন ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে- কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা, নিয়ামতপুর, ত্রিলোচনপুর, হাসানহাটি, তিল্লা, ঈশ্বরবাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের কৃষকরা ভুট্টার আবাদ বেশি করেছেন। উপজেলার ঈশ্বরবা গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদীন জানান, ধানের চেয়ে ভুট্টায় লাভ বেশি। তিনি ৩৩ শতকের ৩ বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। এরমধ্যে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় দেড় বিঘা জমিতে প্রদর্শনী প্লট ও বাকি দেড় বিঘা জমিতে নিজে চাষ করেছেন। গত বছর তিনি বিঘা প্রতি জমিতে গড় ৪৫ মণ করে ভুট্টা পেয়েছিলেন।
তিনি আরও জানান- সার, বীজ,কীটনাশক, পরিচর্যা সেচসহ বিঘ প্রতি প্রায় ১০/১১ হাজার টাকা উৎপাদন খরচ হিসেবে ব্যয় হয়। চলতি বছরও ভালো ভুট্টার আবাদ পাবেন বলেও তিনি আশা করেন।
একই গ্রামের কৃষক তারিকুল ইসলাম জানান, তিনি ৩৩ শতকের দুই বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তিনি নগদ ১৫শ’ টাকাসহ সার, বীজ ও কীটনাশক পেয়েছেন।
তিনি আরও জানান- ভুট্টা আবাদ করতে সেচ, সার, বীজ, পরিচর্যা ও কীটনাশকসহ বিঘা প্রতি অনুমানিক ১১/১২ হাজার টাকা খরচ হয়। ভুট্টা ভাল হলে প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৫০ মণ ফলন পাওয়া যায়। বাজারে গত বছর কাঁচা ভুট্টার মণ ৪৫০ টাকা ও শুকনা ভুট্টার মণ ৭৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। ফলন ভালো হলে খরচ ওঠার পর অর্ধেক লাভ হবে বলে তিনি আশা করেন।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান জানান, উৎপাদন খরচের চেয়ে লাভ বেশি হওয়ায় বিগত অন্য বছরের তুলনায় কালীগঞ্জ উপজেলায় এবার সবচেয়ে বেশি ভুট্টার আবাদ হয়েছে। তাছাড়া ভুট্টা মানুষের জন্য পুষ্টিকর খাবার। এ ছাড়া এখন পোল্ট্রি ও মাছের খাবারসহ বিভিন্ন খাবারে যুক্ত হয়েছে ভুট্টা। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে ভুট্টা চাষিদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহিদুল করিম বলেন, ‘ভুট্টা চাষে ঝুঁকি কম, আবার লাভও ভালো, যার কারণে আগের থেকে ভুট্টা চাষে চাষিদের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে। এ ছাড়া কৃষকদের ভুট্রা আবাদ করার জন্য সার, বীজ, কীটনাশক ও নগদ টাকা প্রনোদনা দেওয়া হয়েছে। ভুট্টা আবাদে সেচ খরচ কম লাগে। এ ছাড়া ভুট্টায় তেমন কোনও রোগ-বালাই নেই।