সরকার রেল যাত্রাকে নিরাপদ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। সেজন্য রেলস্টেশনগুলোতে ইন্টিগ্রেটেড সিকিউরিটি সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফলে দেশের সব রেলস্টেশন ও রেলপথ যাত্রীদের নিরাপদ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকার কমলাপুর ও চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে এ পদ্ধতির নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করা হবে। একইসঙ্গে প্রযুক্তি বাস্তবায়নের জন্য রেলস্টেশনের আশপাশে দেয়াল নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রেলে ভ্রমণকারী কোনো যাত্রী যেন কোনো প্রকার অবৈধ মালপত্র নিয়ে প্রবেশ বা পরিবহন করতে না পারে সেজন্য বডি স্ক্যানার ও লাগেজ স্ক্যানার দিয়ে তাদের মালপত্র পরীক্ষা করা হবে। দেশের প্রতিটি রেলস্টেশনকে ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালুর অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। আর পদ্ধতিটি চালু হলে অবৈধ অস্ত্র, মাদক বা অবৈধ কোনো পণ্য নিয়ে কেউ ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবে না। একইসঙ্গে যাওয়ার জন্য একটি পথই ট্রেনে নির্ধারিত থাকায় প্রত্যেক যাত্রীকে অবশ্যই টিকেট কেটে ট্রেনে উঠতে হবে। এজন্য প্রাথমিকভাবে কমলাপুর ও চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের দুটো স্টেশনের সব খোলা পথ বন্ধ করে সিলগালা করে দেয়া হবে। পাশাপাশি নিরাপত্তায় বর্তমানের চেয়ে আরো অনেক বেশি নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হবে। তাছাড়া ওসব মেশিন অপারেট করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
সূত্র জানায়, রেলস্টেশনগুলোতে নতুন প্রযুক্তি বাস্তবায়নের পর সব যাত্রীকে একমুখী অবস্থানে যাওয়া-আসা করতে হবে। ফলে কোনো যাত্রী অবৈধ কোনো পণ্য রাস্তা থেকে গ্রহণ করলেও স্টেশন দিয়ে তা নিয়ে যেতে পারবে না। তাছাড়া টিকেটবিহীন যাত্রীরা যেহেতু একটি ফটক দিয়ে পরীক্ষাপূর্বক বের হবেন, তাই টিকেট না কেটে কোনো অনিয়ম করলে বাধ্য হয়েই যাত্রীকে জরিমানা গুনতে হবে। ফলে বন্ধ হবে বিনা টিকেটে রেলভ্রমণের পথ। ফলে রেলওয়ের রাজস্ব আয় বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশি আয় বাড়বে এবং রেলস্টেশনগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
সূত্র আরো জানায়, রেলস্টেশনের নিরাপত্তা উদ্যোগ বাস্তবায়নে ইতোমধ্যেই রেলপথ মন্ত্রণালয় নিজস্ব অর্থে একটি বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ইন্টিগ্রেটেড সিকিউরিটি সিস্টেম নামে ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পুরোদমে চলমান রয়েছে। প্রকল্পের জন্য দুই স্টেশনে পাইলট প্রকল্পে তিনটি লাগেজ স্ক্যানার ও পাঁচটি বডিস্ক্যানার কেনা হবে। ঢাকা রেল স্টেশনে তিনটি বডি স্ক্যানার ও চট্টগ্রামের জন্য দুটি বডি স্ক্যানার বসানো হবে।
এদিকে বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের প্রায় সব স্থানই খোলা। ফলে ইচ্ছে করলেই যে কোনো যাত্রী টিকেট ছাড়াই রেল ভ্রমণ করতে পারে। বিনা টিকিটের অনেক যাত্রীই স্টেশনের মূল ফটক দিয়ে বের না হয়ে খোলা স্থান দিয়ে পালিয়ে যায়। ফলে রেলের নিরাপত্তা কর্মী ও দায়িত্বপ্রাপ্তরা ট্রেনে আসা যাত্রী সবার টিকিট পরীক্ষা করতে পারেন না। তাতে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে রেলওয়ের মতো বিশাল প্রতিষ্ঠানে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেও এতো বছরেও লাভের মুখ দেখতে পারছে না।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজস্ব খাতে বাস্তবায়িত হওয়া এ পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে পর্যায়ক্রমে বৃহৎ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সকল রেলস্টেশনকে এর আওতায় আনা হবে।