এতদিন দেশের অন্যান্য অঞ্চলে চাষ হলেও মরুভূমির স্কোয়াশ প্রথম বারের মতো গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে চাষ হচ্ছে। ফলে কৃষিতে সূচিত হলো আরেকটি নতুুুন অধ্যায়। একই সাথে স্কোয়াশ চাষে বাড়ছে কৃষকদের আগ্রহ।
স্কোয়াশ মূলত উত্তর আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চাষ হয়ে থাকে। স্কোয়াশ অনেকটা দেখতে শশা আকৃতির। এটি শশার মতো লম্বা হলেও রং মিষ্টি কুমড়োর মতো। উচ্চ ফলনশীল জাতের স্কোয়াশ ভাজি, মাছ ও মাংসের তরকারিতে রান্নার উপযোগী, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এছাড়া এটি সালাদ হিসেবেও খাওয়া যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের রামডাকুয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য গোলাম মোস্তফা তিস্তার চরাঞ্চলে ৫৫ শতাংশ জমিতে স্কোয়াশ চাষ করেছেন। এ জমিতে তিনি প্রায় ৩ হাজার ৫'শ চারা রোপণ করেছেন। স্কোয়াশের চারাগুলো এখন প্রায় ৭০ সে. মি লম্বা হয়েছে ও প্রতিটি গাছে ১০-১৪ টি স্কোয়াশ ধরেছে। সে অনুপাতে ওই জমিতে আনুমানিক ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার পর্যন্ত স্কোয়াশ উৎপাদন হতে পারে বলে আশাবাদী ওই কৃষক। প্রতিটি স্কোয়াশের ওজন ৮শ গ্রাম থেকে ১ হাজার গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৭ থেকে ৯ লক্ষ টাকা। যা উৎপাদন খরচের তুলনায় কয়েকগুণ বেশী।
স্কোয়াশ রোপণের দিন হতে ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে স্বল্প সময় ও অল্প খরচে অন্যান্য সবজির চেয়ে কয়েকগুণ বেশী লাভ হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন ওই কৃষক।
সুন্দরগঞ্জের প্রথম স্কোয়াশ চাষী অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য গোলাম মোস্তফার সাথে কথা হলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, "দেশের বিভিন্ন জেলায় স্কোয়াশ চাষে কৃষকরা লাভবান হওয়ায় আমার মধ্যেও আগ্রহ জাগে। চাকরি থেকে অবসর নিয়ে চরাঞ্চলের বালু জমিতে স্কোয়াশ চাষ শুরু করি। এ পর্যন্ত আমার ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা খরচ দাঁড়িয়েছে। আশা করি ১৫ দিনের মধ্যে স্কোয়াশ বাজারজাত করতে পারবো।"
তিনি আরও বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে স্কোয়াশের ভালো বীজ ও চাষের প্রয়োজনীয় পরামর্শ পেলে এটি তিস্তার চরাঞ্চলের কৃষকদের আয়ের অন্যতম উৎস হতে পারে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা- সৈয়দ রেজা-ই মাহমুদ বলেন, "আমি নিজেই স্কোয়াশ চাষী গোলাম মোস্তফার ক্ষেত দেখতে গিয়েছিলাম। এটি এ উপজেলার প্রেক্ষাপটে সম্পূর্ণ নতুন ফসল। উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশে এই ফসল জুকিনি নামেও পরিচিত। মন জুড়ানো মাঠ ভরা ফসল সত্যিই খুব সুন্দর। কৃষকের স্কোয়াশ চাষের উদ্যোগে খুশি হয়ে ব্যক্তিগতভাবে লিউর ও ট্রাপ প্রদান করেছি, যা পোকা-মাকড় দমনে কার্যকরী। এই ফসলের চাষ যেমন লাভজনক তেমনি কষ্টসাধ্য। অন্যান্য ফসলের চেয়ে এতে কয়েকগুণ বেশী লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।